Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনপ্রশাসনে শিগগিরই তিন স্তরে পদোন্নতি

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তালুকদার হারুন : জনপ্রশাসনে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হচ্ছে শিগগিরই। তিন স্তরে প্রায় পাঁচশ’ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ মাসেই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কয়েক দফা সভা ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার এসএসবি’র সভা হয়েছে। জ্যেষ্ঠদের বঞ্চিত করে পদোন্নতি দেওয়ায় জনপ্রশাসনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ মেটাতে আবার পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় বঞ্চিতরাই প্রাধান্য পাবেন। আর তা হলে এটি চমকই হবে, কারণ বঞ্চিতদের খুঁজে বের করে পদোন্নতি দেয়াটা ব্যতিক্রমধর্মী কাজ।
জানা গেছে, জনপ্রশাসনে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে এখন কর্মকর্তার সংখ্যা ২ হাজার ৫৭৩ জন। অথচ এই তিন স্তরে পদ রয়েছে ১ হাজার ২০৩টি। আরো পদোন্নতি দেওয়া হবে পাঁচশ’ জনকে।
১৯৮২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সেসব ব্যাচের অন্তত হাজার খানেক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধাপে (উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব) পদোন্নতি পাননি। এবার তাদেরকেই বিশেষ সুযোগ দিতে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নতুন করে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির তালিকায় নেয়া হচ্ছে। এই ব্যাচে ১৬৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১২৫ জন পদোন্নতি পেতে পারেন। আর বঞ্চিতদের মধ্যে আরো ১০০ জন উপসচিব হতে পারেন। যদিও প্রশাসনে কোনো শূন্য পদ নেই। বরং প্রতিটি পদের বিপরীতে অসংখ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি প্রশাসনকে ভারী করে তুলেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত বছরের ৬ এপ্রিল তিন স্তরে বড় আকারের পদোন্নতি দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত সচিব পদে ২৩১ জন, যুগ্ম সচিব পদে ২৯৯ জন এবং উপসচিব পদে ৩৪২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ফলে বর্তমানে মঞ্জুরিকৃত পদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিবের ১০৭ পদে ৩৭৩ কর্মকর্তা, যুগ্ম সচিবের ৪৩০ পদে ৮৬৯ জন এবং উপসচিবের ৮৩০ পদে ১ হাজার ৮১৮ কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশকে পদোন্নতি-পূর্ব পদে থেকেই কাজ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ্ অতিরিক্ত সচিব করছেন যুগ্ম সচিবের কাজ, যুগ্ম-সচিব করছেন উপসচিবের কাজ, উপসচিব করছেন জ্যেষ্ঠ সরকারি সচিবের কাজ। অনেকের আবার মঞ্জুরিকৃত পদ জোটেনি। সুপারনিউম্যারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদে থেকে বিড়ম্বনার মধ্যেই আছেন তারা। তবুু পদোন্নতি পাওয়াটাকে গৌরবের বলেই মনে করেন তারা।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আর এ প্রক্রিয়ায় বঞ্চনার ঘটনাও ঘটেছে অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায়। বিপরীত চেতনার চিহ্নিত করার পাশাপাশি কাকে টপকাতে পারলে কার পদোন্নতি নিশ্চিত হবে সে বিবেচনা মাথায় রেখেই পদোন্নতি হয়েছে। আর এতেই ‘কপাল পুড়েছে’ অনেকের। সুশাসনের কথা বলে ‘দলীয় আর নীতিনির্ধারকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের’ নিরিখে দেয়া পদোন্নতিতে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। ৯০ দশকের পর থেকেই প্রশাসনকে এই নোংরা খেলা কুরে কুরে খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পদোন্নতি না হওয়ার পিছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। প্রযোজ্য নম্বর না থাকা, বিভাগীয় বা দুর্নীতির মামলা, শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়া, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য ইত্যাদি কারণে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হয় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেশিরভাগ কর্মকর্তার পদোন্নতি সুনির্দিষ্ট কারণে আটকানো হলেও কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি দলীয় বিবেচনায় দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক। তবে তার সংখ্যা বেশি হবে না। আবার ব্যাচভিত্তিক ঠেলাঠেলির প্রতিযোগিতায়ও অনেকে আটকা পড়েছেন। সূত্রটি আরো জানায়, জনপ্রশাসনে এখন সরকার বিরোধী আমলার সংখ্যা কম। সরকারবিরোধীরা পদোন্নতি বঞ্চনা ও নানা চাপে চুপসে আছেন। এদের অধিকাংশই কোনঠাসা, ওএসডি ও কম গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব জানান,নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হলে এখনতো অতিরিক্ত সচিব যুগ্ম সচিবের পদে কাজ করছেন, এবার পদোন্নতি হলে উপ-সচিবের পদেও তাদের কাজ করতে হবে। আর শাখা কর্মকর্তা বলতে পদের চিহ্নও থাকবে না। মাঠ প্রশাসনে এডিসিরা উপসচিব হয়েও সেখানেই থাকবেন। ডিসিরাও যুগ্ম-সচিব হয়ে থাকবেন। নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মত ভিন্ন। তাদের কথা যেসব কর্মকর্তা ন্যায্য পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরকে পদোন্নতি না দেয়াটা হবে অন্যায়। প্রশাসন থেকে এ ধরনের অন্যায় দূর হওয়া প্রয়োজন। তাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে পদোন্নতির নিশ্চয়তা যেমন ফিরবে আবার কাজেও গতিশীলতা আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনপ্রশাসনে শিগগিরই তিন স্তরে পদোন্নতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ