পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবহাওয়া পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের রক্ষাকবজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিক‚ল হুমকির মুখে। বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বনের অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রাণি। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কম লবণসহিষ্ণু গাছ ও বণ্যপ্রাণীর ওপর। তাই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় এবার বনের ভেতরে ৮৮টি পুকুর খনন ও পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আবহাওয়া ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পুকুর খনন ও পুনঃখননে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণির অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিপন্ন প্রাণিসমূহের মাঝে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। এ ছাড়া সুন্দর বনের সুন্দরী গাছও এখন হুমকির মুখে। এ ছাড়া সুন্দরবন থেকে এরইমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের আগ্রাসনে চিরতরে হারিয়ে গেছে এক প্রজাতির বন্য মহিষ, দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গন্ডার ও এক প্রজাতির মিঠাপানির কুমির।
পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বনবিভাগ সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে পুকুর খননের কাজ শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া বনের ভিতর মিঠাপানির এলাকা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) অন্যতম নেতা ডা. আব্দুল মতিন বলেন, শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, এর যথাযথ বাস্তবায়নও করতে হবে। এর আগে রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে আবহাওয়া ফান্ডের টাকায় প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। তবে সে প্রকল্পে ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, ফুটপাথের উন্নয়ন করা হয়েছে। আসল কাজ কিছুই করা হয়নি। তাই সুন্দর বন রক্ষায়ও পুকুর খননের যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তাতে পুকুর খনন কতটুকু হবে সেটাই দেখার বিষয়। আসলে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে শুধু পুকুর খনন করলেই চলবে না। এর আশপাশে যে সব ক্ষতিকর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে সে গুলো বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বনের ভিতরে নির্বিচারে গাছ কাটাও বন্ধ করতে হবে। এসব করতে হলে বন বিভাগকে অবশ্যই সৎ এবং আন্তরিক হতে হবে না।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকৃতি ও মানুষের নানা আগ্রাসনে হুমকি বাড়ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোতে লবনাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর ফলে একদিকে সুন্দরীসহ কম লবণ সহিষ্ণু গাছের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রভাব পড়ছে বণ্যপ্রাণীর ওপর। আবার পলি মাটি বেড়ে যাওয়া, নদী ভাঙন ও ভারী নৌযান চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। নানামুখি ক্ষতি থেকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পুকুরগুলো খনন ও পুনঃখনন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৮৮টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন করা হবে। কিছু পুকুর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত লবণাক্ত বনভ‚মির ৭০টি পুকুরে পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে। এই পুকুরগুলো খনন হয়ে গেলে বাঘ, মায়াবী হরিণসহ প্রায় ৪শ’ প্রজাতির বন্য প্রাণীর সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনে থাকা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বনজীবী ও পর্যটকদেরও পানির চাহিদা পূরণ হবে। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণসহ নানা বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকায় পুকুরগুলো খনন করা হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের দুবলায় দু’টি ও বগীতে নতুন করে তিনটি পুকুর খনন করা হবে। এছাড়া এই রেঞ্জে ২৪টি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। তার মধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে চারটি, দুবলা এলাকায় তিনটি, শরনখোলা রেঞ্জ সদরে দু’টি ও দাশেরভারানীতে দু’টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া ডুমুরিয়া, চরখালী, তেরাবেকা, চান্দেশ্বর, শাপলা, ভোলা, শেলারচর, কোকিলমুনি ও সুপতিতে একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে। চাঁপাই রেঞ্জে পুনঃখনন করা হচ্ছে ২৬টি পুকুর। সেগুলোর মধ্যে ধানসাগর এলাকায় তিনটি, গুলিশাখালিতে দুটি, আমুরবুনিয়া এলাকায় দুটি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া চাঁপাই, ঢাংমারী, লাউডোপ, চেংড়া, ঘাগড়ামারী, নাংলী, হরিণটানা, কলমতেজী, তাম্বুলবুনিয়া, জিউধরা, বরইতলা, কাটাখালি, শুয়ারমারা, মরাপশুর, বৈদ্যমারী, আন্ধারমাণিক, হারবাড়িয়া, নন্দবালা ও চরপুটিয়াতে একটি করে পুকুর খনন হবে।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা দেশের সংরক্ষিত বন ভ‚মির ৫১ ভাগ। সুন্দরবনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ৩৭৫ প্রজাতির রয়েছে বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে রয়েছে বাঘ ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর ও কিং কোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখি।
সংরক্ষিত এই বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। দিনে দুবার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের জলভাগে ছোটবড় সাড়ে ৪শ’ নদ-নদী ও খাল রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।