Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপ পাল্টাবে দক্ষিণের

দেশের দীর্ঘতম ভোলা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম

দেশে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যয় কম হলেও নতুন এই প্রকল্পটি পদ্মা সেতু থেকেও বড়। দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করতে এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া ও কালাবাদোর নদীর ওপর দিয়ে বরিশাল-ভোলা সড়কে দেশের দীর্ঘতম ভোলা সেতু নির্মাণ করা হবে। এটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার, যা পদ্মাসেতুর চেয়েও প্রায় ৪ কিলোমিটার বেশি দীর্ঘ।
সরকার মনে করছে, ভোলা সেতু নির্মাণ হলে দেশের অর্থনীতিতে আসবে নতুন গতি। দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে আরও অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেতুর অবকাঠামো তৈরি হলে এ অঞ্চলের মাথাপিছু আয় বাড়বে আর নিশ্চিত হবে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগও। প্রস্তাবিত ভোলা সেতুর প্রভাব পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আরও জোরদার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেতু বাস্তবায়নের পরে ভোলা জেলা সরাসরি পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। ভোলা সেতুটি নির্মাণ হলে পদ্মা সেতুর সুবিধা আরও বাড়বে বলে আশা করছে সেতু বিভাগ।
সেতু বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণে নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ইতিমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়। এখন অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে। দাতা সংস্থার সবুজ সঙ্কেত মিললেই শুরু হবে নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। তবে চীনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়ার আশা করছে সরকার।
সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ দল। তাদের প্রতিবেদন বলছে, এ সেতু নির্মাণে প্রযুক্তিগত কোনো বাধা নেই। সেতুটি এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে, প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞ দলের। যত দ্রুত সম্ভব সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে এখন সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। এমন প্রক্ষাপটে সরকার আশা করছে, ভোলা সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করবে চীনের নেতৃত্বে থাকা এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক। এ নিয়ে ব্যাংকটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার এবং মিলেছে ইতিবাচক সাড়াও।
সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস জানান, ভোলা সেতু নির্মাণে নকশা ইতোমধ্যে চ‚ড়ান্ত হয়েছে। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু প্রকল্পের আওতায় দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে। মাঝে চরের ওপর চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট তৈরি করা হবে। সেতু নির্মাণ হলে ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সেতুটি দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি।
সেতুর সম্ভাব্য জরিপ সূত্রে জানা যায়, ভোলা থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নৌকা ও লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। যা এই জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, সেতু হলে অনেকেই প্রতিদিন বরিশাল থেকে যাতায়াত করে কাজ করতে পারবেন। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে আসবে বিরাট পরিবর্তন। যা অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হলে মাঝে-মাঝেই তারা বরিশাল থেকে ভোলায় ওষুধ পাঠাতে সমস্যায় পড়েন। তাই চলমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই সেতু মাইলফলক হিসেবে ভ‚মিকা রাখবে। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জরিপ ও আলোচনার ভিত্তিতে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এবং বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট বরাবর সেতুটি বানানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ কিলোমিটার সেতুর মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার শ্রীপুর চরের ওপর দিয়ে যাবে। প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতুতে রেললাইন না থাকায় এর ব্যয় পদ্মা সেতুর থেকে অনেক কম হবে। তাছাড়া নদী শাসনের জন্য তেঁতুলিয়া নদী পদ্মার মতো কঠিন হবে না।
এদিকে গত বছরের ৫ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, খুব শিগগিরই বরিশাল ভোলা সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। তিনি রাজধানীর সেতু ভবনে সেতু বিভাগ এবং বিবিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, সেতুর ডিপিপির (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফর্মা) কাজ চলছে এবং অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। চীন প্রকল্পটিতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এরআগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ একটি সভায় বলেছিলেন, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার আরো বাড়বে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সেতু নির্মাণ হলে জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। এতে করে ইপিজেড ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও থাকবে। তিনি আরো বলেন, ভোলার ভ‚-গর্ভস্থ এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়ন করা সম্ভবপর হবে। এখানে ইপিজেড নির্মাণের জন্য চাইনিজ একটি কোম্পানি ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার লক্ষ্য নিয়ে ৪শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করছে। ওই অনুষ্ঠানে সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ২০২১ সালে ভোলা-বরিশাল সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। ফলে ভোলা থেকে ঢাকা যেতে দেড়শ’ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে।

 



 

Show all comments
  • মারিয়া ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
    আমরা সেই প্রতিক্ষায় বসে আছি
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ দুলাল মিয়া ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১২ এএম says : 0
    মেরা সেতু দিয়ে যামু ও আমার আল্লারে কয় কি মুই হে ভালাতক বাচমু।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir Ahmed ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • আলী মোস্তাকিন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের সরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Maahi Ahmed ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
    Unnoyoner Mohasoroke odommo Bangladesh Joy Bangla joy Bongobondhu
    Total Reply(0) Reply
  • Monika Hira ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২০ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশের উন্নয়ন এভাবে এগিয়ে চলুক এই প্রত‍্যাশা নিরন্তর।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১১ পিএম says : 0
    We need to build our Bridge, if our country rule by Qur'an then we would have build every things according to our need. After liberation not a single government don't know how to rule a country. These government made us legless as such we have to depends on other country, as a muslim it is a great shame. We look in past, Muslim used to build according to their needs not only that they are best in Science and Technology and also Super Power.
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল করিম,গৌরনদী. বরিশাল। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৫২ এএম says : 0
    আগে বলতাম সপনের পদমা সেতু আর সেই সপনের সেতু সপনকে অতিক্রম করে শতভাগ বাস্তব রূপ ধারন করতে ঢলছে। তেমনিভাবে সপনের ভোলাবরিশাল সপননো থেকে ইনশাআল্লাহ বাস্তব রূপ ধারন করবে।আমাদের প্রধান মনএীকে আললাহ দীর্ঘদিন বেচে রাখুক এই দোয়া করছি আমীন।জ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোলা-সেতু

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ