পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে ভাঙনের শিকার মানুষের মানবেতর জীবন যাপন
ইনকিলাব ডেস্ক : বন্যার সাথে নদীভাঙনে হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে একেবারে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে ভাঙনচিত্র খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙন কবলিতদের দুর্ভোগ চরমে
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : গত পাঁচ দিনে শরীয়তপুর জেলার তিন উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শত শত পরিবার। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর এলাকায় পদ্মার তীব্র ভাঙনে গত পাঁচ দিনে প্রায় আট শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার। এদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারবুনিয়া ইউনিয়নের ছুরিরচর ও স্টেশন বাজার এলাকার ১২০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রচ- স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় রোববার থেকে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এতে কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর বাজার, একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মসজিদসহ পাঁচ শতাধিক কাচা-পাকা স্থাপনা ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে আজ বুধবার ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাঙন কবলিতদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকায় বাড়ি-ঘর সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক না পাওয়ায় শেষ সম্বলটুকুও রক্ষা করতে পারছে না ভাঙনকবলিতরা। ভাঙনকবলিত দুর্গতরা এই মুহূর্তে তাদের বাড়িঘর সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের দাবি জানান।
ভাঙনের শিকার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর ইয়াকুব বেপারীকান্দি গ্রামের স্মৃতি বেগম বলেন, আমাদের সর্বস্ব সর্বনাশা গ্রাস করে নিয়ে গেছে। আমাদের ব্যবহারের জিনিসগুলো নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছি। লোকবলের অভাবে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারছি না। চোখের সামনে একের পর এক স্থাপনা তলিয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের রিপন ফকির (৫০) বলেন, আমাদের বাড়ির ১০টি পরিবারের সকল স্থাপনাই নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। ভাই স্বপন ফকিরের ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একতলা ভবনটি অবশিষ্ট আছে। যা দুই একদিনের মধ্যে নদীতে তলিয়ে যাবে। আমরা কোন সাহায্য পাইনি বা চাইও না। তবে প্রশাসনের লোকজন আমাদেরকে বাড়ি-ঘর সরানোর জন্য সহায়তা করলে উপকৃত হতাম। অন্তত শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে পারতাম। তিনশ’ টাকার শ্রমিক বর্তমানে আমাদের এলকায় এক দিনে এক হাজার টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না। বাইরের শ্রমিক এসে বেশি মজুরি নিয়ে কাজ করছে।
নদী ভাঙন কবলিত কুন্ডেরচর এলাকা থেকে নড়িয়া উপজেলার ঢালিকান্দি পাঠানবাড়ি গুদারাঘাট এলকায় স্থানান্তরিত মলি আক্তার বলেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে শুধু ঘরটি নিয়ে আসতে পেরেছি। এখানে খাবার পানি ও পায়খানার কষ্টো আছি। প্রতি শতাংশ বার্ষিক ৫শ’ টাকা হারে ৮ শতাংশ জায়গা ভাড়া নিয়ে মাথা গোজার চেষ্টা করছি।
স্থানীয় কুন্ডেরচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বেপারী বলেন, পদ্মার ভাঙন আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের ভাঙন ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মুহূর্তের মধ্যেই শত শত বাড়িঘর বিলীন করে দিচ্ছে আগ্রাসী পদ্মা। আমরা আমাদের সাধ্য মত সরকারী সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়েছি। যা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিকট ভাঙন কবলিতদের বাড়ি-ঘর সরানোর জন্য সহায়তা ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছি।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের বলেন, আমি ভাঙন শুরু হওয়ার পর থেকেই দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। ভাঙনের তীব্রতা এতটাই যে, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার কোন সামর্থ্যই আমাদের নেই। তাই সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বন্ধুবান্ধবের কাছে দুর্গতদের সহায়তার জন্য হাত বারিয়েছি। যাতে করে তাদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করা যায়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার কারণে পদ্মার পানি ও ¯্রােতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জেলার জাজিলা ও নড়িয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। আমরা ভাঙনকবলিত মানুষদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদ ও স্কাউটদের কাজে লাগিয়েছি। শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে কখনোই এ সমস্যার সমাধান হবে না। পানি উন্নয়নের বোর্ডের মাধ্যমে পদ্মার তীর সংরক্ষণ অথবা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি। বর্তমানে দুর্গতদের জাজিরা হেলিপ্যাডে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বর্ষার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে চরের খাস জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রামের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজবাড়ীতে পদ্মায় অব্যাহত রয়েছে ভাঙন
গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার পানির প্রভাবে রাজবাড়ীর পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, সেইসাথে অব্যাহত রয়েছে নদীভাঙন।
গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ সেন্টিমিটার। রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ভাঙন। এছাড়া জেলার পাংশা, কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ভাঙন চলছে।
দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে তীব্র ¯্রােতের কারণে ব্যাঘাত ঘটছে ফেরি চলাচলের এই রুটে বর্তমানে ১৪ টি ফেরি চলাচল করছে। চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ এবং ৪ নম্বর ঘাট পুরোপুরি সচল রয়েছে ২ নম্বর ঘাটটি সচল থাকলেও ¯্রােতের কারণে কোনো ফেরি ভিড়তে পারছে না ঘাটে, আর ১ নম্বর ঘাটসহ পুরো একটি গ্রাম নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় কবে নাগাদ নির্মান কাজ শুরু হবে তা বলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে ঘাটের দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে।
মাদারীপুরে নদীভাঙনে দিশেহারা মানুষ
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : গতকাল বুধবার দুপুরে পর লাগাতার প্রবল বর্ষণে মাদারীপুর জেলা শহরের নি¤œাঞ্চল এলাকা উপজেলা আবারো প্লাবিত হয়েছে। ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় ও অব্যাহত আড়িয়াল খাঁ পদ্মা নদী ভাঙন, পানি¯্রােত জলাবদ্ধতার কারণে মাদারীপুরের সদর ও শিবচরের অনেক নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি। মাদারীপুরি পৌর এলাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কার্যত প্রায় ১ মাস যাবৎ পৌরবাসী পাানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় আড়িয়াল খাঁ নদীর পানির ¯্রােত তীব্রতর হওয়ায় মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ প্রস্তাবিত ইকোপার্ক, মহিশেরচর, ছিলারচর এলাকা অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।