পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাছের আঁশে জীবন বাঁচে। এরকম ধারণার সাথে আগ থেকে অনেকেই পরিচিত না হলেও এখন বাস্তবে তাই হচ্ছে। বাতিল জিনিষ মানেই যে ফেলনা নয়, এটা এখন প্রমাণিত। মাছের আঁশে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ। এছাড়াও কোলাজেন নামক একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের দোকানে দোকানে। তাও তৈরি হয় মাছের আঁশ দিয়ে।
খুলনার জুলফিকার আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জীবনে কখনও ভাবেননি মাছের আঁশের ব্যবসা করবেন। আর এখন পুরো ধ্যানজ্ঞানই তাঁর এই ফেলনা জিনিসটি। রফতানি তো করছেনই, রীতিমতো দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করার চিন্তা করছেন তিনি। প্রায় ১৪ বছর আগে জুলফিকারের সাথে বিদেশি এক আঁশ ক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয় খুলনায়। তার আইডিয়ায় জন্ম হয় প্রথম মাছের আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। সেই যে হাঁটা শুরু করলাম, আর পেছনে তাকাতে হয়নি জুলফিকার নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তার প্রতিষ্ঠানটির নাম মেক্সিমকো। জুলফিকার বলেন, মা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ মেক্সিমকো।
জুলফিকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাছের আঁশের বড় রফতানির গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু জাপানে সরাসরি পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রফতানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রফতানি করার অনুমতি মেলে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে বছরে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন মাছের আঁশ রফতানি করা যায় বলে জানান জুলফিকার আলম।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট তিনটি কারখানা রয়েছে। রফতানি আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। জুলফিকার আলম বলেন, ‘আমিই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রফতানি করি।’ তিনি রফতানি করেন বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের পণ্য। বাকিটা অন্য দুই কারখানা করে। জুলফিকার বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের এর সঙ্গে যৌথভাবে কিছু করতে চায় জাপানের মূল কোম্পানি। কয়েকবার খুলনা এসেও ঘুরেও গেছেন ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে একটি কারখানা করার চুক্তি করবে বলে আগামী মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তাদের আবার আসার কথা রয়েছে। এলে আর্থিক চুক্তি হবে মেক্সিমকোর সঙ্গে।
জুলফিকার বলেন, গোটা বিশ্বের এই পণ্যে জাপানি কোম্পানিটিই নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেন, একবারেই ফেলনা একটা জিনিস থেকে আমরা রফতানি আয় করছি। জুলফিকার বলেন, শুরুর দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি মাছের আঁশগুলো যাতে ফেলে না দেওয়া হয়। বাজারে বাজারে নিজে ঘুরে বেড়াতেন। বলতেন যত্ম করে এগুলো জমিয়ে রাখতে। বিনিময়ে থোক হিসেবে মাসিক একটা টাকা দিতেন। এখন অবশ্য কেজি দরে কিনতে হয়। জুলফিকার আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এমন কাজের দক্ষতা আছে, এমন মানুষ বেছে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এনেছি।
কেবলে খুলনায়ই নয়, এখন দেশজুড়েই তার একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুলনা ছাড়াও, ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাছের আঁশ কেনাবেচার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অন্তত ২০০ লোক সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত। বাজারে যারা মাছ কাটেন তারাই মাছের আঁশ সংগ্রহের পর তা ভালোভাবে পানি ও কেমিক্যাল দিয়ে ধুয়ে রোদে অন্তত দুই দিন শুকিয়ে তা মচমচে করে বাজারজাতের উপযোগী করে তুলছেন। এরপর সংরক্ষণ করে রাখেন। আমাদের প্রতিনিধিরা সেগুলো নিয়ে আসেন। এরপর আমাদের গুদামে রাখা হয়। আঁশের সঙ্গে ফাঁকে কিছু অন্য জিনিস ঢুকে যায়। যেমন পাখনা, লেজের অংশ, কানের অংশ, গাছের পাতা ইত্যাদি। এগুলো বাছাই করে ফেলে দিতে হয়। পরে প্যাকেট করা হয় একেকটি ২৫ কেজি করে। প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা।
খুলনায় মাছের আঁশের কদর এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই মণ মাছের আঁশ কেনাবেচা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনা থেকে সরাসরি আঁশ রফতানির কোনো সুযোগ নেই। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে ভালো দাম পাওয়া যেতো। তাই সম্ভাবনাময় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিকল্প পেশার মানুষ। আর আঁশের ব্যবসার প্রসারের জন্য সবার আগে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এখন অনেকেই সরাসরি মাছ বিক্রি না করলেও বাজারে মাছ কেটে ও মাছের আঁশ কেনাবেচা করে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মাছ বিক্রির পাশাপাশি এটি বিকল্প পেশা হিসেবেও এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে খুলনায়। মাছের সঙ্গে আঁশ বিক্রি করে খুলেছে অতিরিক্ত আয়ের পথ। এই ফেলনা জিনিসটিও তাই সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদিকে বিভাগীয় শহর খুলনাতে মাছের আঁশের এ ব্যবসা দিন দিন এর ব্যাপক প্রসার ঘটছে বলে মনে করছে মৎস্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলা মৎস্য বিভাগের সহাকারী পরিচালক রাজু কুমার বিশ্বাস বলেন, খুলনার বাজারে এখন মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্যবসাটি আরো লাভজনক হলে সরকার এই খাতে নজর দেবে। তখন মাছের আঁশ রফতানি উপযোগী করতে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের সার্বিক সহযোগিতা সরকার এগিয়ে আসবে। যেকোনো পণ্য রফতানিযোগ্য করতে আগে প্রশিক্ষণ দরকার। সরকার সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবে। কারণ যেকোনো পণ্যের বিক্রির আগে তার গুণগতমাণ অটুট রাখাও জরুরি। এতে ব্যবসার উত্তরোত্তর প্রসার ঘটে আর ব্যবসায়ীরাও অধিক মুনাফা পান। তবে সরকার তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।