Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজাকারের দোসরদেরও বিচার করতে হবে

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫১ পিএম, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার পরিবর্তন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে যারা এসব কথা বলেন রাজাকারের দোসর হিসাবে এদের বিচার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিদের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মায়াকান্না করছেন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে খালেদা জিয়া বলছেন তাদের বাঁচিয়ে রেখে কেন শিকড়ের সন্ধান করা হচ্ছে না। এ বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিকড়ের সন্ধান করা লাগবে না। খালেদা জঙ্গিদের মদদ দেন। কাজেই শিকড় যে সেখানে সেটা খুঁজে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। শিকড় কি সেখান থেকে আসে কিনা তা তদন্ত করে দেখতে হবে। 

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে একজন আইনজীবী কিভাবে দাঁড়ায়, সেটা আমার অবাক লাগে। শুধু অর্থটাই কি সব? এদের পক্ষে কথা বলে, আবার বলে সরকার পরিবর্তন হলে নাকি তারা ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশের মানুষকে তাঁরা চেনে নাই। যারা এসব কথা বলেছেন এদের ব্যবস্থা জনগণই নেবে। রাজাকারের দোসর হিসাবে এদের বিচার করতে হবে। কাজেই এই কথাটা যেন কেউ ভুলে না যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন করেছি। আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। তাকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। সম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার জন্য। ৯৬’ সালে আমরা সরকারে আসার পর বাংলাদেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। কিভাবে এদেশে সংগ্রাম হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, কিভাবে আমরা বিজয় অর্জন করেছি, মানুষ জানতে পেরেছে।
পঁচাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করে বেদনার্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুই বোন সেদিন বিদেশে ছিলাম। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি বাবা নেই। অনেকে বিচার চায়। আমরা যে এতো আপনজন হারালাম বিচারও চাইতে পারিনি। ইনডেমনিটি জারি করে মামলা জিডি করা যাবে না। থানায় যেতে পারিনি। ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ছোট্ট শিশুসহ নারী-পুরুষকে লাইন ধরে হত্যা করা হয়, নির্যাতন করা হয়।
একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় যেতে পারেনি। আর এই ২১ বছর বাংলার মানুষ সুবিধাবঞ্চিত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই প্রতিজ্ঞা, বাংলার মাটি থেকে অন্যায় অত্যাচার দূর করা। একটাই উদ্দেশ্য, প্রতিটি মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর এসব প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমার দেশে ফেরা।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হন কীভাবে; স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হন কীভাবে? তিনি বলেন, নামে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, নানা খেতাবও পেয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাজ কী করেছে? মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। যে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ ছিল, মার্শাল ল’ অর্ডিনেন্স দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে এই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, (বঙ্গবন্ধুর) খুনিদের পুনর্বাসন করেন জিয়াউর রহমান। পঁচাত্তরের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী, তাদের পুনর্বাসন করেছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা বানিয়েছে। সে (জিয়াউর রহমান) কী করে স্বাধীনতা বিশ্বাস করে?
তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। ওই অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ সংশোধন করে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। রাজনীতি ও দল করার সুযোগ দিয়েছে। তাহলে সে কী করে মুক্তিযোদ্ধা আর সে কী করে স্বাধীনতার স্বপক্ষ?
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯টি ক্যু হয়েছে। একেকটি ক্যু হওয়া মানেই সামরিক বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের জীবন নিয়ে খেলা। হাজার হাজার অফিসার, সৈনিকদের (জিয়াউর রহমান) হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। চার বছর পর্যন্ত তারা কারাগারে। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে তাদের যে ছিনিমিনি খেলা! হ্যাঁ-না ভোট, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন-প্রতিটি নির্বাচন ছিল প্রহসনের খেলা। সেখানে নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার কারও ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই নির্বাচনের রেজাল্ট হয়েছে। নির্বাচনকে নিয়ে খেলা তো সেখান থেকেই শুরু।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষের তখন কথা বলার অধিকার ছিল না, চলাফেরার অধিকার ছিল না। পঁচাত্তরের পর থেকে দেশে কারফিউ ছিল। প্রতি রাতে কারফিউ। সেটাকে কারফিউ গণতন্ত্র বললে আলাদা কথা। যেখানে কারফিউ দিয়ে দেশ চলে সেখানে গণতন্ত্র আসে কীভাবে?
যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়দাতাদের শাস্তি নিয়েও ভাবতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে। তাই তাদেরও কী শাস্তি হবে, তা আজ ভাবতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়দাতাদের বিচার জনগণের সামনে হতে হবে। এ জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোয় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিচার প্রকাশ্যে জনগণের সামনে হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তাদেরকে (যুদ্ধাপরাধী) মন্ত্রীও বানিয়েছে। খালেদা জিয়া যাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিল তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হয়েছে। যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হয়েছে, তাদেরকে যে মন্ত্রী বানিয়েছিল তার কী শাস্তি হবে- সেটাও দেশবাসীকে ভাবতে হবে। এখন তার কী শাস্তি হবে- প্রশ্ন করেন তিনি। এসময় দর্শক সারি থেকে শ্লোগান উঠে- ফাঁসি, ফাঁসি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশে মানুষের মাঝে এই সচেতনতাই সৃষ্টি করতে হবে-যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে, সেই খালেদা জিয়ার বিচার প্রকাশ্যে জনগণের সামনে হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, যেসব জঙ্গি মারা যাচ্ছে; তাদের জন্য খালেদা জিয়ার মায়াকান্না কেন? তাদের পক্ষ নিয়ে খালেদা বলছেন, শেকড়ের সন্ধান কেন করা হচ্ছে না? শেকড়ের সন্ধান করা লাগে না। যিনি তাদের মদদ দেন, শেকড় যে সেখান থেকে, সেটা খুঁজে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রেখে কী করবেন? তাদের পুঁজা করবেন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, শিকড় সেখান থেকে আসে কিনা, তা তদন্ত করতে হবে। শিকড়ের সন্ধানে যেতে হবে না। শিকড় নিজেই কথা বলবে। এদের রেহাই নেই। তাদেরও বিচার হবে। জনগণ একদিন তাদের বিচার করবে।
১৫ আগস্ট হত্যাকা- কারবালার সঙ্গে তুলনা করা যায়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমি হঠাৎ করে বিদেশে বসে জানতে পারলাম আমার কেউ নাই। ১৫ আগস্টের হত্যাকা- কেবল কারবালার হত্যাকা-ের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। কত অসহায় অবস্থায় চলতে হয়েছে। খুনীরা শুধু হত্যা করেছে তাই না। হত্যাকা-ের পর পরিবারের উপর জুলুম নির্যাতন করেছে। আমরা আপনজন হারালাম কিন্তু বিচার পর্যন্ত চাইতে পারলাম না। ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে ঘাতকের দল বহাল তবিয়তে থাকে। জিয়া ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করে। কি অদ্ভুত দেশে আমরা বসবাস করি।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে কেউ বিচার চাইতে আসলে ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। কেউ কি আমাদের কথা ভাবেন। কেউ যখন বিচার চায় আমার মনে পড়ে আমরাতো বিচার চাইতে পারতাম না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন আমার রাজনীতি করার অন্যতম লক্ষ্য বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। গরীব-দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসি। সকল শোক-দুঃখ বুকে চাপা দিয়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে মানুষ সব অধিকার হারিয়েছিল। কিন্তু ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। তারপর মামলা করার সুযোগ পাই। ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসি খুনীদের বিচার আবার শুরু করি। বিচারের রায় কার্যকর করি। যে কয়জন দেশে গ্রেফতার ছিল। এ রায়ের মধ্য দিয়ে অপরাধের বোঝা লাগব হয়। কলঙ্কমোচন হয়। দেশ অভিশাপমুক্ত হয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, খাদ্য মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ।



 

Show all comments
  • রিপন ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১:২৪ পিএম says : 0
    সরকারি দলে যারা আছে তাদের কী হবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজাকারের দোসরদেরও বিচার করতে হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ