Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাইক্রোবাস কার ও বাইক ৮৩৬ টাকা

পদ্মা সেতুতে টোলের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে সেতু বিভাগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪১ এএম

২০২২ সালের জুনে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এজন্য সেতুটির টোলের প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। এক্ষেত্রে বর্তমানে পদ্মা নদী ফেরিতে (শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি) পারাপার হতে যে টাকা লাগে, সেতুতে তার দেড়গুণ হারে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিগগিরই এ প্রস্তাব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় উঠবে। এর পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়কেও টোল হার জানানো হবে। ২০১০ সালের পদ্মা বহুমুখী সেতুর ডিটেইলড ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী সেতুটিতে যান চলাচলের সংখ্যা ধরা হয়েছে। এতে ২০২২ সালে সেতুটিতে দৈনিক গড়ে সাত হাজার ৮৩৫টি যানবাহন চলাচলের কথা। এর মধ্যে ট্রাক চলবে তিন হাজার ৩৮৯টি, বাস দুই হাজার ৮১২টি ও হালকা যানবাহন (বাইক, গাড়ি, জিপ, মাইক্রোবাস) এক হাজার ৬৩৩টি। আর ৩৫তম বছরে অর্থাৎ ২০৫৬ সালে সেতুটিতে দৈনিক যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৭১ হাজার ২৭২টি। এর মধ্যে ট্রাক চলবে ৩০ হাজার ৯৫৬টি, বাস ১৩ হাজার ৮৮৬টি ও হালকা যান ২৬ হাজার ৪২৬টি।

জানা গেছে, পদ্মা পারাপারে ফেরিতে বাইক এবং গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে পৃথক হারে চার্জ আদায় করা হয়। তবে পদ্মা সেতুতে এ চার ধরনের মোটরযানে একই টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চার ধরনের বাহনের চার্জকে গড় করে তার দেড়গুণ করা হয়েছে টোল। এতে বাইকে টোল হার অনেক বেড়ে গেছে। তবে গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে টোল হার অন্যান্য বাহনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।

সেতু বিভাগের প্রস্তাবমতে, বর্তমানে ফেরিতে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে বাইক পারাপারে চার্জ ৭০ টাকা। আর ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৭২০ টাকা হারে চার্জ আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে গড় চার্জ দাঁড়ায় ৫৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর দেড়গুণ টোল প্রস্তাব করায় এ চার ধরনের বাহনে টোল দাঁড়িয়েছে ৮৩৬ টাকা ২৫ পয়সা। যদিও বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতুতে বাইকে ৪০ টাকা এবং গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৫০০ টাকা টোল আদায় করা হয়।

এদিকে বর্তমানে শিমুলিয়া- কাওড়াকান্দি রুটে ফেরিতে একটি বড় বাস (৩০ আসনের বেশি) পদ্মা নদী পার হতে লাগে এক হাজার ৫৮০ টাকা ও ছোট বাসে (২৯ আসন বা তার কম) এক হাজার ৩৫০ টাকা। এতে পদ্মা সেতুতে বড় বাসে টোল দিতে হবে দুই হাজার ৩৭০ টাকা ও ছোট বাসে দুই হাজার ২৫ টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার জন্য বড় বাসের টোল ৯০০ টাকা ও ছোট বাসে ৬৫০ টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুতে চলাচলের জন্য ছোট ট্রাকের (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬২০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (পাঁচ থেকে আট টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, বড় ট্রাকের (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৭৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ফেরির চার্জের দেড়গুণ প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবমতে, প্রথম ১৫ বছর এ হারে টোল আদায় করা হবে পদ্মা সেতুতে। পরের ১৫ বছরের জন্য তা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে ১৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে টোল হবে ৯২০ টাকা। এছাড়া ছোট বাসে দুই হাজার ২২৮ টাকা ও বড় বাসে দুই হাজার ৬০৭ টাকা। আর ছোট ট্রাকের টোল হবে এক হাজার ৭৮২ টাকা, মাঝারি ট্রাকের দুই হাজার ৩১০ টাকা ও বড় ট্রাকের তিন হাজার ৫২ টাকা।

এর পর টোলের হার আরও ১০ শতাংশ বাড়বে। এতে পরের পাঁচ বছর অর্থাৎ ৩১-৩৫ বছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে টোল হবে এক হাজার চার টাকা। এছাড়া ছোট বাসে দুই হাজার ৪৩০ টাকা ও বড় বাসে দুই হাজার ৮৪৪ টাকা। আর ছোট ট্রাকের টোল হবে এক হাজার ৯৪৪ টাকা, মাঝারি ট্রাকের দুই হাজার ৫২০ টাকা ও বড় ট্রাকের তিন হাজার ৩৩০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর টোল প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ফেরির চার্জের দেড়গুণ টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এ টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে টোল হার খুব বেশি ধরা হয়নি। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া ঋণ ৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তাই ৩৫ বছরের সম্ভাব্য টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা জেডিসিএফ বাবদ অনুদান পাওয়া গেছে। বাকি ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রতি বছর চার কিস্তি হিসেবে এক্ষেত্রে ১৪০টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে বছরে টোল আয়ের সাড়ে সাত শতাংশ। এর বাইরে প্রতি বছর পর পর বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করতে হবে। এতে সেতুটি চালুর ১০ম বছরে খরচ হবে ৫০০ কোটি টাকা, ২০তম বছরে এক হাজার কোটি টাকা, ৩০তম বছরে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ৪০তম বছরে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর সেতুটিতে টোলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এছাড়া নিট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে সেতু বিভাগকে। আর সেতুর অবচয় নির্ধারণ করা হয়েছে বছরে দুই শতাংশ হারে।



 

Show all comments
  • সঞ্জয় ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে একটু বেশি হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ