Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রওশন ‘ক্যারিশমা’য় কেরি সাক্ষাৎ

প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের মানুষকে রাজনৈতিক ‘ক্যারিশমা’ দেখালেন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বামী প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্যারিশমা দেখিয়ে নিজেই জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন। এখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে ‘জন কেরি-রওশন এরশাদ বৈঠকের’ খবর উৎপাদন করে নিজের ক্যারিশমা দেখালেন দেশের ১৬ কোটি মানুষকে। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার অফিশিয়াল প্যাডে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে ৩০ আগস্ট দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম রওশন-জনকেরির সাক্ষাতের খবর প্রচার করে। খবরে বলা হয়, ক্যারির সঙ্গে সাক্ষাতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হতে পারে। মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ----। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে মার্কিন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ----’। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ খবর প্রচার করা হলেও পরে জানা যায় বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে জন কেরির কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়নি।
২৯ আগস্ট কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকা সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি সরকারের বাইরে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচি রাখেন। ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে তার বক্তৃতা কর্মসূচি ছিল। সেখানে উপস্থিত হন গৃহপালিত বিরোধী দল নেতা রওশন এরশাদ। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, তরুণ-যুবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো রওশন এরশাদও সেখানে আমন্ত্রিত শ্রোতা ছিলেন। সেখানে গিয়ে আসন না পাওয়ায় কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকেন রওশন এরশাদ। অতঃপর আয়োজকরা তাকে দ্বিতীয় সারির একটি চেয়ারে বসতে দেন। সৌজন্যতাবশত এক নারী নেত্রী রওশন এরশাদকে প্রথম সারিতে বসার ব্যবস্থা করেন। জন কেরি আসেন এবং নির্ধারিত বক্তব্যের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট জন কেরিকে রওশন এরশাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জবাবে মুচকি হেসে হেঁটে চলে যান ব্যস্ত জন কেরি। অথচ প্রচার করা হয় জনকেরির সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাদের বক্তব্য জন কেরির সঙ্গে এভাবে দেখা করার চেষ্টা এবং ভুয়া সাক্ষাতের খবর প্রচার করে বিরোধী দলের নেতা দলকে অমর্যাদা করেছেন। জাপার একাধিক নেতা জানান, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করেননি জন কেরি। এমনকি রাজনৈতিক কারণে বার্নিকাটও রওশন এরশাদকে পাত্তাই দেন না। ওইদিন ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও তরুণদের উদ্দেশে কেরির বক্তব্য অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে রওশনও আমন্ত্রিত ছিলেন। কেরি সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাটের মাধ্যমে রওশন কেরিকে নিজের একটি ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে কথা বলার সুযোগ চান। কেরি হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় হাঁটতে-হাঁটতে রওশন এরশাদের দু-একটি কথা বলেন। অথচ প্রচার করা হয় রওশন এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে কেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
উল্লেখ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা হলেও তাকে প্রভাবশালী দেশগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা ঢাকা সফরে এলেই প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বিদেশীদের কাছে গুরুত্ব না পাওয়ায় রওশন এরশাদ ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন বিদেশী অতিথিরা ঢাকা সফরে এলে মন্ত্রণালয় যেন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই আবেদনের পর কিছু বিদেশী অতিথি ঢাকা সফরে এলে রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিদেশীরা রওশনের সঙ্গে বৈঠকে উৎসাহী হন না। তারা সরকারের বাইরে গুরুত্ব দেন বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে। জন কেরির ঢাকা সফর ছিল রাজনৈতিক দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ মার্কিন প্রশাসন সংসদে এবং মাঠে কোথাও না থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে খুবই গুরুত্ব দেন। অথচ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সামান্য বৈঠকের আগ্রহ দেখান না। এতে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের কাছে লজ্জায় পড়েন। সেই লজ্জা থেকে মুক্তির জন্যই জন কেরির সঙ্গে রওশন এরশাদের সাক্ষাতের ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। অবস্থা এমন যে রাজনৈতিক ক্যারিশমা দেখিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় স্বামী এরশাদকে গোলক ধাঁধায় ফেলে নিজেই বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন। এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষকে গোলকধাঁধায় ফেলে কেরির সঙ্গে সাক্ষাতের ভুয়া তথ্য প্রচার করেছেন। রওশন এরশাদের এই খবর নিয়ে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনা, নিন্দা ও বিতর্কের ঝড় বইছে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বললেন, মেরুদ-হীন এরশাদকে ‘সাইজ’ করে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এখন জাতীয় পার্টির ‘সর্বেসর্বা’। সংসদীয় দলের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকায় এরশাদ তার (রওশন) নাচের পুতুল। কিন্তু বিদেশীরা তাকে (রওশন) রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই মনে করছে না। অথচ তিনি বিরোধী দলের নেতার মর্যাদা পেতে উদগ্রীব, যার জন্য রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে কেরির সঙ্গে তার সাক্ষাতের ভুয়া খবর প্রচার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ওই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ইএমকে সেন্টারে বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজনের সঙ্গে কেরি কুশল বিনিময় করেছেন। কেউ সেটাকে একান্ত সাক্ষাৎ, সৌজন্য সাক্ষাৎ বা বৈঠক হিসেবে প্রচার করেনি। অথচ রওশন এরশাদ সে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন দেশবাসীকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রওশন ‘ক্যারিশমা’য় কেরি সাক্ষাৎ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ