Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজউকে অচলাবস্থা

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিক্ষোভে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক অচল হয়ে পড়েছে। রাজউকের দুইজন সিনিয়র প্রকৌশলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার রাজউকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা কাজকর্ম বন্ধ করে প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান ও মনোয়ারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
তাদের বিক্ষোভের মুখে বোর্ড মিটিং বন্ধ হয়ে যায়। গত সোমবার মামলা দায়েরের আগেই দুই প্রকৌশলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজউকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচে নেমে আসেন। তারা প্রকৌশলীদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের কাজকর্ম বন্ধ করে দেন। আজ বুধবার সকাল নয়টার মধ্যে দুই প্রকৌশলীকে মুক্তি দেওয়া না হলে সকল ধরনের কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে দশটায় রাজউক ভবনের চেয়ারম্যান ফ্লোরে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সভা বন্ধ করার জন্য শ্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় রাজউক শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন চৌধুরী, শ্রমিক লীগ নেতা আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী নান্নু, শামসুল আলম মিল্কি, মাহবুব এবং অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই সময় চেয়ারম্যানের রুমের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, আগামীকাল (আজ) সকাল নটার মধ্যে দুই প্রকৌশলীর মুক্তির ব্যবস্থা না করলে রাজউক ভবনে সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে রাজউক ভবনে অবস্থিত দুদকের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, নানা ছুতোয় রাজউকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেনস্তা করতে ফাঁদ পেতেছে দুদক। তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আজই (গতকাল) তার অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে সেগুন বাগিচা দুদক কার্যালয়ে আটক করে ফতুল্লা থানায় সাজানো মামলা করা হয়। তার সঙ্গে প্রকৌশলী সাইদুর রহমানকে আটক করা হয়। ওই মামলায়ও তাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ পর্যায়ে কর্মচারী-কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ‘মনোয়ার-সাইদুরের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ বলে তারা স্লোগানে ফেটে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে বোর্ড মিটিং স্থগিত করতে বাধ্য হন রাজউকের চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী। রাজউক চেয়ারম্যানকে কমকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দুদকের কর্মকর্তাদের নানা অন্যায় আবদার আমাদের শুনতে হয়। না শুনলে নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করা হয়। আমরা এসবের প্রতিকার চাই। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দফতরে ফিরে গেলেও কাজে যোগ দেননি।
গত সোমবার বিকালে রাজউকের দুই প্রকৌশলীকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন। তারা হলেন রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. ছাইদুর রহমান ও রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং গুলশান-বনানী-বারিধারা ও উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার রাত নয়টায় সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদেরকে রমনা থানায় রাখা হয়েছে। রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ঘোষণা করা হয় এই দুই প্রকৌশলীকে। এই দুজনসহ মোট ১২ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. সালাম আলী মোল্লা। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজউকের পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জের কামতা মৌজায় জমি হুকুমদখল করে সরকার। পরে জমির মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ওই সময় থেকে পরবর্তী কয়েক বছর ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়ায় রাজউক ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ওই মৌজায় বাস্তবের চেয়ে বেশি গাছপালা দেখান। পাশাপাশি গাছের দাম বেশি দেখানো এবং সরকারি খাসজমিতে থাকা গাছ ব্যক্তিমালিকানায় দেখিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেন। গ্রেফতার হওয়া দুই প্রকৌশলীর মধ্যে ছাইদুর রহমান ওই সময় রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী ও মনোয়ারুল ইসলাম উপসহকারী প্রকৌশলী ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজউকে অচলাবস্থা

৩১ আগস্ট, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ