পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন তিনি (জিয়া)। তিনি বলেন, শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে জিয়া নাকি (জিয়াউর রহমান) গণতন্ত্র দিয়েছেন। গণতন্ত্র নয়, জিয়া দিয়েছিলেন কারফিউ গণতন্ত্র। তখন (জিয়াউর রহমানের আমলে) স্বাধীনভাবে চলার কোনো সুযোগ ছিল না, কথা বলারও কোনো সুযোগ ছিল না।
গতকাল বুধবার বিকালে শোকের মাসের শেষ দিন রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হলো।
যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারাই পঁচাত্তরের হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। একাত্তরে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গড়তে ছাত্রলীগকে নির্দেশনাও দেন শেখ হাসিনা। ইতিহাস বিকৃতি থেকে সামাজিক যে অবক্ষয় হয়েছে তার ফলেই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উত্থান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ এবং ইতিহাস বিকৃতির উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই এদেশের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। ’৭৫-এর পর একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতেই দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নাম ও তার ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। একটি প্রজন্ম যদি ক্রমাগতভাবে বিকৃত ইতিহাস শুনতে থাকে, তবে তাদের চরিত্রটাও বিকৃত হয়ে যায়। আজকের যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ তা সেই বিকৃত ইতিহাস থেকেই সৃষ্টি। দেশ ও জাতির জন্য যে কোনো ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যে কোনো মহৎ অর্জনে মহান আত্মত্যাগের প্রয়োজন। তাই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের কল্যাণ ও উন্নত জীবন দিতে আমিও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল, বলেছিল কে বিচার করবে। তবে আমরা বিচার করেছি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল এবং তখনকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সাল থেকে দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। অনেকে বলে জিয়া নাকি (জিয়াউর রহমান) গণতন্ত্র দিয়েছেন। গণতন্ত্র নয়, জিয়া দিয়েছিলেন কারফিউ গণতন্ত্র। তখন (জিয়াউর রহমানের আমলে) স্বাধীনভাবে চলার কোনো সুযোগ ছিল না, কথা বলারও কোনো সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আমলে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিল, ২২ হাজার মামলা হয়েছিল; আরও মামলা হচ্ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলেন। গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হলো। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হলো। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি (জিয়া)।
তিনি বলেন, বিদেশিরা তদন্ত করতে চাইলেও তাদেরকে যে সুযোগ দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার কয়েক বছর পর যুক্তরাজ্যে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবিতে জনমত গঠনের চেষ্টা করলাম। সে দেশের বেশ কয়েকজন এমপিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা সবাই মিলে স্যার টমাস উইলিয়ামসকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাকে ভিসা দেয়নি। কেন তাকে (স্যার টমাস উইলিয়াম) বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়া হয়নি? জিয়া চায়নি এই ঘটনার তদন্ত হোক। কারণ তদন্ত হলে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ হয়ে যেত। জিয়া এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শেখ হাসিনা বলেন, সেসময় বিবিসিতে ইন্টারভিউতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল খুনিরা। বলেছিল, ‘কে আমাদের বিচার করবে, কারণ বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছি।’ তবে আমরা বিচার করেছি, আমরাই করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে ফিরিয়ে আনব বলেই বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করি। বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি, আমরাই করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যদি সংকল্প দৃঢ় থাকে যেকোনো অর্জন সম্ভব। বঙ্গবন্ধু বলতেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগ দরকার। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। বাঙালির জন্য যেকোনো ত্যাগে আমি সব সময় প্রস্তুত। এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। তবে কখনোই বিজয়ের ইতিহাস ভুললে চলবে না। এতে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন। সেই আদর্শ নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি পাকিস্তানে গিয়ে বলেছিলেন, আমি তো দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে এসেছি। আপনারা আমার কী বিচার করবেন করেন। তখন তিনি বলতেন, জয় বাংলাদেশ।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের (বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবার কথা তো অনেক লেখা হয়, মায়ের (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) কথা তো লেখা হয় না। তবে আমার মায়ের অবদান কিন্তু কম নয়। তিনি বাবার পাশে থেকে অনেক কাজ করে গেছেন। সেসবও তুলে আনা দরকার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তখন নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন আমার মা। নিজের জন্য জীবনে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে কিছু চাননি। কখনও আমরা এক-দু’বছর বাবার স্নেহ পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি ছাত্রলীগের সবাইকে পড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার মতো মানুষ হতে হবে।’ শিগগির বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খ- শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে এই আত্মজীবনী পড়তে হবে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে তার ডায়েরি জোগাড় করতে হয়েছে। তোমরা এটা পড়বে। এতে অনেক অজানা অধ্যায় থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে ছাত্রলীগকে পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন, আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগে ছাত্রলীগই হলো অগ্রগামী নাম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এবং পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এই ছাত্রলীগ। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ছাত্রলীগের যে বিশাল ভূমিকা ও ইতিহাস রয়েছে তা ধরে রাখতে হবে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাধীনতার ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বিভিন্ন অবদান, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনচেতা মনোভাব ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। সভা পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বিপুল পরিমাণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রকাশনী ‘মাতৃভূমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।