Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব

ঝটিকা সফরে ঢাকা এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করতেই গুলশানে হামলা : সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা দেয়া হবে : উন্নয়নে অগ্রগতি অসামান্য


আহমদ আতিক : গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব। বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই গুলশানে হামলা চালানো হয়েছিল। গতকাল সোমবার বিকেলে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত ইএমকে সেন্টারে নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতে এমন মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকা উচিত। এছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাবের পুনরুল্লেখ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনন্য সাধারণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দুপুরে এক বৈঠক শেষে জন কেরি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
জন কেরি ঝটিকা সফরে জেনেভা থেকে বিশেষ বিমানে করে গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকায় এসে নামেন। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। পরে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে জন কেরি রাজধানীর হোটেল রেডিসনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কেরি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন কেরি। এরপর বিকেলে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তারপর বৈঠক করেন জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে। বিকেলে মার্কিন দূতাবাসে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। সকাল-সন্ধ্যার এই সফর শেষে সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে বিশেষ বিমানে করে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পরিদর্শন বইতে যা লিখলেন কেরি
সকালে ঢাকায় নেমে প্রথম কর্মসূচীতে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনে যান জন কেরি। এ সময় দর্শনার্থী বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে জন কেরি লিখেছেন, একটি সহিংস ও কাপুরুষোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে সাহসী ও উজ্জ্বল এক নেতৃত্বকে কেড়ে নেয়া হয়। তবে এখন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে তারই কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার সেই স্বপ্ন পূরণে বন্ধু হতে পেতে গর্বিত এবং তার সেই স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় সমর্থক। আমরা এখন এ সম্পর্ককে শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই, বলে লিখেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রায় ৪০ মিনিট জন কেরি সেখানে অবস্থান করে জাদুঘর ঘুরে দেখেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেরিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও রেদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববি। কেরির সঙ্গে ছিলেন তার সফরসঙ্গীরাও।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরাও লড়াই করতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং এই বিশেষজ্ঞদের প্রদানের মাধ্যমেও আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারি। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
প্রেস সচিব জানান, প্রায় এক ঘণ্টাকাল দুই নেতার মধ্যে আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জন কেরি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে কেরি বলেন, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে চমকপ্রদ অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে আমাদেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। এছাড়া বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান আইএস বিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে কেরি বলেন, আইএসকে এই অঞ্চলে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে এবং আক্রমণের মুখে বহু আইএস যোদ্ধাই এখন নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
আইএস সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-অর্থ কোথায় পায়- প্রধানমন্ত্রী এমন প্রশ্ন করলে জন কেরি বলেন, তাদের দখলে থাকা তেলক্ষেত্র থেকে তেল বিক্রি করে এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি করে। সন্ত্রাসে যুক্ত হওয়া তরুণদের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বিত্তবান পরিবারের সন্তানরাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটা আর্শ্চযজনক। তাদের সবকিছু থাকার পরও বাবা-মা ঠিকমতো সময় না দেয়ায় তারা এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জন কেরি বলেন, বাবা-মায়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন ছেলেমেয়েরা প্রচুর সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেমস খেলে।
বৈঠকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফেরত দেয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আপনার কষ্ট বুঝি। এ বিষয়টি পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আহ্বান করেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ডিউটি ও কোটামুক্ত প্রবেশের সুযোগ চান। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছে, জনগণ সহযোগিতা করছে। ধর্মীয় নেতারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করছেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড.গওহর রিজভী, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির সঙ্গে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
কেরির টুইটে বাংলাদেশকে নিয়ে উচ্ছ্বাস
ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। গতকাল দুটি পৃথক টুইটে কেরি এ প্রশংসা করেন। একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে জন কেরি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির ইতিহাস রয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত।’
এ টুইটের কয়েক মিনিট পরে কেরি আরেকটি টুইট করেন। এ টুইটে তিনি সফরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কথা তুলে ধরেন। তিনি লিখেছেন, ‘নিরাপত্তা ইস্যু ও চরমপন্থী সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় সহযোগিতা নিয়ে আজ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।’
পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে দেড়টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বৈঠক দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এতে ১০ সদস্যের ২টি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। পদ্মায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। পরে কেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরো বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্সের প্রশংসা করেছেন।
জঙ্গিবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নেবেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি জানান, এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। বলার মতো এখনও কিছু হয়নি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ক্রমশ প্রকাশ্য হবে। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমরা জন কেরিকে রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিরে বিষয়টি দেখবেন।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো সব কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় নাকি? আলোচনা চলছে, আরও চলবে, ধন্যবাদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদিও ১৯৭১ সালে তাদের দেশে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন, তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশের পক্ষেই ছিলেন। অনেক রাজনীতিবিদ ও সিনেটরও বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন। জন কেরি তখন সিনেটর ছিলেন না, কিন্তু তিনি সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাবশিষ্য ছিলেন। কেনেডি ছিলেন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি সে কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিবেন। সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিবেন, সে নিয়ে কথা বলেছেন কেরি।
বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমাদের প্রায়োরিটি কি তা কেরি জানতে চেয়েছেন। আমরা ডিউটি এবং কোটা ফ্রি সুবিধার কথা বলেছি।
ইএমকে সেন্টারে বক্তৃতা
পরে বিকালে ধানমন্ডির এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার)-এ জন কেরি তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এডওয়ার্ড কেনেডি ম্যাসাচুসেটস-এর অধিবাসী ছিলেন, জন কেরিও সেই অঞ্চলের লোক। ফলে কেনেডির টানে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত ইএমকে সেন্টারে বক্তৃতা করেন কেরি।
সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা এদেশেরই কিন্তু তাদের সঙ্গে বিদেশি সন্ত্রাসীদের বা আইএসের যোগাযোগ থাকতে পারে। তাদের কাছে প্রমাণ আছে ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে বিশ্বের ৮টি এনটিটির যোগাযোগ রয়েছে এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াও রয়েছে বলে জানান কেরি।
বিশ্বব্যাপী যেসব জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আইএসএ’র যোগাযোগ রয়েছে এবং এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াও রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রমাণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কেরি। বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করতে গুলশান হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গণতন্ত্র চর্চার মধ্যে সন্ত্রাস মোকাবেলা সম্ভব, পোশাক শ্রমিকের নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার থাকা উচিত বলে জানান তিনি।
রওশন-কেরির বৈঠক
ধানমন্ডির অ্যাডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জন কেরি। গতকাল বিকেলে তাদের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হতে পারে। তিনি কেরিকে মার্কিন বাজারে জিএসপি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। রওশনকে আশ্বাস দিয়ে জন কেরি বলেন, এ বিষয়ে মার্কিন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিকেল সাড়ে ৪টায় মার্কিন দূতাবাসে জন কেরির সাথে বৈঠক করেন।
দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ
বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ বিষয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তানজিনা আক্তার বলেন, জন কেরি ৫টা ৪০ মিনিটে বিমানে উঠেন। আর ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি ঢাকা ছেড়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশে জন কেরির সফরের তাৎপর্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার এবং রাজনীতির অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, যেহেতু জন কেরি ভারত সফরে যাবেন এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত স্ট্র্যাটেজিক ডায়লগে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টা ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সেখানে আলোচনার আগে মি: কেরি বাংলাদেশের কাছ থেকেও পটভূমিটা বুঝতে চাইবেন বলে আমার ধারণা।
তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খানিকটা আপত্তি রয়েছে। তবে সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে আলী রিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে ‘কাউন্টার টেরোরিজম পার্টনারশিপ ফান্ড’ সেটাতে বাংলাদেশ এ বছর যুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, জন কেরি’র জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার শহরে। তার পিতা রিচার্ড জন কেরি ছিলেন আইনজীবী ও মার্কিন ফরেন সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। মা রোজমেরি ইসাবেল ফোর্বস ছিলেন একজন নার্স ও সমাজকর্মী। জন কেরির পূর্বপুরুষরা ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য। পরে তার দাদা ধর্মান্তরিত হয়ে খ্র্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। তার বাবা রিচার্ড জন কেরি একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান হিসেবেই বেড়ে উঠেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • মাসুদ ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১:১৮ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র !
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪২ পিএম says : 0
    এটা বুঝলে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিন
    Total Reply(0) Reply
  • আজাদ ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪৪ পিএম says : 1
    সন্ত্রাস মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ