পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে ভারতের কথিত দাদাগিরির অবসান চান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হয় পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা সেটা দেখতে পাই না। এক্ষেত্রে একতরফা ভালোবাসা দেখতে পাই, যেখানে ভারত শুধু নিতে চায়, দিতে চায় না।বস্তুতপক্ষে তারা চায় একতরফা সম্পর্ক। একদিকে ভারত, সীমান্তে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ার সাথে ঝুলছে ফেলানীর লাশ। এভাবে বন্ধুত্ব মানে কাঁটাতারের কাঁটার আঘাত বুকে নিয়ে, ফেলানীদের লাশ ডিঙিয়ে, সীমান্ত হত্যার শিকার অগনিত বাংলাদেশির রক্ত পেরিয়ে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) বিকেলে মহাখালীর ডিওএইচএসে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির। পরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসে এদেশের রাজনীতিতে যে হস্তক্ষেপ করেছে আগামীতে তা আর চায় না কল্যাণ পার্টি। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির লিখিত বই পড়লেও প্রমাণ হয় বাংলাদেশ নিয়ে ভারত অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করছে। স্বাধীন দেশের মানুষ এই হস্তক্ষেপ মানবে না।
জেনারেল ইব্রাহীম বলেন, ভারত এদেশের পুতুল সরকারের সাথে বন্ধুত্বের মাধ্যমে, সেই অমানবিক বন্ধুত্ব মেনে নিতে বাংলাদেশের মানুষকে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। বিনিময়ে ভারত সরকার এদেশে রাতের ভোটের অবৈধ সরকারকে ক্রমান্বয়ে অধিকতর শক্তিশালী হতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এভাবে কোনো সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব হয় না। যেটা হয়, সেটা কথিত 'দাদাগিরি'। আমরা সে দাদাগিরির আশু অবসান চাই।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্বীকার করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, আমরা তাদের সাথে সুসম্পর্ক-বন্ধুত্ব করতে চাই। তবে ভারতকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব হতে হবে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে। অথচ ভারত ক্রমাগতভাবে বলে আসছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে, যার ফলশ্রæতিতে বাংলাদেশের জন্ম। যেটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অবমাননকার। তিনি এই ধরনের অনুভূতি ও বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্যও দাবি করেন রণাঙ্গণের এই মুক্তিযোদ্ধা।
২০০৯ সাল থেকে সকল চুক্তি জনসম্মক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বলা হচ্ছে আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক সুসংহত করার জন্য তারা বেশ কিছু প্রকল্প চু্ক্িতর বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- দেশের সরকারের বৈধতা নিয়েই যেখানে প্রশ্ন, সেখানে সরকার ভারতের সাথে আর কোনো বিতর্কিত চুক্তি করুক এটা এ দেশের আপামর জনসাধারণ চায় না। অতএব অবৈধ সরকারকে অবশ্যই এ ধরনের চুক্তি করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সাথে যে সকল চুক্তি হয়েছে, সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে ভারত কখনই আন্তরিক ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটা অজুহাত মাত্র। আমরা ভারত সরকারকে চিনি।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বলেন, বিগত এক দশকে ভারত বহুবার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে যে, সীমান্তের হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। অথচ সীমান্তে আজও বাংলাদেশি হত্যা অব্যাহত আছে। অনতিবিলম্বে নিঃশর্তভাবে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হতে হবে।
পাশাপাশি কানেকটিভিটি বা ট্রানজিট একযোগে ও আঞ্চলিকভাবে, যেন এই অঞ্চলের সব দেশই অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয় এবং এ ধরনের চুক্তি অবশ্যই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সম্পাদিত করার দাবি জানান।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভারতের নিরবতার সমালোচনা করে প্রবীন এই রাজনীতিবিদ বলেন, ভারত বিগত তিন বছরের অধিক সময়ে কখনই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ফোরামে কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি, এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটদান থেকেও বিরত ছিল। ভবিষ্যতেও ভারত এ ব্যাপারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা আহŸান রাখছি, ভারত যেন অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের উপরে কার্যকর প্রভাব বিস্তার করে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে যেন বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষে সুস্পষ্ট এবং দৃশ্যমান অবস্থান নেয়।
তিনি আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে বস্তুনিষ্ঠভাবে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার আহŸান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বিষয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অতীতে পিসিজেএসএস নেতা সন্তু লারমা এবং তার স্বঘোষিত সশস্ত্র দল শান্তিবাহিনীকে দুই দশকব্যাপী প্রকাশ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারত অস্থিতিশীল করে রেখেছিল। আবার আমরা সেই একই অশুভ পায়তারা দেখতে পাচ্ছি। প্রচার মাধ্যমে খবর এসেছে, সন্তু লারমা এখন চিকিৎসার নামে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে তিনি ভারতের সহায়তা চান। অনেকে মনে করছেন, তাকে ব্যবহার করে ভারত আবার পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার প্রয়াসে লিপ্ত হতে পারে।
প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, এই সরকারের অধীনে কল্যাণ পার্টি সংসদ নির্বাচনে যাবে না। একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নতুন করে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে কল্যাণ পার্টি নির্বাচন করতে চায়। এজন্য এখন থেকেই সরকারকে তা করতে বাধ্য করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, এনডিপির সভাপতি ক্বারী এম এ তাহের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) সেক্রেটারী জেনারেল শেখ জুলফিককার বুলবুল চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভুঁইয়া পিন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) কামাল আহমেদ, কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, ড. বদরুল আলম সিদ্দিকী, ভাইস-চেয়ারম্যান মাহমুদ খান, কমোডর আরিফ মাহমুদ, গ্রæপ ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ মিজহাজ উদ্দিন, লে.কমান্ডার (অব.) সোহেল রফিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।