Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্গত মানুষের দুর্গতি কমছে না

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহীতে পদ্মার বাঁধে ফাটল বেড়েছে : দৌলতপুরে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে : ত্রাণ ও পুনর্বাসন অপ্রতুল


ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত কর্তৃক হুট করে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীতে বৃদ্ধি হওয়া পানিতে বন্দি হয়ে আছেন লাখো মানুষ। গত কয়েক দিনে পানি কিছুটা কমলেও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলেছে। বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে সর্বহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট। ত্রাণের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রাজশাহীতে পদ্মার বাঁধে ফাটল বেড়েছে
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি কমতে শুরু করলেও শহররক্ষা বাঁধে ফাটল বাড়ছে। গত রোববার রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের টি-গ্রোয়েনে দেখা দেওয়া ফাটলটি গতকাল আরও বেড়ে গেছে। নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত গ্রোয়েনটির পশ্চিমাংশ ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে দেবে গেছে। ফলে গ্রোয়েনটি এখন নদীবক্ষে ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিদর্শনের পর সকাল থেকে ওই বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বর্তমানে শহররক্ষা বাঁধের ফাটলের জায়গায় বালি ও জিওব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটানা প্রায় ৬শ’ বস্তা জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। এর আগে রোববার সকালে শ্রীরামপুর এলাকার টি-বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তারা জানতে পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জিওব্যাগ ফেলে তা রক্ষার উদ্যোগ নেন। তবে হঠাৎ করে সোমবার থেকে পদ্মার পানি কমতে শুরু করে। এতে ফাটল বাড়তে থাকে শহররক্ষা বাঁধে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার বাঁধের ফাটলের জায়গাটি দেবে যেতে শুরু করে।
মাদারীপুরে নদীভাঙন অব্যাহত : নি¤œাঞ্চল প্লাবিত
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় ও অব্যাহত আড়িয়াল খাঁ, পদ্মা ও পালরদী নদীভাঙনে মাদারীপুরের সদর শিবচর ও কালকিনি উপজেলার আরো কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীভাঙনে গত ২ সপ্তাহে শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর, চরজানাজাত, দত্তপাড়া, নিলখী ও বহেরাতলা ইউনিয়নে সাত শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙনের শিকার হয়েছে দুটি বেড়িবাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য পরিবার উচু সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে উত্তর চরজানাজাত ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের দ্বিতল ভবন, একটি গুচ্ছগ্রামসহ ৫০টি ঘরবাড়ি। এ এলাকায় নদীতে বিলীন হয়েছে কমপক্ষে ৪শ’ একর ফসলি জমি। ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক।
ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী দুই লাখ টাকা ও পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে তা অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
সন্ন্যাসীরচর ইউপি চেয়ারম্যান রউফ হাওলাদার জানান, গত কয়েকদিনে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে তার বাড়িসহ ইউনিয়নের ৩শ’ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমপি সাহেব দুই লাখ টাকাসহ চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে আরও সহায়তা প্রয়োজন।
শিবচর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র চন্দ্র শিকদার জানান, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে দুটি বিদ্যালয় ভেঙে গেছে। এতে শিশুদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা চরনাচনা কালিকাপরি মহিষেচর মাদরা এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে অন্তত ৫০ পরিবার গৃহহীন হতে চলেছে। অনেক ফসলী জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে ইতিমধ্যে। ভাঙনের তীব্রতায় মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও কাজিরটেক ফেরীঘাট এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে। অপরদিকে কারকিনির সাহেবরামপুর রমজানপুর সেলিমপুর রামচর খাসের হাট বাশগাদী খুনের এলাকায় আড়িয়াল খাঁ ও পালরদী নদীর ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে শত পরিবার। পানি উন্নয়নবোর্ড জানিয়েছে নদীর পানি সামান্য বেড়েছে তবে বিপদজনক নয়।
দৌলতপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে
দৌলতপুর উপজেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কা ব্যারাজের খুলে দেওয়া ১০৪টি কপাটের বিরূপ প্রভাবের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানি পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। শনিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রাম এখনও পানিবন্দী অবস্থায় থাকায় কমেনি তাদের দুর্ভোগ। এদিকে পদ্মার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও নতুন করে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত দু’দিনে উপজেলার চিলমারী ও মরিচা ইউনিয়নের পশ্চিম উদয়নগর, ভবনন্দদিয়াড় ও মুল্লুকচাঁদপুর গ্রামের মুল্লুকচাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যার কারণে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৮টি এবং চিলমারী ইউনিয়নে ১৬টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। জনদুর্ভোগের পাশাপশি গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছে বানভাষীরা। বানভাষীদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও চারদিক জলমগ্ন থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে চরমে। সেই সাথে সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানিরও। তবে বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নের জন্য প্রতি টিমে ৪ সদস্য করে ৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মসিউল ইসলাম।
এদিকে বন্যা কবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী বন্যার্তদের মাঝে সরকারীভাবে ২৩ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌফিকুর রহমান। আরও ত্রাণ প্রদান করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আকস্মিক বন্যার কারণে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রামের ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সেইসাথে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শিবগঞ্জের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
শিবগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পাঁকা, দুর্লভপুর ইউনিয়নের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। এতে আসন্ন পিএসসি ও জিএসসি ও বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়নের ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানিতে ডুবে যাবার ফলে সেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার মুখলেসুর রহমান আকন্দ জানান, উপজেলার দুর্লভপুর ও পাঁকা ইউনিয়নে ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুর রাজিব রাজু জানান, দুর্লভপুর ইউনিয়নের ৮ ওয়ার্ডে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদরাসায় ও ৯নং ওয়ার্ডের দুটি মাদরাসা, ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধের নিচে থাকা সকল বিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল কাদের জানান, বন্যার পানিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডুবে গেছে। বন্যার পর পানি সরে গেলে প্লাবিত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মুখলেসুর রহমান আকন্দ জানান, উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে এসব বিদ্যালয়ের পানি সরে গেলে প্রয়োজনে সরকারি ছুটির দিনসহ অতিরিক্ত ক্লাস করিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস সম্পূর্ণ করা হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্গত মানুষের দুর্গতি কমছে না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ