Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চা নিলাম বাজার টানাহেঁচড়া

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খাত চা শিল্প ও বাণিজ্য। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি চা শিল্পে অর্থনৈতিক অবদান রয়েছে ব্যাপক। বার্ষিক প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে সমগ্র চা শিল্পখাতে। বার্ষিক সাড়ে ছয় কোটি কেজিরও বেশি পরিমাণ চা পাতার বিকিকিনি হচ্ছে। শতাধিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ ১৬২টি চা বাগান, চায়ের আন্তর্জাতিক নিলামবাজার মিলিয়ে বিশাল উৎপাদন ক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা অবকাঠামো, সীমিত পরিমাণে রফতানি, লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর স্থায়ী কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকা সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে চা শিল্পের সঙ্গে।
এ প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ আমল থেকে পরিচালিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলামের একক বাজারের পরিবর্তে শ্রীমঙ্গলেও বাজার চালু করে চায়ের দ্বৈত নিলাম বাজার নিয়ে অহেতুক ইস্যু তৈরি করা হয়েছে। চা নিলাম বাজার নিয়ে শ্রীমঙ্গল আর চট্টগ্রামে টানাহেঁচড়া ও বিতর্ক চলছে। অথচ মৌলভিবাজারের শ্রীমঙ্গলে নয়া চা নিলামকেন্দ্র স্থাপনের আগে ওয়্যারহাউসসহ যেসব নতুন ও ন্যূনতম অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা থাকা অপরিহার্য সেগুলো অবিলম্বে বিনির্মাণের জন্য এখন পর্যন্ত কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্ধশতকেরও বেশি পুরনো চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলামবাজারটি দুই ভাগে ভাগ করার দাবি উঠেছে। আলোচনা উঠেছে, দেশের প্রধান চা আবাদ ও উৎপাদন এলাকা শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তর অথবা শ্রীমঙ্গলে আরও একটি চা নিলামবাজার বা নিলামকেন্দ্র স্থাপন সময়ের প্রয়োজনে জরুরি। জোরালো বিতর্কের ইস্যুতে পরিণত হয়েছে চা নিলাম বাজারের অবস্থানের বিষয়টি। বাজার সরানো কিংবা নতুন আরও একটি কেন্দ্র স্থাপন প্রশ্নে বাংলাদেশ চা বোর্ডের কারিগরি যাচাই কমিটি কয়েক দফায় শ্রীমঙ্গলে নিলাম বাজারের সম্ভাব্যতা পরিদর্শন করেছে। চট্টগ্রামের পর সেখানে দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রের পক্ষে মতামত দিলেও কমিটির বিশেষজ্ঞরা শ্রীমঙ্গলে অবকাঠামোর অভাব রয়েছে বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটা ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। ফলে খুব শিগগিরই চা নিলাম বাজার চট্টগ্রাম থেকে সরানো অথবা দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে না।
চা নিলাম বাজারের অবস্থান নিয়ে টানাটানি ও সৃষ্ট বিতর্কে একদিকে যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী-খ্যাত প্রধান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলায় আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দফতর থাকাকালীন অর্ধশতাধিক বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চা নিলামট্রেড চট্টগ্রামেই বহাল রাখতে হবে। অন্যদিকে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে থাকবে চা নিলামকেন্দ্র। চট্টগ্রাম থেকে নিলামবাজার সরিয়ে নেয়ার হঠকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান বণিক-শিল্পপতি সংগঠন-সমিতি থেকে। এ বিষয়টিকে চট্টগ্রামবিদ্বেষী ও ভুল পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে নগরীতে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন-সমিতি আন্তর্জাতিক চা নিলামট্রেড চট্টগ্রাম থেকে সরানোর অযৌক্তিক পদক্ষেপ থেকে সরকার ও কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তারা বলেছেন, চট্টগ্রামে গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে ওয়্যারহাউস, টেস্টিং ল্যাব, সমুদ্রবন্দর ও বাজারজাতকরণ সুবিধা, ব্রোকারেজ হাউজ, দেশি ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির হেড অফিস বা কর্পোরেট অফিসসহ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। যা দেশে আর অন্য কোথাও নেই। ব্যবসায়ী, ব্রোকার, বায়ার, প্যাকেটিয়ার ও পাইকারি চা ক্রেতা-বিক্রেতারা সুদূর শ্রীমঙ্গলে যেতে কখনোই রাজি হবেন না। চা ব্যবসা বা বিপণনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামে একক আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারটি বহাল রাখার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন।
অপরদিকে ‘চায়ের রাজধানী’-খ্যাত বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল দেশের অন্যতম প্রাচীন ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে সেখানে চা এর নিলামকেন্দ্র স্থাপনের পেছনেও তুলে ধরা হচ্ছে অকাট্য যুক্তি ও দাবি। এর সপক্ষে ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরে অনতিবিলম্বে এবং যে কোন ধরনের টালবাহানা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করেই শ্রীমঙ্গলে চায়ের নিলামকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান। তারা বলছেন, চা এর প্রধান আবাদ ও উৎপাদন এলাকা প্রাচীন ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গলে চা নিলামকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী অবকাঠামো সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে এবং সময়ের প্রয়োজনে আরও সুবিধাদি সৃজন করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে চট্টগ্রামে শত শত ট্রাকযোগে বৃহত্তর সিলেট থেকে অনেক দূরে চট্টগ্রামে চা পরিবহনের জন্য কোটি কোটি টাকা অহেতুক বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। তাছাড়া পরিবহনের টানাপোড়নে চা এর গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। অথচ শ্রীমঙ্গরে চা নিলামকেন্দ্র থাকলে পাইকার ও সাধারণ ভোক্তারাও অনেকটা কম মূল্যে ভাল মানের চা কিনতে পারবেন। সর্বোপরি চট্টগ্রামে নিলাম বহাল রেখেও শ্রীমঙ্গলে আরও একটি চা নিলামকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। এতে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চা নিলাম বাজার টানাহেঁচড়া

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ