পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ : প্রায় ৮শ’ এজেন্সি বিপাকে
আরব ন্যাশনাল ব্যাংকের ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর হাজার হাজার মার্কিন ডলার উধাও হয়েছে। ফলে দেশটিতে নতুন ভিসার জনশক্তি রফতানির কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে। রিয়াদস্থ এনজাজ (ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা) জানিয়েছে যান্ত্রিক ত্রæটির এবং সিস্টেম আপগ্রেড দরুণ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ১২শ’ বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির বিপাকে পড়েছে। ভুক্তভোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
নির্ধারিত অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সশূন্য হয়ে যাওয়ায় মোফা ও গামকার মেডিকেল পরীক্ষার চার্জ পরিশোধ করতে না পারায় সউদীতে কর্মী নিয়োগের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে। সৃষ্ট সঙ্কটের দরুণ সউদীর ভিসাপ্রাপ্ত হাজার হাজার কর্মী চরম হতাশায় ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সউদী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমাকৃত ডলার হঠাৎ কেটে নেয়ায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসে নতুন ভিসা ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সউদীগামী কর্মীদের গামকার মেডিকেল রিপোর্টের কার্ড অনলাইনে শো করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সউদীগমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এতথ্য জানিয়েছেন।
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান সউদী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জমাকৃত ডলার হঠাৎ উধাও হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ এ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির দরুণ সউদীতে জনশক্তি রফতানির কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শিগগিরই সউদী রাজকীয় সরকার সৃষ্ট সঙ্কট নিরসন এবং স্ব স্ব এজেন্সির নির্ধারিত অ্যাকাউন্টের উধাও হওয়া ডলার ফেরত দিবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসব রিক্রুটিং এজেন্সি’র স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে উধাও হওয়া ডলার আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কী না তা নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। রিয়াদস্থ সউদী এনজাজ কর্তৃপক্ষের সাথে জনৈক প্রবাসী যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসকে অবহিত করতে। ভুক্তভোগি কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বৃহস্পতিবার ঢাকাস্থ দূতাবাসে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের জন্য লিখিত আবেদন পেশ করেও কোনো সদোত্তর পাননি। তারা উধাও হওয়া ডলার অবিলম্বে স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে ফেরত পাওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট সঙ্কট দ্রুত সমাধানের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো স্ব স্ব ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেয়া ডলার কবে নাগাদ ফেরত পাবে তা’ জানার জন্য সউদীসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না।
বায়রার ইসির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরব ন্যাশনাল ব্যাংকের স্ব স্ব অ্যাকাউন্ট থেকে জমাকৃত ডলার হঠাৎ কোনো নোটিশ ছাড়াই উধাও হওয়ায় সউদীগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যু এবং গামকার মেডিকেল কার্ড অনলাইনে শো করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট সঙ্কট দ্রæত সমাধানের জন্য কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান। অন্যথায় সউদীর শ্রমবাজারের মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নগরীর নয়া পল্টনস্থ একটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী সউদী ব্যাংকে জমাকৃত ডলার কোনো সতর্ক ছাড়াই ব্যালেন্সশূন্য হওয়ায় জনশক্তি রফতানিতে অশনি শঙ্কেত দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, সউদী ব্যাংকের কার্যক্রম সংস্কার বা আপগ্রেড করার প্রয়োজন হলে গ্রাহকদের আগেভাবেই অবহিত করা উচিৎ ছিল। সউদী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ ধরনের হঠকারি সিদ্ধান্ত মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএমইটির সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশে অর্থনীকে চাঙা রাখছেন। সউদী আরবে রয়েছে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি, তাদের সংখ্যা ১৫ লক্ষাধিক। সউদী প্রবাসী কর্মীরা ২০২০ সালে ৫১২৮ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সউদীতে ৪২ লাখ ১১ হাজার ৩১৪ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে শুধু নারী গৃহকর্মী চাকরি লাভ করেছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৫ জন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখছে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারির চলমান সঙ্কটের মধ্যেও প্রবাসীদের আয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা সত্যিকার অর্থে অবিশ্বাস্য। প্রতিনিয়ত এ ধারা অব্যাহত রাখাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এরপর আগস্টেও ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশে। সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলারের গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছায় ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। রাতে ফোরাব সভাপতি আব্দুল আলিম জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অসাবধানতার দরুণ হ্যাকাররা এসব ডলার চুরি করে নিয়ে গেছে। এটা সউদী ব্যাংকের কোনো দোষ নেই। এজেন্সিগুলো ব্যাংকের পাসওয়ার্ড অন্যের সাথে শেয়ার করায় এসব ডলার উধাও হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমার সউদী ব্যাংকের ডলার ঠিকই আছে। আমার ব্যাংকের পাসওয়ার্ড কাউকে দেইনি।
গতকাল রাতে রিক্রুটিং এজেন্সি ঐকপরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে উধাও হওয়া ডলার স্ব স্ব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ফেরত দিবে সউদী কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ডলার উধাও হওয়ায় ৮ শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।