পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারীর কারণে পরীক্ষা ছাড়াই ২০২০ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং মাধ্যমিকের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের ফলের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই ঘোষণা করা হয়েছে এই পরীক্ষার ফলাফল। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসি-দাখিলের ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধনকারী সবাই পাস করেছে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে এযাবৎকালের রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী। ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন নিবন্ধনকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। যা ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ ছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই এগিয়ে। ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেলেও ছাত্রীরা পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন। আর সাধারণ ৯টি, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ডিজিটালি এই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে এইচএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ গ্রহণ করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বছরের পর এবার মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা ছাড়া সব শিক্ষার্থীকে পাস করানো হল। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ভাবে ফল প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে পরীক্ষাহীন এই ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিরূপ মন্তব্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সামনে থাকা বাটন চেপে এ ফলাফল ঘোষণার কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির হাতে ২০২০ সালের এসএইচসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানেরা।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়গুলোকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এসএসসি ও সমমান এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার বিষয়গুলোকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুত হয়েছে ফল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়। সমন্বয়কৃত বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের গড় মানের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর প্রতিস্থাপন করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণের মাধ্যমে জিপিএ চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রুপ বা বিভাগ পরিবর্তনকারী পরীক্ষার্থী, বোর্ড পরিবর্তনকারী পরীক্ষার্থী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত পরীক্ষার্থী, অনিয়মিত পরীক্ষার্থী, মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী, সমতুল্য সনদপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থী ও প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের ফলাফল পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়। ফলাফলে কোনো শিক্ষার্থী সংক্ষুব্ধ হলে রিভিউ চেয়ে আবেদন করতে পারবে।
পাস করেছে সবাই: পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের ভিত্তিতে ঘোষিত ফলে পাস করেছে সবাই। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার ৬৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছিল ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে সকলেই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন এবং উত্তীর্ণ হয়েছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। সেবছর পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ছিল ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নিবন্ধনকারী ছিল ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ জন। জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে নিবন্ধনকারী ছিল ৮৮ হাজার ৩০২ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৮ জন এবং জিপিএ-৫’র হার ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কারিগরি বোর্ডে নিবন্ধনকারী ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ জন, জিপিএ-৫’র হার ৩ দশমিক ১০ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন। এছাড়া রাজশাহীতে ২৬ হাজার ৫৬৮, কুমিল্লায় ৯ হাজার ৩৬৪, যশোরে ১২ হাজার ৮৯২, চট্টগ্রামে ১২ হাজার ১৪৩, বরিশালে পাঁচ হাজার ৫৬৮, সিলেটে ৪ হাজার ২৪২, দিনাজপুরে ১৪ হাজার ৮৭১, ময়মনসিংহ বোর্ডের ১০ হাজার ৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৮ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ ৪ হাজার ১৪৫ জন।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্যে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৪৪ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন। মানবিক, ইসলামী শিক্ষা, সঙ্গীত বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৪২জন, জিপিএ-৫ ১৯ হাজার ৬৬৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৩, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৩৩০ জন। বিদেশের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের ২১৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ৬২জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয়, তাহলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কী হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও; চারপাশে তাকাও- মানুষকে ভালবাসো। নীতি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থ চিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হও। দীপু মনি অভিভাবকদের প্রতি বলেন, আপনার সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্যেশ্যই ব্যাহত হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে আপনাদের ভূমিকাই প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও আপনারাই রাখতে পারেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিধান যুক্ত করে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে আইন সংশোধন করতে হয়। সংসদে পাস হওয়া তিনটি বিলে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সই করার পর সোমবার রাতে‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০২১’ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’, ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’ গেজেট আকারে জারি করে সরকার। এরপর এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রস্তুত, ঘোষণা ও সনদ বিতরণের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ক্ষমতা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।