Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংসদে সংখ্যালঘুদের আসন সংরক্ষণ : যুক্ত নির্বাচন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হিন্দু জনসংখ্যা সম্পর্কে এরশাদের মারাত্মক তথ্যগত ভ্রান্তি


মোবায়েদুর রহমান : সাবেক প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি বলেছেন, আমাদের সময় (অর্থাৎ তার ৯ বছরের শাসনামলে) মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ হিন্দু ছিল। এখন তা ৯ ভাগে পৌঁছেছে, যা দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রশাসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০ জন সচিব এবং ১৮ জন এসপি রয়েছেন। এরা আমার শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত। গত বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ বলেন, জাতীয় সংসদে মহিলাদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের পাশাপাশি সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ৩০টি আসন দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও হিন্দুদের জন্য তিনি কোটা ব্যবস্থার দাবি জানান। অনুষ্ঠানে হিন্দু সংস্কার সমিতির সহসভাপতি হিমাদ্রী শেখর রায় আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে হিন্দু প্রার্থী দেওয়ার দাবি করেন। এর জবাবে এরশাদ বলেন, ‘১০০ আসনে হিন্দুদের প্রার্থী করার কথায় আমি খুবই খুশি হয়েছি।
১০০ প্রার্থী যদি ভালো থাকে, আমি ১০০ প্রার্থী আপনাদের মধ্য থেকে দেব।’
হিন্দু জনসংখ্যা সম্পর্কে তথ্যগত ভ্রান্তি
হিন্দু সমাজের কাছে তাদের সংখ্যা সম্পর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তাতে রয়েছে মারাত্মক তথ্যগত ভ্রান্তি। তিনি বলেছেন, তার আমলে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। এখন সেটি ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এই হ্রাসকে তিনি দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। দুঃখের বিষয়, জেনারেল এরশাদ যা বলেছেন, সরকারি পরিসংখ্যানের সাথে তার কোনো মিল নাই। তিনি ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবল গণআন্দোলনের চাপে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১২.১৩ শতাংশ, এরশাদের কথিত ২০ শতাংশ নয়। ১৯৯১ সালে, যখন তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, তখন সেটি নেমে আসে ১০.৫১ শতাংশে, এরশাদের কথিত ৯ শতাংশে নয়। এরশাদের কথিত ২০ শতাংশ এবং বাস্তবের ১২.১৩ শতাংশের মধ্যে ৭.৮৭ শতাংশ ফারাক রয়েছে, যেটি একটি বিরাট ফারাক। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য নিচের টেবিলে দেওয়া হলো।
১৯৪৭ সাল থেকে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা
সাল শতাংশ
১৯৪৭ ২৮%
১৯৫১ (দেশ বিভাগের পর) ২২%
১৯৬১ ১৮.৫%
১৯৭৪ (স্বাধীনতার পর) ১৩.৫%
১৯৮১ ১২.১৩%
১৯৯১ ১০.০৫%
২০০১ ৯.৩৭%
২০১১ ৮.৬৫%
২০১৪ ৯.৯% (বৃদ্ধি ১.২৫%)
২০১৫ ১০.৭%(বৃদ্ধি ০.৮০%)
ওপরের টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৫ এই দুই বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ২.০৫%। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মোতাবেক এই দুই বছরে বাংলাদেশের হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ লক্ষ। সাধারণত ১০ বছর পরপর আদম শুমারি করা হয়। বিবিএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৮৯ লাখ। সেই হিসাবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৮ লাখ। এ হিসাব অনুযায়ী তখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ। এর মানে, ২ বছরের ব্যবধানে হিন্দু জনগোষ্ঠী বেড়েছে ১৫ লাখ।
সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য
আসন সংরক্ষণ
সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ হিন্দুদের ওই সমাবেশে আরো বলেছেন, জাতীয় সংসদে হিন্দুদের জন্য অন্তত ৩০টি আসন সংরক্ষণ করা হবে। পক্ষান্তরে হিন্দু সংস্কার সমিতির সহসভাপতি হিমাদ্রী শেখর রায় আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে হিন্দু প্রার্থী দেওয়ার দাবি করেন। এর জবাবে এরশাদ বলেন, ‘১০০ আসনে হিন্দুদের প্রার্থী করার কথায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। ১০০ প্রার্থী যদি ভালো থাকে, আমি ১০০ প্রার্থী আপনাদের মধ্য থেকে দেব।’
যুক্ত নির্বাচন ও অসাম্প্রদায়িক
চেতনার বিরোধী
সংসদে ধর্মীয় ভিত্তিতে আসন সংরক্ষণের দাবি যুক্ত নির্বাচন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। পাকিস্তান কায়েমের পর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রথমে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে এবং পরে দেশবাসীর কাছে পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি বিলুপ্ত করে যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতির সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের এই সুপারিশ গৃহীত হয় এবং সেই ভিত্তিতেই ১৯৭০ সালে নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিক পাকিস্তানের একমাত্র সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলো যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে অন্তত রাজনীতি এবং ভোটের ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ অনেকাংশে কমে গেছে।
এরশাদের বক্তব্য সাম্প্রদায়িক
বিভাজনকে উস্কে দেবে
এত দিন পর হিন্দুদের জন্য জাতীয় পরিষদে ৩০টি আসন সংরক্ষণের জন্য এরশাদ যে ওয়াদা করেছেন সেটি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে আরো তীব্র করবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে। কারণ এরশাদ হিন্দুদের ৩০টি আসন দিতে চেয়েছিলেন বলেই হিন্দুদের এক প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে ১০০টি আসন দাবি করেছেন। হিন্দু ভাইয়েরা এখনো জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ, ৩৩ শতাংশ নন।



 

Show all comments
  • রিপন ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১০:২৩ এএম says : 0
    ১০০ কেন অর্ধেক দাবি করেন
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১০:২৩ এএম says : 0
    এমনিতেই বাংলাদেশে হিন্দুরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১:৫৫ পিএম says : 0
    হিন্দু সংস্কার সমিতির সহসভাপতি হিমাদ্রী শেখরের কাছে প্রশ্ন: ভারতে মুসলমানদের শতকরা কত ভাগ আসন দেয়া হয় ?
    Total Reply(0) Reply
  • Kushal Ghosal ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৭ পিএম says : 0
    একজন ভারতীয় হিন্দু হিসেবে বলছি হিন্দু দের জন্য বাংলাদেশের সংসদে আলাদা আসন সংরক্ষণ ঠিক নয়। ভয়মুক্ত পরিবেশে সঠিক লোককে ভোট দেওয়া উচিত। সে যদি জামাত ইসলামের ও হোক তাতে ক্ষতি কি? বাংলাদেশের যে মঙ্গল করবে তাঁদেরই জেতাতে হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলিম কখনও কোনো মানুষের ক্ষতি করে না , যারা কোরান হদিস মানে না, অশিক্ষিত মূর্খ তারাই এইসব করে। হিন্দু, মুসলিম হাতে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নতি করতে হবে। তাদের ভাবতে হবে যে তারা আরবের মাটি তে কবরে যাবে না বা ভারতের শ্মশানে পুড়বে না। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে ও বাংলাদেশের উন্নতি করতে হবে। পৃথিবীর প্রথম সারির দেশ বানাতে হবে। সকল ধর্মকে ও সকল ভাষাকে সমমর্যাদা দিতে হবে ও সংসদে যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংসদে সংখ্যালঘুদের আসন সংরক্ষণ : যুক্ত নির্বাচন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ