পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেশার জগতে এবার নতুন রেসিপি। ইয়াবার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশে এখন ঢুকছে ‘এমডিএমএ’, ‘আইস’, ডিমেথ, ফেনইথাইলামিন, মেথান ফিটামিন বা ক্রিস্টালমেথসহ বিভিন্ন নামের নতুন নতুন মাদক। মাদকের ভয়াবহতা কমাতে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করতে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মুখোমুখি নতুন চ্যালেঞ্জের। আর এসব মাদকে ধ্বংস হচ্ছে অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ অভিজাত এলাকাগুলোতে উড়তি বয়সের ছেলে-মেয়েরা এসব মাদক সেবন করে থাকেন। শুধু তাই নয়, ‘এমডিএমএ’, ‘আইস’, ডিমেথ, ফেনইথাইলামিন, মেথান ফিটামিন বা ক্রিস্টালমেথ সেবন করতে করতে অনেকেই ওই সব মাদকের ব্যবসাও শুরু করেছেন। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে নিরাপদেই মাদক বেচাকেনা করায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে ১৪ ফেব্রæয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে’কে টার্গেট করে অভিজাত এলাকাগুলোতে এসব মাদক বেচাকেনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেইজ, গ্রæপ এবং ব্যক্তিগত আইডি খুলে অনলাইনে এসব মাদকের হাট বসানো হয়েছে। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে মাদক। অনলাইনে মাদকের অর্ডার করলেই নিদিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সব ধরনের মাদকের হোম ডেলিভারি। আর হোম ডেলিভারিতে নিজস্ব ডেলিভারিম্যানের পাশাপাশি প্রচলিত ডেলিভারি সার্ভিস এবং কুরিয়ার ব্যবহার করা হয় বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ২৬ ফেব্রæয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘আইস’ পিল তৈরি ল্যাবের সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। পরে মাদক তৈরির মূলহোতা হাসিব মোহাম্মদ রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আইসের উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন। জীবনঘাতী এই মাদক ব্যবহার করা হয় মূলত স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়াতে। এছাড়াও ‘এমডিএমএ’, ডিমেথ, মেথান ফিটামিন বা ক্রিস্টালমেথ মাদকও সেবন করার পর ২৪ ঘন্টা স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়ায়। আর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা প্রচন্ড পরিমাণ ঘুম পায়।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা এমডিএমএ ও আইস মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতি ১০ গ্রাম বিক্রি করে থাকে এক লাখ টাকায়, যা রাজধানীর অভিজাত ও উচ্চবিত্তরা ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিবার মাদক আইস সেবনে খরচ হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। ধূমপানের মাধ্যমে, ইনজেক্ট করে বা ট্যাবলেট হিসেবে এটা নেয়া যায়। ব্যয়বহুল এই মাদক অভিজাত শ্রেণির মাদকসেবী ছাড়া সেবন সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ইয়াবার চেয়ে ১০০ গুণ মারাত্মক মাদক এমডিএমএ ও আইস। এগুলো সেবনে মস্তিষ্ক বিকৃতিসহ মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই মাদকের মূল উপাদান মেথা ফেটামিন বিষণœতা থেকে মুক্তি ও প্রাণসঞ্চারে উজ্জীবিত হতে ১৯৫০ সালে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরে তা বিবর্তিত হয়ে ভয়ংকর মাদকে রূপ নেয়। ইন্দ্রিয় অনুভ‚তি, সাহস ও শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন উত্তেজনা বাড়ায় এই মাদক। এই মাদক সেবনে অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শরীরে চুলকানিসহ নানা রোগ দেখা দেয়। ধোঁয়ার মাধ্যমের চেয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ মাদক নিলে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো কর্মকাÐ ঘটাতে দ্বিধা করে না এই মাদক গ্রহণকারীরা। তবে এ ধরনের মাদকে কোনো গন্ধ না থাকায় অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকসেবীদের চিহিৃত করতে পারে না।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ধর্ষণের পর রক্তক্ষরণে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্রীর দেহে ‘ফরেন বডি’র আলামত মিলেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুশকার ময়নাতদন্ত হয়। সেখানকার ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কে এতটা ভয়াবহ পরিণতি হওয়ার কথা নয়। শরীরের নিম্নাঙ্গে কোনো ‘ফরেন বডি’ জাতীয় কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সেখানে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে। উন্নমানের মাদক সেবনের পর এমন ঘটনা ঘনানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, নতুন মাদক ও যৌনরুচির পণ্যগুলো অনলাইনেই মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। একটি কল করেই যে কেউ অনলাইনের বিভিন্ন নামী-বেনামী প্রতিষ্ঠান থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এসব পণ্যের ভেতর রয়েছে যৌন উত্তেজক মাদকও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের পণ্য আমাদের তরুণ সমাজকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন মাদক সম্পর্কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা ইনকিলাবকে বলেন, ইয়াবা খাওয়া পর লিভার, কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কিন্তু ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর হলো নতুন মাদক ‘এমডিএমএ’, ডিমেথ, মেথান ফিটামিন ও আইস।
তিনি বলেন, নতুন এই মাদকগুলো এতদিন উন্নত বিশ্বে ছিল। ইয়াবা ৫টি খেলে যা হবে। আর আইস একটি খেলেও তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। এসব মাদক সেবনের কারণে মূলত মানসিক ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রভাব ফেলে। কেউ আসক্ত হলে এটি ছাড়া তিনি আর ঘুমাতে পারেন না। ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সেবন করলে কারও স্ট্রোক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মানসিক অবসাদ বা বিষœতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে গুলশান এলাকায় একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাজাও হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ঢাকার বাইরেও অভিযান চালিয়ে এ ধরনের মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ১৮৮৭ সালে জার্মানিতে মেথা ফেটামিনের উৎপত্তি ঘটে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর বিবর্তনের মাধ্যমে জাপানি সৈন্যদের, বিশেষ করে যুদ্ধবিমানের চালকদের অনিদ্রা, উত্তেজিত ও নির্ভয় রাখার জন্য ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৬০ সালে এর অপব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার মেথা ফেটামিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে ১৯৯০ সালে মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায়ীরা বিবর্তনের মাধ্যমে মাদক হিসেবে এটি ছড়িয়ে দেয় আমেরিকা, ইউরোপ, চেক রিপাবলিক ও এশিয়াসহ পৃথিবীব্যাপী। ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই বছর অস্ট্রেলিয়ায় মাদক হিসেবে এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। এশিয়ার দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনে এর ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসেবে, ২০০৮ সালে যে পরিমাণ ইয়াবা ব্যবহার হতো ২০১৬ সালে এর ব্যবহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। এর বাইরে হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল বহুকাল ধরেই এদেশে অনেক মাদকসেবী ব্যবহার করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চবিত্ত ও অভিজাত পরিবারের মাদকসেবীরা ‘এমডিএমএ’, ‘আইস’, ডিমেথ, ফেনইথাইলামিন, মেথান ফিটামিন বা ক্রিস্টালমেথ নামক নতুন মাদক ব্যবহার করে থাকেন। তবে ওইসব মাদক তরুণদের মধ্যে ছড়াতে পারলে বেশি অর্থ আয় করা সম্ভব হবে বলে বিভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসায়ীরা এটি বাজারে আনার চেষ্টা করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করা তিনি এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি বাইরে আছি। এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। আপনে অফিসে আসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।