পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী নিহত সুরাইয়া আক্তার রিশার মা তানিয়া হোসেন ও বাবা রমজান হেসেনের কান্না যেন থামছিল না। শিক্ষামন্ত্রীকে দেখে তার সামনে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদলেন মা তানিয়া। মেয়ে হারানোর শোকে কাতর তানিয়া তার মেয়ের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিক্ষামন্ত্রী উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে পৌঁছালে নিহত সুরাইয়ার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুরাইয়ার সহপাঠীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় এবং তারা মন্ত্রীর কাছে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ খুব দ্রুত খুনিকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে পুলিশের কর্মকর্তারাও খুনিদের গ্রেফতার করার অঙ্গীকার করেন। তারপরেই আলটিমেটাম প্রত্যাহার করে নেয় রিশা হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার (১৪) সন্দেহভাজন খুনি ওবায়দুলকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করবে। এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপাতত রাজপথে আন্দোলন না করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড় অবরোধ করে রিশার হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করায় আশপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা কাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে। এ সময়ের মধ্যে খুনি গ্রেফতার না হলে আবার আন্দোলন শুরু হবে।
বেলা দেড়টার দিকে রমনা বিভাগের পুলিশের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান ঘটনাস্থলে আসেন। শিক্ষার্থীদের তিনি সড়কে আন্দোলন না করার আহ্বান জানান। শিবলী নোমান বলেন, তাদের কাছে কেবল খুনি ওবায়দুলের নাম ছিল। এখন তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা এবং ছবি পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
বেলা দুইটার দিকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলনই করুক না কেন, গণজাগরণ মঞ্চ সেই আন্দোলনে কর্মী হিসেবে পাশে থাকবে।
গতকাল সোমবার সকালে স্কুলের মিলনায়তনে রিশার মৃত্যুতে শোকসভা হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বক্তব্য দেন। তারা হত্যাকারীকে গ্রেফতার করার ও শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।
শোকসভায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, হত্যাকারীকে গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হত্যাকারীকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস আর কেউ না পায়।
শোকসভায় উপস্থিত নিহত সুরাইয়ার মা তানিয়া হোসেন ও বাবা মো. রমজান হোসেনকে সান্ত¦না দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের নৃশংস হত্যাকা-ে নিহত ছাত্রীর মা-বাবা ও পরিবার-পরিজনদের সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনাদের এ শোক সহ্য করার ক্ষমতা দেন।
শোকসভায় নিহত সুরাইয়ার বাবা রমজান হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহী রহমানও বক্তব্য দেন। শোকসভায় সুরাইয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন জানান, নিহত ছাত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আইসিটি ল্যাবের নাম সুরাইয়া আক্তারের নামে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ছয় দিন আগে, গত বুধবার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের সামনের পথচারী-সেতু পেরিয়ে নিচে নামছিল রিশা। সেখানেই স্কুলের পোশাক পরা রিশাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তারপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আনা হয়। গতকাল রোববার রিশা মারা যায়।
মাস ছয়েক আগে স্কুলের ড্রেস বানাতে মায়ের সঙ্গে দরজির কাছে গিয়েছিল রিশা। সেই দরজি ফোন নম্বর পেয়ে তাকে উত্ত্যক্ত করত এবং পিছু নিত। মৃত্যুর আগে রিশা বলে গেছে, ওই দরজি ওবায়দুলই ছুরি মেরেছে তাকে। পুলিশকেও সে এই জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, রিশা গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে জবানবন্দিতে বলেছে, বখাটে ওবায়দুল তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেছে। হামলার আগের দিনও সে তার পিছু নিয়েছিল।
রিশার হত্যাকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারে লিগ্যাল নোটিশ
স্কুলছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলার আসামি ওবায়দুল খানসহ জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। গতকাল সোমবার রেজিস্ট্রি করা নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে হাইকোর্টে রিট করা বলে নোটিশে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, রিশা হত্যাকা-ের ঘটনাস্থলের পাশে বেইলি রোড এলাকায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা থাকে। কিন্তু নিউ বেইলি রোডে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। যেখানে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অবস্থিত। অথচ সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী, শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। তাই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, তাই রিশা হত্যাকা-ে অভিযুক্ত ওবায়দুল খানকে গ্রেফতারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে ওই স্কুল এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। অন্যথায় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট দায়ের করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট কাকরাইল স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় রিশাকে পাওয়া যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিশা মারা যায়। ঘটনার পরদিন রিশার মা বাদী হয়ে ওবায়দুল নামের এক যুবককে একমাত্র আসামি করে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।