Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরবানীর ঈদেও গরু দিচ্ছে না ভারত

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : আর কিছুদিন পর কোরবানীর ঈদ, পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানী উপলক্ষে বেশ কয়েক বছর যাবত সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় গরু আসার হিড়িক পড়লেও এবার আর গরু দিচ্ছে না ভারত। সরকারিভাবে বাংলাদেশে গরু দেয়া বন্ধের ঘোষণার পর ভারত থেকে গরু আসা একেবারেই কমে গেছে। এক সময় সাতক্ষীরা সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার গরু এদেশে আসলেও এখন তা কমে প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ফলে কোরবানী ঈদের গরুর বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গরু কম আসায় ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে গোশতের দাম ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাতক্ষীরার বৈকারী, কুশখালী, তলুইগাছা, কাকডাঙ্গা, ঘোনা, গাজীপুর, ভোমরা, ভাতশালা, মাদরা, হিজলদী, চান্দুড়িয়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এক সময় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার ভারতীয় সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, হরিয়ানা, নেপালী, সম্বলপুরিসহ বিভিন্ন জাতের গরু বাংলাদেশে আসতো। এসব গরু অবৈধ পথে এসে ৩৮ বিজিবির আওতায় সদরের ভোমরা, গাজীপুর, ঘোনা, বৈকারী ও কুশখালী ৫ টি এবং ৩৪ বিজিবির আওতায় ৩ টি বৈধ গরুর খাটালে রাখা হতো। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কিনে করিডোরের মাধ্যমে ৫০০ টাকা করে রাজস্ব দিয়ে তা বৈধ করেন। এরপরে ওই সিøপ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এসব গরু নিয়ে যাওয়া হতো রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখনো এসমস্ত খাটালে অল্প সংখ্যক যে গরু আসে সেগুলোও একই ভাবে দেশের ওই সব স্থানে বিক্রি করা হয়।
দেশের মানুষের মাংশের চাহিদা মেটায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতের এসব গরু দিয়ে। কিন্তু ভারত সরকার এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে গরু দেয়া বন্ধ করে দেয়ায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গত একবছর যাবত আশংকাজনক হারে কমে গেছে।
সাতক্ষীরা বিজিবি সুত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-৩৮ বিজিবির অধীনে ১৩ টি এবং ৩৪ বিজিবি নীলডুমুর অধীনে ১৬টি বিওপির অধীনে ৪ টি গবাদি পশু শুল্ক করিডোরের মাধ্যমে ৫০০ টাকা রাজস্ব নিয়ে সরকার এসব গরুর বৈধতা দিয়ে থাকেন।
সাতক্ষীরা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের তথ্য মতে, সাতক্ষীরার চারটি করিডোরের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু এসেছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৯৪ টি গরু করিডোর হয়েছে। তার বিপরিতে সরকার ৩৭ কোটি ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে তা কমে আসে ৭৬ হাজার ৬৭০ টিতে। এর বিপরিতে সরকার রাজস্ব পায় ৩ কোটি ৬১লাখ ২০ হাজার ৪৩০ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের গত জুলাই মাসে চারটি করিডোরের আওতায় গরু এসেছে মাত্র ৩হাজার ৮২০ টি। এর বিপরীতে সরকার আয় করেছে মাত্র ১৯ লাখ ২হাজার ৮০০টাকা।
দেবহাটার ভাতশালা এলাকার কয়েকজন গরু ব্যবসায়ি জানিয়েছেন, ভারতে সরকারিভাবে সিদ্ধান্তের পর সীমান্তে বিএসএফ’র কড়াকড়ি এবং পাহারা বেড়ে গেছে। যে কারনে গরু আসছে না বললেই চলে। ইদানিং কিছু মহিষ আসছে বলে তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন রাখাল বলেন, যখন স্বাভাবিক ছিল তখন প্রতিদিন গরু আসতো ২ থেকে ৩ হাজার। আমরা একেক জন রাখাল প্রতিদিন ২/৩ হাজার টাকা আয় করতাম। কিন্তু গরু না আসায় এখন আর আয় রোজগার হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গরু রাখাল জানান, বাংলাদেশে যাতে গরু না আসতে পারে সেজন্য পশ্চিম বাংলার বিজেপি দলের নেতা-কর্মীরা সীমান্তের একাধিক জায়গায় নজরদারি করছে। এমনকি তৃণমুল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা যাতে গরু দিতে সহায়তা না করতে পারে সেজন্য বিজেপি’র পক্ষ থেকে স্থাণীয় প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে কোরবানির সময় যাতে গরু জবাই বেশি না হয় সেজন্যও বিজেপি চাপ দিচ্ছে।
গরু রাখালরা আরো জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে গরু আনতে চাইলেও বিজিবি সদস্যরা তাতে বাঁধ সাধছে। তাই, এবারের কোরবানী ঈদে ভারতীয় গরু না আসার সম্ভাবনাই বেশি। দেশীয় গরু দিয়ে এবার কোরবানী দাতাদের কোরবানী দিতে হবে। সীমান্তবর্তী এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, গত দু’বছর যাবত কোনো গরু আসছে না বললেই চলে। এখানকার ব্যবসায়ি ও রাখালরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সাতক্ষীরা কাস্টমস এক্সাসাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারি কমিশনার মশিয়ার রহমান মন্ডল বলেন, গরু আসার বিষয়টি ভরতের নিজস্ব বিষয়। যখন যে পরিমান গরু আসে তখন সেই পরিমান গরুর করিডোর করা হয়। গরু কম বা বেশী আসার বিষয়টি রাষ্ট্রিয় সিদ্ধান্তের বিষয় আমাদের নয়।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ভারত থেকে গরু না আসার ফলে দেশীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তারা গরুর দাম বেশী পাচ্ছেন। এবার সাতক্ষীরায় গরুর খামারীরা যে পরিমান গরু পালন করছেন, তাতে ঈদে গরুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানীর ঈদেও গরু দিচ্ছে না ভারত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ