পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব রিপোর্ট : পদ্মার পানিতে তলিয়ে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের মানুষ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে। বিহার রাজ্যের বন্যার পানি নামাতে ভারত গঙ্গা নদীতে দেয়া ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টির মধ্যে ১০৪টি গেইট উন্মুক্ত করে দেয়ায় অকস্মাৎ পদ্মা ও এর শাখা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার অনেক জায়গায় নদী ভাঙন তীব্র রূপ নেয়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার গত তিনদিন ধরে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, পদ্মার পানি কোন কোন এলাকায় থাম ধরলেও কামারখালিতে গড়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার, ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষে পানি বিপদসীমার ১০৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পদ্মা নদী পাংখা পয়েন্টে ৬ সে.মি, রাজশাহী পয়েন্টে ৫ সে.মি. ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৪ সে.মি. এবং মহানন্দা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা বিপদসীমার নিচে থাকলেও এলাকাজুড়ে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই দুর্গত এলাকায় খাদ্যের অভাব, কাজের অভাব, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি সঙ্কট, চোরের উপদ্রব, ভাঙাবাঁধ, রাস্তা-ঘাট, বাড়ী-ঘরে এখনও পানি রয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে- আবাদযোগ্য জমি, খেতের ফসল, বসত বাড়ী, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্রিজ-কালভার্ট।
পানি বৃদ্ধি কারণে ডুবে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের মানুষ ডায়েরিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, বজ্রপাত, সাপের কামড়, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, আঘাত এবং জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো রোগীদের চাপ সামাল দিতে পারছে না। দরিদ্র মানুষেরা হাসপাতালগুলো থেকে ঠিকমত খাবার স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছে না।
ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ থেকে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় গড়াই নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। শরিয়তপুরের সুরেশ্বরে পদ্মা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। কলমিরচর বাজারটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কলমিচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাঙন এলাকায় মাটি ধসে ৫ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে মোছলেম ফকির নামে এক ব্যক্তির লাশ নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর এলাকায় কীর্তিনাশা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহীতে ফাটল ধরা শহররক্ষা বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ফরিদপুর শহররক্ষা বাঁধের ভাঙন এখন পর্যন্ত ঠিক করা হয়নি। পানিতে তলিয়ে গেছে মাদারিপুরের ফসলী জমি। এখানকার শিবচর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অসংখ্য পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দক্ষিণ বহেরাতলায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধের ৫০ মিটারসহ ২০টি বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দত্তপাড়া ইউনিয়নের মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের ৫শ’ মিটার ও অন্তত ৫০টি বাড়ী ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে গেছে। ফারাক্কার সবগুলো গেইট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নাটোরের লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে বলে দাবি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এখানে সরকারী উদ্যোগে বন্যা দুর্গত ১ হ্জাার ৮৯০টি পরিবারের মধ্যে ২শ’ পরিবারকে চাউলসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে দেশের নদ-নদীগুলোতে কী পরিমাণ পানি বেড়েছে তার খোঁজ খবর নিয়েছেন পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। গতকাল (সোমবার) তিনি কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রী প্লাবিত এলাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাজিরায় ২২দিনে ৬শ’ পরিবার গৃহহীন
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামের মানুষ পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পরে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ২০ দিনে গ্রামটির ৬শ’ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়েছে। কোথায়ও আশ্রয় না পেয়ে তারা খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। সুরেশ^র পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি কমতে থাকায় ৬ আগস্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়। ২২ দিনে তিন দফার ভাঙ্গনে গ্রামটির ৬শ’ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। কলমিরচর বাজারটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় ওই বাজারের ২২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কোথাও আশ্রয় না পেয়ে কলমিরচর গ্রামের পাশে ঈশ^র কাঠি, চেরাগআলী বেপারী কান্দি ও বিলাশপুর গ্রামের বিভিন্ন ফসলি জমি ও বিদ্যালয়ের মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। ওইসবস্থানে খোলা আকাশের নীচে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কলমিরচর গ্রামটিতে আটশ’ পরিবারের বসবাস। গ্রামটির আরো দুইশ’ পরিবার ভাঙ্গনের আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙনের কারণে রোববার সকালে কলমিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি ভবন ও কু-েরচর হাসেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন। ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয় তিনটির পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ভাঙন এলাকায় মাটি ধ্বসে পাঁচ ব্যক্তি নিখোজ হয়। তাদের মধ্যে মোছলেম ফকির নামে এক ব্যক্তির লাশ নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ^র এলাকায় কীর্তিনাশা নদী থেকে রোববার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে।
কলমিরচর গ্রামের বাসিন্দা কুলছুম বেগমের স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। একমাত্র পুত্র মানসিক প্রতিবন্ধি। কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। নদী ভাঙনে শনিবার তার বসত বাড়িটি বিলিন হয়। তিনি আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুলছুম বেগম বলেন, বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কিছু নেই। শেষ আশ্রয় বাড়িটা তাও পদ্মা নদীতে বিলিন হয়ে গেল। এখানে খোলা আকাশের নীচে আছি। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব আল্লাহই জানেন। খোলা আকাশের নীচে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।
কলমিরচর গ্রামের নজরুল ইসলাম খালাসি বলেন, পদ্মা নদী আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। সব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছি। জানিনা এর পরে আমরা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।
কুন্ডেরচর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এ বছর আমার ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙন হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের মাঝে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। মানুষ ত্রাণ চায় না, এখানে ভাঙন রোধে বাধ চায়।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ভাঙন রোধে এই মুহূর্তে করার মত কোন প্রকল্প আমাদের কার্যালয়ে নেই। কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেগুলো অনুমোদন হলে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।
রাজশাহীতে পানি কমেছে
রাজশাহী ব্যুরো জানান, রাজশাহীতে পদ্মায় গতকাল দুই সেন্টিমিটার পানি কমে এখন ১৮ দশমিক ৪৪ মিটারে দাঁড়িয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কা কিছুটা কেটেছে। পানি কমার খবরে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে বানভাসি মানুষের মাঝে। নতুন করে আর কোন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, এবছর নতুন করে পানি বাড়ার সম্ভাবনা খুব কম।
এদিকে নতুন করে আর কোনো এলাকা বন্যায় নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও বানভাসি মানুষরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘার পদ্মা চরের মানুষগুলো পানিবন্দি হয়ে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
নগরীর শ্রীরামপুর তালাইমারী বাজেকাজলা এলাকার বাসিন্দারা জানান যেভাবে পানি বাড়ছিল, তাতে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে চরম শঙ্কায় ছিলাম। এখন সেই শঙ্কা কমছে। পানি আর ক’দিন বাড়তে থাকলে বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যেতে পারতো।
ফরিদপুরে তিন দিন পার হলেও বাঁধ সংস্কার শুরু হয়নি
ফরিদপুর জেলা সাংবাদদাতা : ফরিদপুরের পদ্মার পাড় ধলার মোড়ে হঠাৎ করে শনিবার রাতে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের সিসি ব্লকের ৪০ মিটার অংশ ধসে যায়। এদিকে তিন দিন পার হলেও জরুরি ভিত্তিতে তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। আরো ব্যাপক ভাঙনের ভয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে তীরের বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী জহিরুল হক জানান, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ধসের স্থান সংস্কার করা হবে।
মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে পানি না বাড়লেও তীব্র স্রোতে চলছে দুর্বার নদী ভাঙন। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এই দুই নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। আতঙ্কে রয়েছে নিকটবর্তী আরও কয়েকশ’ পরিবার। ইতোমধ্যে শিবচর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে অসংখ্য বসতভিটা-ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। পানির তীব্র ¯্রােতে কাঠালবাড়ী, চরজানাজাত, বন্দরখোলা, মাদবরেরচর ও সন্নাসীরচর ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধের ৫০ মিটারসহ ২০টি ঘরবাড়ি, নিলখী ইউনিয়নের একটি মাদরাসাসহ ৪০টি ঘরবাড়ি, দত্তপাড়া ইউনিয়নের মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের ৫শ’ মিটার বাঁধসহ ৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের শিকার হয়েছে দুটি বেড়িবাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য পরিবার উঁচু সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনে মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকির মুখে রয়েছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘুন্সি গ্রামটি। এছাড়া অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে মাদারীপুর শহর রক্ষা বাধসহ আশেপাশের এলাকা নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। লঞ্চঘাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর যেকোন মুহূর্তে নদীগর্ভে তলিয়ে যাবার আশংকা করা হচ্ছে। লঞ্চঘাটের মুল পয়েন্টে শহর রক্ষাবাঁধে ইতিপূর্বে থাকা স্লাব নদীতে তলিয়ে যাবার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিক্ষিপ্ত বালুর বস্তাও প্রবল ¯্রােতের কারণে ক্রমশ নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে এলাকায়। রাতের মধ্যে লঞ্চঘাট এলাকার বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় দ্রুত ভাঙন সিসি ব্লক ফেলানো দরকার বলে এলাকাবাসী জানায়।
রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ পানি ছুঁইছুঁই
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার পানির প্রভাব পড়েছে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। তবে তা বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও নদীতে রয়েছে তীব্র ¯্রােত। যে কারণে জেলা সদরের সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা ও লাল গোলা এলাকাতেই পাঁচ শতাধিক বাড়ীঘর এবং শত একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ভাঙনে তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা এখন রাজবাড়ী শহর রক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের কয়েক মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পরে গেছে এই বেড়ি বাঁধ। তবে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও অনেকটাই নিশ্চুপ ছিল রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পাওয়া ভাঙন প্রতিরোধে শুরু থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বলে গতকাল সকালে জানিয়েছেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।
তিনি বলেন, গত ২১ আগস্ট থেকে পুরোদমে ভাঙছে পদ্মা নদী। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নদী ভাঙনের ফলে এ এলাকার চেহারাই পাল্টে গেছে। হুমকীর মধ্যে পড়ে গেছে বেঁড়ি বাঁধ। অথচ শুরু থেকেই পানিসম্পদমন্ত্রী ভাঙন প্রতিরোধে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেছেন। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং চাহিদাপত্র প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে কালক্ষেপণ করেছেন। যে কারণে বরাদ্দ আসতে সময় লেগেছে। ফলে ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব হয়নি।
কুষ্টিয়ায় বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া ও দৌলতপুর উপজেলা সংবাদদাতা : কমতে শুরু করেছে পদ্মার পানি। গত দুই দিনে ৮ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত পদ্মা নদীর পানি হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় বিপদসীমা থেকে ১১ সেন্টিমিটার নীচে অবস্থান করছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল হক জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সোমবার সকাল পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ সেতুর নিচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার। পানি বিপদসীমা থেকে ১৪ সেন্টিমিটার নীচে অবস্থান করছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক জানান, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা অঞ্চলে বন্যার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধির পরিমান কমলেও পদ্মা ও গড়াই নদীতে ¯্রােত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও কমেনি বানভাসিদের দুর্ভোগ। দুর্গত এলাকায় সরকারীভাবে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে কিছু চাল বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। ফলে দুর্গত এলাকায় এখনও কাটেনি খাদ্য সংকট। বানভাসি মানুষ অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহালেও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন বন্যায় মানুষের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, বন্যায় দুই ইউনিয়নের ৯০ ভাগ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানকার প্রধান ফসল আউস ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কারও ঘরে এক ছটাক খাবার নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।