পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং যোগ্যপ্রার্থীদের চাকরি প্রদানের জন্য গঠন করা হয়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। পরীক্ষা গ্রহণের ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ এবং উত্তীর্ণ যোগ্যপ্রার্থীদের প্রতিবছর শূন্যপদে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা তাদের। অথচ গত তিন বছরে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারেনি এনটিআরসিএ। তাদের অবহেলায় নিয়োগের অপেক্ষায় আছে লাখো চাকরিপ্রার্থী। এদের মধ্যে অনেকেই উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বেঁধে দেয়া বয়সসীমা (৩৫ বছর) পার হয়ে যাওয়ায় পাবেন না কাক্সিক্ষত চাকরিটি। যার ফলে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের।
জানা যায়, এক বছর আগে ১৫তম এনটিআরসিএ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু একবছরেও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পাননি। তাদের নিয়োগ আটকে আছে ২০১৬ সালে নেয়া ১৩তম এনটিআরসিএ পরীক্ষা নিয়ে করা মামলার কারণে। ১৬তম নিবন্ধনে লিখিত পরীক্ষা শেষে মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে ২ লাখ ২৮ হাজার চাকরিপ্রার্থীরা। ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন সাড়ে ১১ লাখ পরীক্ষার্থী। কিন্তু কবে নাগাদ এই চাকরিপ্রার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে তা জানে না কেউ।
এনটিআরসিএ ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করে। এ পর্যন্ত একটি বিশেষ পরীক্ষাসহ মোট ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এনটিআরসিএ আয়োজন করে থাকলেও নিয়োগ চূড়ান্ত করত সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএকে মেধারভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। এতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক। এখন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির অপেক্ষায় এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ’র আইন অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে ফল দিতে হবে। কিন্তু ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় গতবছরের জানুয়ারিতে। ১১ হাজার ১৩০ জন পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে পাস করেন। এক বছর অতিক্রম করলেও এখনো নিয়োগ পাননি কোনো শিক্ষক। এনটিআরসিএ জানায়, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগমুহূর্তে নিয়োগ পেতে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় রায় তাদের পক্ষে গেলে তাদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ কারণে ১৫তম নিবন্ধনের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারিতে দেরি হয়। এনটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৩তম নিবন্ধনের মামলার কার্যক্রম শেষ হলে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন সম্পর্কে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে যাদের বয়স ৩৫ বছর, তারাই নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করে নিয়োগের অপেক্ষায় আছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী সান্ত আলী বলেন, ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার শূন্যপদের শিক্ষক নিয়োগ অপেক্ষমাণ। পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম গতবছরের জানুয়ারিতে সম্পন্ন হলেও আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি। যার ফলে লক্ষাধিক নিবন্ধিত বেকার শিক্ষকরা নানা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আজ আমরা অবহেলিত। অনেকের বয়স ৩৫ ঊর্ধ্ব হয়ে গেছে ফলে তারা আবেদনের সুযোগ হারিয়েছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতেও সরকারি বিভিন্ন নিয়োগের ফলাফল, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এমনকি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে তা প্রকাশ করতে পারবে বলে আমরা দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১৩তম ব্যাচের রায়ের পর্যবেক্ষণ কপি এনটিআরসিএ’র হাতে। এখন রায়ের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত অজুহাত দিয়ে কালক্ষেপণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। যা প্রায় লক্ষাধিক নিবন্ধনধারীদের আরো হতাশায় ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, একজন নিবন্ধনধারী হিসেবে বলতে চাই, ‘করোনাকালীন শিক্ষাব্যবস্থায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বা এখনো হচ্ছে এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত স্বাভাবিক করতে ও গুণগতমান রক্ষা করে কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এ তরুণ, মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া প্রায় ৮০ হাজার পদশূন্য রেখে কখনই শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যক্রম স্বাভাবিক করা বা গুণগত শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে না। আবার প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইভা ও জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও প্রায় এক বছর ধরে লক্ষাধিক বেকার নিবন্ধনধারীদের গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় রাখা কখনও সমীচীন হচ্ছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দ্রুত সকল জটিলতা দূর করার দাবি জানান।
১৩তম নিবন্ধন নিয়ে মামলা : ২০১৬ সালে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে থেকে শূন্যপদের অনুক‚লে ১৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে উত্তীর্ণদের মধ্যে ৮০ ভাগ নিয়োগ পাওয়ার কথা। পরবর্তী সময়ে এই ৮০ শতাংশের মধ্যে যারা যোগদান করতে পারবে না, সেই সংখ্যক পদে পরবর্তী ২০ শতাংশের মধ্যে থেকে উত্তীর্ণদের ওই পদে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে সুপারিশ করা হবে। কিন্তু এ নিয়ম অনুসরণ না করেই পরবর্তী সময়ে ১৪তম ব্যাচের পরীক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ২০১৭ সালে এক দফা শিক্ষক নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারেনি এ প্রতিষ্ঠান।
চূড়ান্ত ফল শেষে নিয়োগের অপেক্ষা : ১৫তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় গতবছরের জানুয়ারিতে। এতে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় আছেন ১১ হাজার ১৩০ জন। কিন্তু একবছরেও এসব চাকরিপ্রার্থীর একজনেরও নিয়োগ দিতে পারেনি এনটিআরসিএ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগমুহূর্তে ১৩তম নিবন্ধনের চাকরিবঞ্চিতরা মামলা করলে পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
একবছরেও প্রকাশিত হয়নি ফল : এক বছর আগে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হলেও এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। এতে আটকে আছে ২ লাখ ২৮ হাজার প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। অথচ আইন অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা।
সর্বশেষ ১৭তম বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রায় ১১ লাখ ৬৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এসব চাকরিপ্রার্থীও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। তাদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গত ১৫ মে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা স্থগিত হয়েছে। কবে পরীক্ষা হবে, তাও জানেন না প্রার্থীরা।
এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমি এ পদে নতুন নিয়োগ পেয়েছি। নিয়োগ সংন্ত্রান্ত যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটি যেন দ্রুত সমাধান করা যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে নিয়োগের উপর হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা চলছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা কেটে গেলে আমরা দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চেষ্টা করব। আদালতে আমরা একটি আর্জি দিয়েছি। সেটিও পেন্ডিং আছে। সব মিলিয়ে নিয়োগপ্রত্যাশীদের দ্রুত সুখবর দিতে পারব বলে আশা করছি। চেষ্টা করব গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে পুরো নিয়োগ কার্যক্রম যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়ার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।