পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্প্রতি কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলের আল জাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন নজরদারি করার প্রযুক্তি ইসরাইল থেকে আমদানি করেছে। প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বলেছিল, শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরি থেকে সিগন্যাল সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। সেখানে কোন নজরদারি সরঞ্জাম কেনা হয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, আল জাজিরার তথ্যচিত্রে যেসব ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশের সৈন্যদলে সেরকম কোন সরঞ্জাম নেই। জাতিসংঘের প্রতিনিধি বলেছেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো তদন্ত করা উচিত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ সাতটি মানবাধিকার সংস্থার একটি বিবৃতিতে বলেছে, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে যেসব অভিযোগ এসেছে, তাতে তারা উদ্বিগ্ন। তারা জাতিসংঘকে এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনটি ‘উদ্দেশ্যমূলক’ এবং ‘ভিত্তিহীন’ বলে তারা মনে করেন। তাই প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে তদন্তের কোন প্রয়োজন দেখছে না বাংলাদেশ সরকার।
প্রতিবেদনটিতে মূলত সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ আহমেদের ভাইদের কিছু কর্মকাণ্ড তুলে ধরে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। জেনারেল আহমেদ এখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ অধিদপ্তর আইএসপিআর শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও তার আলোচনার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় নজরদারি সরঞ্জাম সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ইউনিফর্মধারীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী। আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেসব ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তার কথা জাতিসংঘের কোন চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশ সৈন্যদলে এ ধরনের সরঞ্জামও রাখা হয়নি।
ইন্টারনেট বা ফোনে আড়িপাতার বিষয়ে তিনি বলেছেন, শান্তিরক্ষা মিশনে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা নীতি অনুসরণ করতে হয়। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনে, জাতিসংঘ সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করতে কোথাও যোগাযোগের জন্য আড়িপাতা হয়। আর এই সক্ষমতা অনুসরণ করা হয় জাতিসংঘের গোয়েন্দা নীতি কঠোর অনুসরণ করে এবং বাহিনী কমান্ডারের মিশন কর্তৃত্বের আওতায়।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেসব দুর্নীতির বিষয় এসেছে, সে প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন এসেছে, সে সম্পর্কে তারা অবগত আছেন। সেই প্রতিবেদনের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা দপ্তরের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কেও তারা অবগত। মুখপাত্র বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগগুলো একটি গুরুতর বিষয়। এই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত।
শনিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন একটি অনুষ্ঠানে আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পাবলিক বুঝেছে যে এটা মিথ্যা তথ্য। তারা তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। সেখানে যেসব তথ্যগত ভুল আছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরবো। আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এই বিষয়ে বিবিসি বাংলার কথা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেছেন যে, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নজরদারি সরঞ্জাম কেনার যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং অসত্য তথ্য বলে তারা মনে করছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন ধরনের সম্পর্কই নেই। সেখানে ইসরাইল থেকে এ ধরনের কোন সরঞ্জাম কেনা হয়নি। এসব তথ্য কোন উদ্দেশ্যে থেকে দেয়া হয়েছে কিনা, সেটাই তারা মনে করছেন।
আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনটি প্রচারের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল যে, কোন নজরদারি সরঞ্জাম কেনা হয়নি। কিন্তু হাঙ্গেরি থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ব্যবহারের জন্য সিগন্যাল সরঞ্জামাদি কেনা হয়েছিল, যেটা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত কোন কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই বলেই তারা মনে করছেন। সরকার মনে করছে, কোন উদ্দেশ্যে থেকে এমন প্রতিবেদন করা হয়ে থাকতে পারে। সেজন্য সরকার এই প্রতিবেদনে যেসব তথ্য বা অভিযোগ এসেছে, সেগুলো তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করছে না। বরং প্রতিবেদনের ব্যাপারে আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি কোন পদক্ষেপ বা মামলা করা যায় কিনা, সেই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই রকমের ধারণা দেয়া হয়েছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্য থেকেই এটা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন যেহেতু ভিত্তিহীন বলে আমরা মনে করছি, তাই এটা তদন্তের কোন প্রয়োজন নেই।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।