Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎপাদন বাড়াতে চাষ হচ্ছে হাইব্রিড জাত

৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম

দফায় দফায় বন্যাসহ নানা কারণে গত বছর আমনের উৎপাদন ভালো হয়নি। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ টন কম হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে ধান চালের দাম খুব বেশি। মজুদ কম থাকায় বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিষয়টি তাদের জন্য খুবই অস্বস্তির। তাই সরকার ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আগামী মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বোরো ধানের আবাদ চলছে দেশজুড়ে। উৎপাদন বাড়াতে সরকার এবার হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় এবার গত মৌসুমের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইব্রিড জাতের চাষ বাড়াতে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো ৬১ জেলার ৬১ উপজেলায় ৫০ একর করে হাইব্রিড জাতের ধান চাষের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমিতে। এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টন। গত বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন। এবার হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ৪ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, এবার ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ধানের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে অন্তত ৫ লাখ টন। এজন্য বোরোতে বিশেষ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে। আমরা হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বীজ ফ্রি দিয়েছি। ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন হলে অন্তত ২ লাখ টন ধানের উৎপাদন বেশি হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরে বন্যাসহ নানা কারণে আমনের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় ধানের দাম খুব বেশি। যা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে রয়েছি। সেজন্য, আমাদের চলতি মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বোরোর চাষযোগ্য কোনো জমি যেন খালি না থাকে, সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তাদের সার-বীজ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি গুদামে বর্তমানে মজুদের পরিমাণ ৫ লাখ ৩৬ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৫০ হাজার টন। গত জুলাই-আগস্টের বন্যার পর থেকেই দেশে চালের দাম বাড়তে থাকে। কেজিপ্রতি দাম ৪০ থেকে বেড়ে ৫০ টাকার ঘরে পৌঁছায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে চাল আমদানি করছে এবং শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতকে সুযোগ দিয়েছে। আমদানির খবরে প্রথমে সব ধরনের চালের দাম এক-দুই টাকা করে কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমদানি ও সরবরাহের ধীরগতিতে চলতি সপ্তাহে থেমে গেছে সেই ধারা। উল্টো আমদানি করা কয়েক প্রকারের মোটা চালের দাম বাড়তি থাকায় বেড়েছে দেশীয় এ ধরনের চালের দাম। চলতি সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে দুই-তিন টাকা। মাঝারি ও সরু চালের দামও প্রত্যাশিত মাত্রায় না কমে, বরং আরও বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকার চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন বাড়িয়ে ধান চালের বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধিসহ আরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী গত ৬ আগস্ট যখন চাল আমদানির অনুমতি দেন, তখন বিশ্ববাজারে চালের দাম ছিল কম। দেশেও মোটা চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে ছিল। যখন আমন ধান কাটা শেষ হয়নি, তখনই আমদানি শুরু করলে দেশে পর্যায়ক্রমে চাল আসত। ফলে দাম হঠাৎ করে এভাবে বাড়ত না। এখন বাংলাদেশে একসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই আমদানি শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে দ্রুত দাম বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দেওয়ার সময় থেকে এখন বিশ্ববাজারে চালের দাম টনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ ডলার বেড়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক কৃষিসচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এএমএম শওকত আলী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের মজুদ গড়ে তোলা ও আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে শুল্ক আরোপ প্রতিটি বিষয়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যখন চাল আমদানি করা উচিত ছিল, তারা তখন বসেছিল। আর বিশ্ববাজারে যখন দাম বাড়ছে, তখনই আমদানি শুরু করায় দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে চাল আমদানির লক্ষ্যও পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই বোরো উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে ধান চালের বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইব্রিড-জাত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ