পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল বাতি আছে। কিন্তু সেগুলো জ্বালে না। আবার যেগুলো জ্বলে সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। পেছনে বাতি জ্বলেও সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন ট্রাফিক পুলিশ। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য গত এক দশকে বেশ কয়েকবার স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বরং প্রকল্পের নামে ব্যয় বেড়েছে। কোটি কোটি টাকা গচ্চা গেছে। সর্বশেষ প্রায় ৫২ কোটি টাকা খরচ করে ঢাকার চারটি ইন্টারসেকশনে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এজন্য মহাখালী, গুলশান-১, পল্টন ও ফুলবাড়িয়া ইন্টারসেকশন নতুন করে গড়ে তোলা হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা, ভেহিকল ও ইমেজ ডিটেক্টর, সিগন্যাল বাতি লাগানো হয়। জাপান থেকে আসে আইটিএস সফটওয়্যার সংবলিত দুটি বিশেষ কম্পিউটার। কিন্তু স্থাপনের আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি গোডাউন থেকে চুরি হয়ে গেছে সেগুলো। এতে অন্য সব কাজ শেষ হলেও শুধু সফটওয়্যারের অভাবে অলস পড়ে আছে চার ইন্টারসেকশনে স্থাপন করা আইটিএস প্রকল্পের সরঞ্জামাদি।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ব্যাপক হারে সিগন্যাল বাতি স্থাপন শুরু হয় চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকার অন্তত ৭০টি ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক বছরও টেকেনি এসব বাতি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আরেক দফায় বসানো হয় সিগন্যাল বাতি।
কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেনা হয় রিমোর্ট কন্ট্রোল সিস্টেম। ২০১৫ সালে বনানী থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত ১১ পয়েন্টে আলাদা করে বসানো হয় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি। ২০১৯ সালে আসাদ এভিনিউয়ে পথচারী পারাপারের জন্য বেশ ঘটা করে পুশ বাটন উদ্বোধন করেন তৎকালীন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র। এভাবে দুই দশকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও সিগন্যাল বাতিতে নয়, ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পুলিশের হাতের ইশারায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ঢাকার চারটি ইন্টারসেকশনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিস্টেম বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ডিটিসিএ।
জানা গেছে, ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে চার ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলকভাবে আইটিএস স্থাপনের কাজটি বাস্তবায়ন করছে ডিটিসিএ। প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি টাকা। দুই দফায় বাড়িয়ে যা এখন ৫২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে কাজ শেষ করার মেয়াদ নেয়া হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পে ডিটিসিএ শুধু ইন্টারসেকশনগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। আর আইটিএসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে জাইকা। এ কারণে চুরি হওয়া আইটিএস সফটওয়্যারের দাম কত, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি ডিটিসিএর কর্মকর্তারা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, জাপান যেসব প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করে, সেগুলো গুণগত মানে বেশ ভালো। দামও বেশি হয়। আইটিএস সফটওয়্যার সংবলিত কম্পিউটারগুলোর দাম উচ্চক্ষমতার একটি সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই হয়তো এগুলো চুরি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। সফটওয়্যার চুরি হওয়ার ঘটনায় এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিটিসিএ। পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও (ডিবি) তা তদন্ত করছে। আইটিএস প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে নতুন করে সফটওয়্যার কেনার উদ্যোগও নিয়েছে ডিটিসিএ।
জানা গেছে, জাপান থেকে আইটিএস প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসে ২০১৯ সালে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করার পর সেগুলো ডিএসসিসির একটি গোডাউনে রাখা হয়। এসব সরঞ্জামের একটি প্যাকেটে দুটি অত্যাধুনিক কম্পিউটারসহ আইটিএস সফটওয়্যার রাখা ছিল। প্যাকেটের গায়ে ছিল জাইকার কোড। প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত জাপানের প্রকৌশলীদের প্যাকেটটি খোলার কথা ছিল।
চার ইন্টারসেকশনে আইটিএসের ‘ট্রায়াল’ ও ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ কাজ করার জন্য ২০১৯ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসে জাপানের একটি বিশেষজ্ঞ দল। গত বছরের জানুয়ারি থেকে তারা কাজ করেন। কথা ছিল দ্রæতই তারা আইটিএসের ওপর মোট ছয়টি অ্যাকশন প্ল্যান, গাইডলাইন ও ম্যানুয়াল ডিটিসিএর কাছে হস্তান্তর করবেন। পরে সিস্টেমটি ডিটিসিএ হস্তান্তর করবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে। তখনই প্রয়োজন হয় গোডাউনে রাখা আইটিএস সফটওয়্যার ও বিশেষায়িত কম্পিউটারগুলো। তবে গোডাউনে গিয়ে সেগুলো আর খুঁজে পাননি ডিটিসিএর কর্মকর্তারা। সফটওয়্যার চুরি হয়ে যাওয়ায় আলোর মুখ দেখছে না এ প্রকল্প। ডিটিসিএ নতুন করে সফটওয়্যার কেনার উদ্যোগ নিলেও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ব্যবস্থাও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না। তাদের ভাষ্য, সিগন্যাল বাতিতে অপচয়ের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে আইটিএস প্রকল্প।
এদিকে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রকল্পটির ওপর সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব দেন। এর কারণ হিসেবে নতুন সার্ভার কম্পিউটার ক্রয় ও স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয়ের কথা তুলে ধরা হয়। প্রকল্প পরিচালক জানান, এসব কাজে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এজন্য প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। অন্য কয়েকটি খাতের সঙ্গে এ ব্যয় সমন্বয় করে নেয়া হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, সড়ক নির্মাণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন ও প্রচারণা এবং বিজ্ঞাপন খাত থেকে এ টাকা সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি চলমান মেট্রোরেলের কাজের জন্য পল্টন ইন্টারসেকশনে আইটিএস স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে না। এতে এখানেও কিছু টাকা বেঁচে যাবে। এসব খাত থেকে নতুন করে সার্ভার কম্পিউটার ক্রয় ও সেটি স্থাপনের কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের শুরুতেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সফটওয়্যার গোডাউন থেকে খুঁজে না পাওয়ায় কাজ এখনো আটকে আছে। আমরা নতুন করে সফটওয়ার আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, নতুন করে সফটওয়্যার কিনতে গিয়ে খুব একটা ব্যয় বাড়বে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।