পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিবন্ধী শনাক্ত, সুবর্ণ কার্ড ও ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে একশ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। জরিপে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত না করা, অধিকাংশ জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা ‘অনেক ব্যস্ত’ থাকায় প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করতে সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিবন্ধিতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফারহানা রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে প্রতিবন্ধিরা উন্নয়নের অংশীদার হতে পারছেন না। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও তাদের অংশগ্রহণ অনুকম্পার উপর নির্ভর করে। অথচ তারাও আমাদের মতোই সমান অধিকার পাবেন। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে গেলে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে হবে; পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিৎ করতে হবে।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং তার সহকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ‘অনেক ব্যস্ত’ থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা-শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে তথ্যভান্ডারে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি বা তার নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করা হয়।
অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ তাদের প্রতিবন্ধী নন এমন আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের সুবর্ণ কার্ড দিতে সমাজসেবা কার্যালয়ে তদবির করেন। যাদের সুবর্ণ কার্ড দেওয়ার কথা নয়, তদবিরের মাধ্যমে তাদের কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিরা সুবর্ণ কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুবর্ণ কার্ড করার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে নাজেহাল হতে হয় বলেও অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো সেবাগ্রহিতা। অনেক সময় সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজন ফরম ছিঁড়ে ফেলেন এবং সার্ভার নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখান। এমন অভিযোগও আছে যে অতি দরিদ্র প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তির কাছ থেকেও কোনো কোনো কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ৪০০-৫০০ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের একাংশের বিরুদ্ধে সুবর্ণ কার্ডের জন্য এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আবার সুবর্ণ কার্ড থাকা সত্তে¡ও সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া এবং প্রাপ্য সুবিধা পেতে মধ্যস্থতা করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবন্ধী ভাতায় দুর্নীতি : মাঠপর্যায়ে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের ভাতা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছার ওপর। ভাতা প্রাপ্তির কার্ড পেতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করেন। টিআইবি পরিচালিত সেবাখাতে দুর্নীতি বিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭ এর তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২৩.৪ শতাংশ খানাকে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত হতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সময়ক্ষেপণ, স্বজনপ্রীতির ও প্রতারণার শিকার যথাক্রমে ১৯.৩ শতাংশ খানা, স্বজনপ্রীতি ১১ শতাংশ খানা এবং প্রতারণা শিকার হয়েছেন ৭.৯ শতাংশ খানা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার ৫.২ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের ভাতার অর্থ আত্মসাতের শিকার ৪.৮ শতাংশ খানা ও ঘুষ দাবি করা হয়েছে ২.৭ শতাংশ খানার কাছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যে নতুন দুই লাখ প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি ভাতার আওতায় এসেছেন, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ভাতার অর্থের অংশ বিশেষ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। প্রথমবার ভাতার বইয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার স্বাক্ষর লাগে বিধায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির প্রথম কিস্তি পেতে ২৪ থেকে ৬৭ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে।
সেবা খাতভেদে দুর্নীতির : টিআইবি পরিচালিত সেবাখাতে দুর্নীতিবিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭ এর তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিরা তাদের অক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও সাধারণ মানুষের মতো সব সেবা নিতেই অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রেই তারা কমবেশি দুর্নীতির শিকার হন। উপবৃত্তির তালিকাভুক্তি, বই প্রাপ্তি, ভর্তি-পুনঃভর্তি প্রবেশপত্র দিতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ১১.৩ শতাংশ খানা, ঘুষের শিকার হয়েছেন ৮ শতাংশ ও গড় ঘুষ দিতে হয়েছে ২৫০ টাকা। স্বাস্থ্য সেবার টিকিট কেনা, পরীক্ষা নিরীক্ষা, শয্যা, হুইল চেয়ার ব্যবহার ও ওষুধ কেনায় দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ১৩.৬ শতাংশ পরিবার, ঘুষের শিকার হয়েছেন ৫.৫ শতাংশ ও গড় ঘুষ দিয়েছেন ২৩৬ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সনদ ও প্রত্যয়নপত্র ভাতা ও সালিশ গ্রহণে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৩৪ . ৭ শতাংশ, ঘুষের শিকার হয়েছেন ১.৭ শতাংশ। ব্যাংক থেকে ভাতা ও রেমিট্যান্স উত্তোলনে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৪.২ শতাংশ, ঘুষ দিয়েছেন ১.৭ শতাংশ খানা। সমাজসেবা কার্যালয়ে শনাক্তকরণ ও সুবর্ণ কার্ড পেতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ১৭.৪ শতাংশ খানা ও ঘুষ দিয়েছেন ৮.৭ শতাংশ খানা।
এনজিওর অনুদানে দুর্নীতি : জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন শর্তসাপেক্ষে বিভিন্ন এনজিও আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর একাংশ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশের মাধ্যমে অনুদান নিয়ে থাকেন। অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভ‚তভাবে ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা অর্থ আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়মবহিভর্ূূতভাবে অর্থ দিতে হয় এ কারণে এসব এনজিও অঙ্গীকারবদ্ধ সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে না।
সভার কার্যবিবরণীতে অনিয়ম : বছরের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো কোনো উপজেলা কমিটি সভা না করেই সভাপতিসহ সবার স্বাক্ষর নিয়ে সভার কার্যবিবরণী তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসা হয়।
নানা সুপারিশ : প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় দুর্নীতি নিরসনে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নানা সুপারিশ উপস্থাপন করেন টিআইবির সদস্যরা। এক. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর যথাযথ বাস্তবায়ন; এর আওতায় পরিচয়পত্রবিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। দুই. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা নীতিমালার আওতায় কমিটিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তিন. জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখতে হবে এবং চাহিদার নিরিখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বাজেট বাড়াতে হবে। চার. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট করতে হবে। পাঁচ. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা প্রদানকারী সব কার্যালয়ে কার্যকর তদারকি এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে জবাবদিহিম‚লক নিয়মিত পরীক্ষা নিশ্চিৎ করতে হবে। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম তদারকি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।