Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন কৌশলে জাপান টোব্যাকো

বাড়তি সুবিধার প্রশ্ন ওঠায় এবার অর্থমন্ত্রীকে অন্য বিনিয়োগ নিয়ে হুঁশিয়ারি রাষ্ট্রদূতের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

সরকারের উদারনীতি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই)। এমনকি আইনি সীমার প্রায় ১৪ গুণ বেশি অর্থ কারিগরি ফি হিসেবে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ নিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর অন্য কৌশল অবলম্বন করেছে জেটিআই। ১৯ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইটো নাওকি একটি চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠিতে জেটিআই’র বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে এর উপরে জাপানের নতুন বিনিয়োগ নির্ভর করছে বলে হুমকিও দেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। একই সঙ্গে জাপানি বিনিয়োগকারীরা জেটিআই’র বিনিয়োগ সফলতাকে পর্যবেক্ষণ করছে অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। আর তাই জেটিআই’র বিনিয়োগের মাধ্যমে নানাবিধ সুবিধা নিতে এক্ষেত্রে যে সব প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করার তাগিদ দেন রাষ্ট্রদূত।

অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে। জেটিআই স্বাভাবিকভাবে সেগুলো পেয়েছে। এরপরও বড় অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ এনেছে বলে জেটিআই একের পর এক সুবিধা আদায়ে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করছে। জেটিআই এমন কিছু সুবিধা চাইছে যা দেয়া হলে দেশের মানুষ ধূমপানে উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এত বেশি কারিগরি ফি’র প্রস্তাব অস্বাভাবিক। সাধারণত এমন দেখা যায় না। এছাড়াও আইনি সীমার প্রায় ১৪ গুণ বেশি অর্থ কারিগরি ফি হিসেবে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষেশজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিংয়ের সম্ভাবনাও থাকতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে লেখা এক চিঠিতে তামাক কোম্পানি জেটিআইকে কিছু সুবিধা দেয়ার জন্য তদবির করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সিগারেটের ওপর যে পদ্ধতিতে কর বাড়ানো হয়েছে, তাতে জেটিআই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেননা কোম্পানিটি মাঝারি সেগমেন্টের সিগারেটের ওপর বেশি নির্ভরশীল এবং এই সেগমেন্টের ওপর বেশি হারে কর বেড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাপান দূতাবাস এই নীতি প্রত্যাহার চায়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে জেটিআই সুগন্ধিযুক্ত ক্যাপসুল সংযুক্ত নিম্ন সেগমেন্টের সিগারেটের একটি ব্রান্ড বাজারে আনে। এনবিআর এ ধরণের সিগারেটের বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং মাঝারি সেগমেন্টের নিচে এ ধরণের সিগারেট বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে এসআরও জারি করে।

যদিও নিম্ন সেগমেন্টের ফ্লেভারের সিগারেটের কিশোর ও তরুণদেরকে ধূমপানে তুলনামূলক বেশি উৎসাহিত করে বলে তামাক বিরোধী প্রচারণায় বলা হয়। আর কম দামের সিগারেটে এ ধরণের অনুমোদন দিলে ধূমপানের প্রতি কিশোর-তরুণসহ নিম্ন আয়ের মানুষের আকর্ষণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জানতে চাইলে এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এন্টি স্মোকিং চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। আমাদের দেশের মানুষেরা নিম্ন মধ্যবিত্ত বেশি। তাই নিম্নমানের সিগারেটের ওপরে আঘাত হানতে হবে আগে। তিনি বলেন, জাপান সরকার স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক সচেতন। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের ক্ষতিকারক পণ্যের বিষয়ে কেন এ ধরণের চিঠি বুঝতে পারছি না। এদিকে জাপানের রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেটিআইকে বিদেশে উৎপাদিত সিগারেট আমদানির অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছে।

যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে বড় অঙ্কেরর বিনিয়োগের করার কথা বলে জেটিআই একদিকে নিত্য নতুন সুবিধা নিচ্ছে, আবার বিদেশ থেকে সিগারেট আমদানি করতে চাইছে। যা পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এর আগে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ কোম্পানিকে এমন কিছু সুবিধা দিয়েছে, যা সচরাচর দেখা যায় না। সাধারণত মূল কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শূন্য বা অনেক কম সুদে ঋণ নেয়। জাপান টোব্যাকোকে ৫ শতাংশ সুদে মূল কোম্পানি থেকে ঋণ নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে বিডা। বিস্ময়কর তথ্য হলো, কারিগরি জ্ঞান নেয়ার (টেকনিক্যাল নো হাউ) ফি হিসেবে সিঙ্গাপুরে অস্বাভাবিক হারে অর্থ পাঠানোর প্রস্তাব করেছে কোম্পানিটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপান-টোব্যাকো

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ