Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের কানে দিল্লীর সিঙ্গার ফুঁক ছাড়া কারো কথা যায় না -হান্নান শাহ

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রহস্যজনক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পেছনে গোয়েন্দাদের হাত আছে
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির হান্নান শাহ বলেছেন, দিল্লীর সিঙ্গার ফুঁক ছাড়া সরকারের কানে কারো কথা পৌঁছায় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাচেন ভারতের খুঁটির জোরে। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ’৭১ ফোরামের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সন্ত্রাস ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১/১১ সময়ের কথা ভুল গেছেন? এ দেশের জেনারেল সাহেবদের জন্য দিল্লী থেকে ঘোড়া পাঠানো হয়েছিল। ঘোড়া তো নাচে খুঁটির জোরে। সেই ঘোড়া তো এখনো আছে।
তিনি বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে যে সকল তথ্য দেওয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে বিভ্রান্ত হচ্ছি। এই যে যিনি নারায়ণগঞ্জে নিহত হলেন, বলা হলো উনার সঙ্গে আরো দুইজন। কয়েকদিন আগে পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম যে উনি (তামীম চৌধুরী) ভারতে আছেন। তাহলে এটা তো আমি বুঝি না। ভারতের ওই লোক ওখান থেকে নারায়ণগঞ্জে চলে এলো? অ্যাকশন হয়েছে, স্ট্রং আউট নাকি, উনি মারা গেলেন। এই যে মজমা, এটার রহস্য ভাই আমরা বিরোধী দলে আছি, আমরা বুঝি না।
এই রহস্য সৃষ্টির পেছনে গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে বলে দাবি করে সেনাবাহিনী সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হান্নান শাহ বলেন, এটা করতে গেলে একমাত্র যারা পারেন, যারা সরকারে আছেন, তাদের গোয়েন্দা বাহিনী অথবা আমাদের প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা বাহিনীকে আমাদের দেশের সরকার বা গোয়েন্দারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে এই অপকর্মগুলো হতে পারে। এছাড়া এগুলো হওয়া সম্ভব নয়।
শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়। তামিমকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ছাড়াও শোলাকিয়া ও আরও কয়েকটি হামলার মূলহোতা বলে দাবি করছে পুলিশ।

কথিত জঙ্গিদের জীবিত না ধরে হত্যার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আসম হান্নান শাহ বলেন, কয়েকদিন আগে যখন আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হলো মেজর জিয়াউর রহমান এবং যে ভদ্রলোক মারা গেল তামীম সাহেব কোথায় আছেন তারা জানেন। এখন ধরার অপেক্ষামাত্র। আমি সিভিল ডিফেন্স করেছি, আর্মি ইন্টিলিজেন্স করেছি, অনেক কিছু করেছি জীবনে।
তিনি বলেন, মরা মানুষ তো কথা বলে না। মানুষকে আমরা জীবিত ধরি কেনÑযাতে তার কাছ থেকে কথা বের করতে পারি। যতই এনকাউন্টার হচ্ছে। যদি সরকার মনে করত বা বাহিনী মনে করত, তাদেরকে জীবিত ধরা উচিত আরো সংবাদের জন্য। তারা ইচ্ছা করলে পারতেন। আমি কল্যাণপুর (জঙ্গি আস্তানা) সম্বন্ধে বলেছিলাম, অনেকে হা হা করে বলেছিলেন, আরে কী বললেন? পরে দেখা গেল, আমার বক্তব্য বোধহয় ঠিক। কারণ এখন পর্যন্ত সঠিক ব্যাখ্যা জনগণের সামনে আসেনি।
জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে হান্নান শাহ বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য চাই, সরকার চায় না। কারণটা কী? আমরা চাই, এদেশে থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হোক। কিন্তু দেখা যায়, হান্নান শাহের বাড়িতে তো এই জঙ্গিদের পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় মান্নান সাহেবের বাড়িতে। এই মান্নান সাহেব কে, আওয়ামী লীগের নেতা।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে বাসায় জঙ্গি হত্যা হলো, সেই বাড়িটিও আওয়ামী লীগের নেতার। গুলশানের হলি আর্টিজেনের যে মারা গেল, বেশ কয়েকজনের সাথে আওয়ামী লীগের সরকারি দলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ। তাই সরকারকে বলব, সর্বদলীয় মিটিং ডেকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করুন এবং যত দ্রুত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
রামপাল বাতিলে জনগণ ঐক্যবদ্ধ দাবি করে আসম হান্নান শাহ বলেন, দেশের মানুষ রামপালের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। আপনারা (সরকার) যত রাম-নাম জপ করেন না কেন, কিছুই হবে না। বাংলাদেশে মানুষ এই প্রকল্প হতে দেবে না। আপনারা বিশ্বাস করেন আর না করেন, যেদিন নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া) বা যে কেউ ডাক দেবে, রামপালকে বন্ধ করতে হবে, দেখেন ঢাকা শহরে কত মানুষ নামে, মানুষ রাস্তায় নামবেই। জনগণের বিজয় হবেই হবে।
রামপালে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা কাজে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, রামপাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে স্ট্যান্ড নিয়েছেন, রামপাল নিয়ে যদি ওপেন ইনক্যুয়ারি হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, এই সরকারের যারা কর্তাব্যক্তি আছেন, তারা কে কে এখানে ঠিকাদারি করে, ৬ টাকার কিউবিক ফিটের বালু ১৪/১৭ টাকা করে সরবরাহ করছেন। তারা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন বলে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে তারা রামপালকে ইস্যু করে ছেড়েছেন, এখন তারা বলছেন, তারা এটা করবেনই বলেছেন।
রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে বামসংগঠন, জাতীয় বিদ্যুৎ-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকায় অভিনন্দন জানান হান্নান শাহ।
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ সম্পাদক শাম্মী আখতার, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারের কানে দিল্লীর সিঙ্গার ফুঁক ছাড়া কারো কথা যায় না -হান্নান শাহ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ