পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমায় নহে গো, ভালোবাসো শুধু/ ভালোবাসো মোর গান/ বনের পাখিরে কে চিনে রাখে/ গান হলে অবসান/ চাঁদেরে কে চায়, জোছনা সবাই যাচে/ গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলিমাঝে...’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। সত্যিই কি আমরা কাজী নজরুল ইসলামকে ভুলে গেছি? বিদ্রোহী কবির কবিতা-গান-গল্পে আলোকিত হয়ে কবিকে ধূলায় ফেলে দিয়েছি? বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ কবিকে শ্রদ্ধা-সম্মান করছি, নাকি অবহেলা করছি? কবি নজরুলকে যদি মনেই রাখি তাহলে তাকে নিয়ে এতো অবহেলা কেন, কেনই বা এতো অসম্মান? নজরুল চর্চার নামে আমরা এসব কী করছি? আগামী প্রজন্মের জন্য কী দৃষ্টান্ত রাখছি? বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ-শ্রদ্ধা করতে না পারি; কিন্তু তাকে অপমান করার অধিকার কে আমাদের দিয়েছে?
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কবি নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম রচিত ‘কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন’ নামের একটি গবেষণাধর্মী বই আমাদের হাতে এসেছে। ৭৬৮ পৃষ্ঠা তথা ৪৮ ফর্মার বইটির পরতে পরতে বানান ভুল। বইটি পড়ে দেখা গেছে, প্রতি পৃষ্ঠায় ৫টি থেকে ৯০টি বানান ভুল রয়েছে। অথচ বইটির পাঠক চাহিদার কারণে চতুর্থ মুদ্রণ করা হয়েছে।
ইনকিলাবের সাংবাদিক একলাছ হক গতকাল কবি নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গবেষণাধর্মী দুইটি বই জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম রচিত ‘কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন’, ড. গুলশান আরা রচিত ‘নজরুল ভাবনা’ এবং ‘জাতীয় নজরুল সম্মেলন দিনাজপুর সেপ্টেম্বর ২০১৯’ নামের ম্যাগাজিন পত্রিকা হাতে দিয়ে পড়ে দেখার অনুরোধ করলেন। তিনি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম রচিত গবেষণাধর্মী বইটির কয়েকটি পৃষ্ঠায় ‘ভুল বানান’ দাগ দিয়ে দেখালেন। হায় আল্লাহ! এটা কী করে সম্ভব? দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের বিশালাকৃতির গবেষণাধর্মী বইয়ে এতো বানান ভুল?
বইটি পড়ে দেখা গেল, প্রতিটি পাতায় ৫টি থেকে ৯০টি, কোনো কোনো পাতায় আরো বেশি বানান ভুল মুদ্রিত হয়েছে। এমনকি দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় প্রকাশিত ম্যাগাজিনে নজরুল ইনস্টিটিউট নামের বানানও ভুল মুদ্রিত হয়েছে। ড. গুলশান আরা রচিত ‘নজরুল ভাবনা’ বইটিতে আনুপাতিক হারে ভুল বানান কম। তবে প্রচুর বানান ভুলে ভরা। ২৫৬ পৃষ্ঠা ১৬ ফর্মার বইটির প্রথম মুদ্রণ হয় ফেব্রুয়ারি ২০১৯। প্রকাশক: কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কবি ভবন, বাড়ি ৩৩০-বি, রোড ১৫ (পুরাতন ২৮), ভাষা সৈনিক বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী সড়ক, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা-১২০৯। ২৯টি প্রবন্ধ নিবন্ধের এ বইটিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন লেখা ও কর্মময় চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম রচিত ‘কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন’ বইটির প্রথম মুদ্রণ হয় ফেব্রুয়ারি-২০১২। দ্বিতীয় মুদ্রণ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। তৃতীয় মুদ্রণ জুন ২০১৮। চতুর্থ মুদ্রণ জানুয়ারি ২০২০। বইটির প্রকাশনার ঠিকানায় একাধিক বানান ভুল, এমনকি প্রচ্ছদ শিল্পীর নামের বানানও ভুল মুদ্রিত হয়েছে। মুখবন্ধ প্রথম মুদ্রণ ‘প্রসঙ্গ কথা’ দ্বিতীয় মুদ্রণের সময়ের ‘প্রসঙ্গ কথা’ তৃতীয় ও চতুর্থ মুদ্রণের ‘প্রসঙ্গ কথা’ লেখাগুলোতে প্রচুর ভুল বানান ছাপা হয়েছে। মুখবন্ধ যারা লিখেছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা, ইকরাম আহমেদ, রশীদ হায়দার তাদের পদ-পদবি’র বানানও ভুল ছাপা হয়েছে। এমনকি লেখক রফিকুল ইসলাম যে বইটি লেখার কারণ তুলে ধরেছেন সেই ‘নিবেদন’ বানানও ভুল মুদ্রিত। বইটি যে তিনজনের নামে উৎসর্গ করেছেন তাদের সবার নামের বানান ভুল ছাপা হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন বইটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ ‘কাজী নজরুল ইসলাম : জীবনকথা’, দ্বিতীয় ভাগ ‘কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা’ ও তৃতীয় ভাগে ‘কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও সঙ্গীত’ শিরোনামে গবেষণা করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ১৮টি প্রবন্ধ নিবন্ধ, দ্বিতীয় ভাগে ১৩টি এবং তৃতীয় ভাগে ৫টি প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। অতঃপর বইটি গবেষণা ও রচনায় যাদের লেখা বইয়ের তথ্য-উপাত্তের সহায়তা নেয়া হয়েছে সেই লেখক-লেখিকাদের নাম ও বেশির ভাগ বইয়ের নাম, তালিকা বানান ভুল। প্রকাশকাল ‘নজরুল-জীবনীর উপাদান সম্বলিত গ্রন্থপঞ্জী’ শিরোনামে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানেও অধিকাংশ লেখকদের নামের বানান ভুল ও বইয়ের নামের বানান ভুলভাবে ছাপা হয়েছে।
ইনকিলাব পাঠকদের বোঝার জন্য বানান ভুল সম্পর্কিত বইটির ৪টি পাতার চিত্র দেয়া হলো। পৃষ্ঠা ৯-এ দেখা যায় ৫৮টি বানান ভুল, ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বানান ভুলের সংখ্যা ৮১টি। ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বানান ভুল ৮৩টি এবং ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বানান ভুলের সংখ্যা ৮৯টি। প্রতিটি পৃষ্ঠায় বানানের ভুলের চিত্র প্রায় এমনই।
এ প্রসঙ্গে ‘কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন’ বইয়ের লেখক জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বইটি আমার লেখা। তবে বইটি ছাপা বা নতুন সংস্করণ বের হলে আমাকে দেখানো বা জানানো হয়নি। তারা আমার লেখা বই কীভাবে ছাপছেন সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনাকে (প্রতিবেদক) ধন্যবাদ, আপনি এ বিষয়ে আমাকে অবগত করলেন। আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি।
জানতে চাইলে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সচিব মো. আব্দুর রহিম বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম জীবন ও সৃজন বইটি আমি পড়িনি, তবে উল্টেপাল্টে দেখেছি। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে বই ছাপানোর বিষয়াদি দেখভালের কমিটি থাকে। বইয়ের সম্পাদনা পরিষদ থাকে। তারাই বই প্রকাশের আগে দেখভাল করেন, বানান দেখেন। তাছাড়া বইয়ের লেখক স্যার (জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম) বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি নিজেও বানান নিয়ে খুবই সচেতন। ফলে বইয়ে এতো বানান ভুল হতে পারে না। তবে বইটি আমাদের ছাপানো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করছি। কারণ বাংলাবাজারের অনেকেই কবি নজরুল ইনস্টিটিউট নাম দিয়ে বই ছাপতে পারেন। কোনো বইয়ে চার পাঁচটা বানান ভুল থাকতে পারে। অসাবধানতাবশত তারও বেশি বানান ভুল ছাপা হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি পাতায় ৫০ থেকে ৬০টি বানান ভুল এটা কল্পনা করাও যায় না। আসলে প্রকৃত ঘটনা কী আমি এখনই বলতে পারছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।