পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কবি শহীদ কাদরী জীবিত দেশে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু গেলেন লাশ হয়ে
নিউইয়র্ক থেকে এনা : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী। উচ্চ রক্তচাপ ও তাপমাত্রাজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবি শহীদ কাদরীকে গত ২২ আগস্ট ভর্তি করা হয় নর্থ শোর হাসপাতালে। বেশ কয়েকদিন কবিকে আইসিইউতে রাখা হয়। তার অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২৭ আগস্ট কেবিনে হস্তান্তর করা হয়। ডাক্তার কবিপতœী নীরা কাদরীকে জানিয়েছিলেন, ২৯ আগস্ট তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। সেই দিন কবি তার স্ত্রী নীরা কাদরীকে বলেছিলেন, এবার তিনি বাংলাদেশে যাবেন। ১৯৮৭ সালে দেশ ত্যাগের পর তিনি মৃত্যুর এক দিন আগে বাংলাদেশে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভাগ্যের কী পরিহাসÑদীর্ঘ ৩৪ বছর পর অভিমান ভুলে বাংলাদেশে যাচ্ছেন লাশ হয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি শহীদ কাদরী। গত ২৮ আগস্ট সকাল ৭টায় লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্কসহ দেশ ও প্রবাসের শিল্প-সাহিত্য জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। দীর্ঘ সময় ধরে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাসকারী প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন, আবার এই মাসে চলে গেলে সবাইকে ছেড়ে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার পর তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসে। ১৪ বছর বয়সে শহীদ কাদেরীর প্রথম কবিতা ‘এই শীতে’ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কাকতালীয়ভাবে সেদিনই তার মা মারা যান। ১৯৭১ সালে শহীদ কাদরী বিয়ে করেন নাজমুন নেসা পিয়ারীকে। ঠিক তার কয়েক বছর পর বন্ধুদের উপর অভিমান করে কবি শহীদ কাদরী ১৯৭৮ সালে দেশ ত্যাগ করে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ৫ বছর থাকার পর চলে যান জার্মানিতে। জার্মানিতে তিন মাস থাকার পর চলে আসেন আমেরিকায়। আমেরিকায় তিনি নতুন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন তার এক ভক্ত নীরাকে। নীরা কাদরী নামে সেই নারী সহধর্মিণী হিসেবে সদ্যপ্রয়াত কবির শেষ দেখভালে দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় কবি শহীদ কাদরীর লাশ বিকেলে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে। প্রিয় কবিকে এক নজর দেখতে সেখানো জড়ো হন নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা কবিপ্রেমী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত বাদ মাগরিবের এ জানাজায় অংশ নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কবি একমাত্র সন্তান আদনান কাদরীও শত শত মানুষের সাথে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। সারাক্ষণ পাশে ছিলেন বাবার লাশের সাথে। ২৯ আগস্ট রাতে কবির লাশ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর কবিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। তারা আরো জানান, কবির সকল ব্যয়ভার বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন।
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা। কবি শহীদ কাদরীর অনবদ্য এই পঙ্ক্তি লাইন শুনেনি এমন মানুষ কমই আছে বাংলায়। মাত্র ৪টি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া কবি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন অনেকটা স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়ে। এমনকি ২০১১ সালে একুশে পদক পাওয়ার পরও দেশে যাননি তিনি। দেশকে প্রচ- ভালবাসতেন, যে কারণে আমেরিকার পাসপোর্ট নেননি। জীবিত অবস্থায় বহু অনুষ্ঠানে কবি বলেছিলেন, আমার দেশ বাংলাদেশ। আরো বলেছিলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল দেশত্যাগ করা।
১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি ও ২০১১ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। ২০১১ সালেই কবির হাতে একুশের পদক তুলে দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন। বাংলাদেশ থেকে পদকটি নিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।