Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতারণায় প্রেমিককে করেন ৫ টুকরো

সজিব হত্যায় থানায় মামলা : আদালতে জবানবন্দির পর কারাগারে প্রেরণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দীর্ঘদিনের পরকীয়া দ্বন্দ্বের বিরোধে হত্যার পর প্রেমিক সজিব হাসানের (৩২) লাশ পাঁচ টুকরা করেন শাহনাজ পারভীন (৫০)। এ সম্পর্ককে পুঁজি করে টাকা চেয়ে প্রতারণা শুরু করেন প্রেমিক সজিব হাসান (৩২)। গ্রেফতারকৃত শাহনাজ পারভীন পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রেমিকা শাহনাজ পারভীনকে একমাত্র আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ওয়ারীর ১৭/১ কে এম দাস লেনের বাসা থেকে সজিবের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় লাশের পাশেই বসা অবস্থায় শাহনাজকে গ্রেফতার করা হয়। শাহনাজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই খুন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ বছর ধরে ওই বাসায় বসবাস করেন সজিব। তিনি সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারে চাকরি করতেন এবং বুটিকসের ব্যবসা করতেন। শাহনাজকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েই বাসাটি ভাড়া নেন সজিব। স্ত্রী পরিচয়েই শাহনাজ ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। স্থানীয়রা তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই জানতেন। তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, শাহনাজের সঙ্গে সজিবের ৫ বছর আগে সম্পর্ক হয়। তখন শাহনাজকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজিব ওই বাসার চতুর্থ তলায় ভাড়া নেন। শাহনাজের বাসাও একই এলাকায়। তিনি প্রায় নিয়মিতই সজিরের বাসায় যেতেন। সজিবের বাসায় বুটিকসের কাজ শিখছেন বলে তার স্বামীকে বলে যেতেন। তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তাদের দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন। এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়ারী থানায় জসিম উদ্দিন (৫৫) নামে একজন শাহনাজকে স্ত্রী দাবি করে তার সন্ধান চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার স্ত্রী শাহনাজ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে গেছে। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তার খোঁজ পেতে তদন্ত করছিল ওয়ারী থানা পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামীকে ফোন করে একটি বাসায় বিপদে পড়েছেন বলে উদ্ধার করতে অনুরোধ জানান শাহনাজ। এ তথ্যের ভিত্তিতে জিডি করা জসিম ওয়ারী থানা পুলিশকে ফোন করে জানান, তার স্ত্রী শাহনাজকে একটি বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ওয়ারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সজিবের ৫ টুকরো লাশ উদ্ধার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে সজিবের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উঠেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সজিব তাকে লাঠিপেটা করেন। এরপর সজিব ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির সময় তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। এক পর্যায়ে সজিবের কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন শাহনাজ। এতে সজিব মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। এরপর ছুরি দিয়ে সজিবের দুই হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে তিনি তার স্বামীকে ফোন করেন।
পুলিশের কাছে শাহনাজের দাবি, দ্বন্দ্বের জেরে তাকে পেছন থেকে চাকু দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন সজিব। তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করেন এবং ওই ধারাল অস্ত্রে সজিবকে আঘাত করেন। পুলিশ জানায়, সজিবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে, তারাও যোগাযোগ করেছেন। সজিবের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছেন কি-না তা তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দির পর কারাগারে প্রেরণ
প্রেমিক সজিব হাসানকে কুপিয়ে পাঁচখন্ড করে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত প্রেমিকা শাহনাজ বেগম (৫০) আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি শাহনাজ বেগমকে আদালতে হাজির করেন। এরপর আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মতি হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন এ তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সজিব হত্যা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ