পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্প্রতি (হলমার্ক ক্যালেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষারের) ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। ইতোমধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া শুরু হয়েছে। অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে প্রচলিত আইন অমান্য করে নারীসঙ্গ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তা যথার্থ। একজন বন্দির এ সংশ্লিষ্ট অধিকার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও দুটি প্রস্তাবনা ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। ইনকিলাব পাঠকদের উদ্দেশে সেই পোস্ট তুলে ধরা হ’লঃ
‘বন্দি অভিযুক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত যা-ই হন না কেন, মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নাই। বিবাহিত বন্দির নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন রোধ এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে, স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট জেলকোড ও শর্তাবলী অনুসরণ করে, নির্ধারিত বিরতিতে স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন বেশিরভাগ ইসলামিক স্কলার। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, স্বামীর অপরাধের কারণে স্ত্রীকে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হতে পারে না।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, মানব ইতিহাসের অন্যতম ন্যয়বিচারক ও আদর্শ শাসক উমর (রা.) বন্দিদেরকে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দিতেন। ইসলামের ইতিহাসের বেশিরভাগ ইমাম ও স্কলার, যেমন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর বর্ণনা অনুযায়ী বন্দিকে নির্দিষ্ট শর্ত ও জেলকোড এবং স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া উচিত। বন্দি যদি নারী হন তবে সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
সউদী আরবসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ নিয়ম পুরোপুরী প্রচলিত আছে। কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্পেনসহ অনেক দেশে এ নিয়ম আছে। ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায়ের পর থেকে এ নিয়ম চালু আছে। তুরস্কে কোনো কয়েদীর সুন্দর আচরণ, শৃংখলা ও সার্বিকভাবে ভালো পারফরমেন্স হলে তাদেরকে এ সুযোগ দেয়া হয়। এতে বন্দির মানসিক বিকাশ ও চিন্তাগত সুস্থতার পথ সুগম হয় এবং চারিত্রিক স্খলনের পথ রুদ্ধ হয়। শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনাল ল এন্ড ক্রিমিনলজি বিষয়ক জার্নালে ১৯৫৮ সালে রুথ শনলে ক্যাভেন এবং ইউজেন এস জেমান-এর যৌথ আর্টিক্যাল Marital Relationship of Prisoner of 28 Countries--এ কয়েদিদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার গুরুত্ব উপস্থাপন করে এ বিষয়ে উপরোক্ত তথ্য দিয়েছেন।
কেউ বলতে পারেন, জেলে এ সুবিধা থাকলে আর বন্দিত্বের মানে কী থাকে? এর উত্তর হলো, বন্দিত্ব একটি সাজা। একজন বন্দির সাজাভোগের পাশাপাশি মৌলিক মানবিক প্রয়োজনগুলো পূরণের সুযোগ যেমন দোষনীয় নয় এটিও দোষের নয়। বিশেষ করে এর সঙ্গে যেহেতু অন্যের অধিকার সংশ্লিষ্ট। জেলে সন্তানাদি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ যেমন ন্যায্য এটিও তেমন ন্যায্য।
সেই সাথে বন্দিদের মানসিক ও আদর্শিক পরিচর্যার প্রয়োজনে প্রতিটি জেলে ধর্মীয় আলোচনা ও মোটিভেশনার স্পীচের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ বন্দি জীবনের অবসরে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। সউদী আরবের প্রতিটি জেলে ‘শুঊনুদ্দীনিয়্যাহ’ বা ধর্মীয় অ্যাফেয়ার্স বিভাগ আছে। এ বিভাগ কয়েদিদেরকে প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক আলোচনা ও ধর্মীয় বই পুস্তক বিতরণসহ নানা ধরনের আয়োজন করে থাকে।
আমি যখন সউদী আরবে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রীচার ও ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্মরত ছিলাম তখন সেখানকার বিভিন্ন জেলে বাংলাদেশি কয়েদীদেরকে সপ্তাহে নূ্যূনতম একবার ধর্মীয় আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা আমার দায়িত্বের মধ্যে ছিল। এর বিস্ময়কর প্রভাব আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। ইংল্যান্ডসহ অনেক অমুসলিম প্রধান দেশেও এ নিয়ম আছে। বাংলাদেশে এ নিয়ম যথাযথভাবে করা হলে বন্দিদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সুগম হবে এবং দেশে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে ইন শা আল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।