Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি ব্যাংকের অনিয়ম দূর করার প্রত্যয় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দীর্ঘদিন থেকে মানুষের মাঝে চাউর আছে- সরকারি ব্যাংক মানেই চুরি, লুটপাট আর অনিয়ম। এই কলঙ্ক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে মুক্ত করার মিশন ঘোষণা করেছেন নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আগামী তিন বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চান তাঁরা। সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে দায়িত্ব পেয়ে ইতোমধ্যে সকলেই বলেছেন, ব্যাংকের যেসব সূচক দুর্বল সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন প্রথম দিন থেকেই। একই সঙ্গে প্রত্যেকের একটি পরিকল্পনা আছে। আস্তে আস্তে ব্যাংকগুলো গোছানো হবে।
ব্যাংকিং খাতে এই সরকারের দুই মেয়াদে অসংখ্য সফল উদ্যোগ রয়েছে। ব্যাংকিং সেবাকে তৃণমূলের কাছে নিতে আছে অসংখ্য মানবিক উদ্যোগ। আবার ক্ষমতাবানদের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করার বেশ কয়েকটি বড় নজিরও স্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় প্রায়শই হতাশা প্রকাশ করতেন রিজার্ভ ‘চুরির’ দায় নিয়ে পদত্যাগকারী গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি একাধিকবার স্বীকার করেছেনÑ ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারাই তার একমাত্র অতৃপ্তি।
অথচ সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং সরকারি ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর দায়িত্ব দিয়েছিল
কিছু পরিচালকদের। সেই পরিচালকরাই লুটে নিয়েছেন ব্যাংকের হাড়-অস্থি-মজ্জাটুকুও। কেউ ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে জামানত ছাড়াই দিয়ে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার ঋণ। আবার কেউ সমাজসেবার নামে ব্যাংকের টাকায় দান-খয়রাত করছেন উদার হাতে। কেউ অনৈতিকভাবে শ্রেণিকৃত ঋণ অশ্রেণিকৃত করছেন। আবার কেউ ইচ্ছামাফিক ঋণের জামানত পরিবর্তনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। ‘রাহুর গ্রাসে’ পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি এখন সেই গ্রাম্য প্রবাদের মতো- ‘বেড়া এখন নিজেই ক্ষেত খাচ্ছে’। এ কারণেই সাবেক গভর্নরের দায়িত্বকালীন হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতি, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর স্বেচ্ছাচারিতা মøান করেছে সরকারের অনেক সাফল্য। আর তাই সোনালী, রূপালী এবং অগ্রণী ব্যাংকের নতুন ৩ ব্যবস্থাপনা পরিচালকই সতর্ক অতীতের কেলেংকারির বিষয়ে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, দুই-তিনটি দুর্ঘটনা ঘটার পরও ব্যাংকটি পড়ে যায়নি। তাই আমি খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন, সারা দেশে ক্রিমিনালের সংখ্যা ১ পার্সেন্টও না। কিন্তু এই ১ পার্সেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই সমস্ত অফিস-আদালত, কোর্ট-কাছারি, আইন। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমার প্রথম কাজই হবে সোনালী ব্যাংকের এখন কি আছে সেদিকে নজর দেওয়া। আরেকটি হলো আমি কোথায় যেতে চাই সে অনুযায়ী কাজ করা।
এদিকে দায়িত্ব নিয়েই প্রথম দিনে পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান। এ সময় সহকর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ব্যাংকের দুর্বল সূচকগুলোকে চিহ্নিত করে তার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন।
নতুন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সবগুলো ব্যাংকের অবস্থা যে খুবই ভালো তা বলা যাবে না। তবে ননপারফর্মিং লোনগুলোকে কিভাবে পারফর্মিং করা যায়, সেই কাজটাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া একই সময়ে যেহেতু আমরা আইটিতে যাচ্ছি সুতরাং এসব ক্ষেত্রে ঝুঁকি চিহ্নিত করা যায় কিনা বা কত সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায় সেটাই হবে প্রথম কাজ। আতাউর রহমান প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ব্যাংকিং পেশায় কাজ করছি। সরকার আমাকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি আমার সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে কাজ করে যাবো ব্যাংকের কল্যাণের জন্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকÑ দু’ জায়গা থেকেই সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এটিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চান তিনি। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলাম বলেন, অনেক আশা নিয়ে সরকার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করতে আমি বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। অগ্রণী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমার একটি পরিকল্পনা আছে। আস্তে আস্তে সেগুলো গোছানো হবে।
“সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই ব্যাংকটির অবস্থা সুখকর নয়। অবশ্যই এই ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঋণখেলাপি। সেটা মোকাবেলায় সবার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাবো। এখন আমরা সবাই এই ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়ার যুদ্ধে নিবেদিত।” তাই ফুল নয়, বরং সবার সহযোগিতা দরকার বলে উল্লেখ করেন শামস উল ইসলাম।
সোনালী, রূপালী এবং অগ্রণী ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া তিন জনই সরকারের অন্য তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারি ব্যাংকের অনিয়ম দূর করার প্রত্যয় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ