পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কেরির সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক
তবে সত্যিকারের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে কার্যকর রাজনৈতিক দল গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে দেশটি
কূটনৈতিক সংবাদদাতা
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফর বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তৃত সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যেই কেরির এই আগমন বলে জানিয়েছে মর্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। সেই সাথে একটি মধ্য আয়ের দেশ হয়ে উঠতে বাংলাদেশের অব্যাহত এগিয়ে চলার পথে নিজেকে গর্বিত অংশীদার বলেও উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ঢাকাস্থ আমেরিকান সেন্টার থেকে পাঠানো একটি বার্তায় এই দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের খতিয়ান তুলে ধরে পাঠানো ওই বার্তায় দুই দেশের মধ্যে অংশিদারীত্বের সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই প্রভৃতি ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও বাংলাদেশ গত দুই দশক ধরে অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়েছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি এবং শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
একটি মধ্য আয়ের দেশ হয়ে উঠতে বাংলাদেশের অব্যাহত এগিয়ে চলার পথে যুক্তরাষ্ট্র এক গর্বিত অংশীদার, এমনটাই বলা হয়েছে এই ফ্যাক্ট শিটে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মূল সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে বলেই মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের মূলভিত্তি হিসেবেও বাংলাদেশকে দেখছে পশ্চিমা বিশ্বের এই সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি।
তবে গণতান্ত্রিক, উদার এবং সহনশীল দেশ হিসেবে সত্যিকারের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের কার্যকর রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমের ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত দুই দশকে বছরে গড়ে ছয় শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, গত তিন দশকে পোশাক খাতে বিশ্বের শীর্ষ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, পোশাক শিল্পে বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়, ৪০ লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমেরিকান সেন্টারের পাঠানো বার্তায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, বর্তমানে ১০টি জাতিসংঘ মিশনে সাত হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে। ওই অঞ্চলজুড়ে মানবিক ও ত্রাণ তৎপরতা ছাড়াও ২০১৫ সালের নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং জাপানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চিকিৎসক ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পাশাপাশি ফিলিপাইন ও মালদ্বীপেও মানবিক সহায়তা পাঠানো বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সূচকে উন্নতি, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথাও স্মরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, দেশে দশ লাখেরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষককে নতুন সারের প্রযুক্তি এবং উন্নতজাতের বীজ সম্পর্কে অবহিতকরণের মাধ্যমে এ খাতে ভূমিকা রেখেছে ইউএস এইড। এছাড়া দেশের দশ লাখেরও বেশি কৃষককে মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদনে সহায়তা করেছে উন্নয়ন সংস্থাটি। যার ফলে দেশের রফতানি আয় ১০ কোটি ডলার বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
দরিদ্র জনসংখ্যার হারকে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক থেকে এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই কাজেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের পর ইউএস এইডের মাধ্যমে মার্কিন সরকার ৬শ’ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে। বর্তমানেও বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইউএস এইডের সহায়তা কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সহায়তা কর্মসূচিগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বর্তমানে ৫ হাজার ৪৫৫ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে এমন তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী পাঠানো ২৭ তম শীর্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফুলব্রাইট ও হ্যাম্পফ্রে ফেলোশিপ, ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩ হাজার বাংলাদেশী বিভিন্ন ইউএস এক্সচেঞ্জ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশটির সাথে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, জন কেরির এই সফর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণে। প্রথমত, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক এবং দীর্ঘকালীন সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করে আসছে। সেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো একজন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি সফরে আসেন, সেটাকে নিশ্চয়ই আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব, এ পর্যায় থেকে সফরটি হচ্ছে, এটাই অনেক ভালো খবর।
হুমায়ুন কবির বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা মনে করতে পারি- নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা, সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা-ে একে অপরকে সহায়তা করা, আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা- এ সবগুলো বিষয়ই দ্বিপাক্ষিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ দু’দেশের দিক থেকেই নিজেদের মতো করে এর তাৎপর্য রয়েছে। কাজেই দ্বিপাক্ষিকতা এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে লাভবান হওয়ার একটা সুযোগ এখানে রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
আর যেহেতু এটা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সফর, সেহেতু রাজনৈতিক পরিসরে নিজেদের মধ্যে প্রচুর আলোচনা ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করার সুযোগ একটি ইতিবাচক দিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২৯ আগস্ট বিকেলেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি ঢাকা থেকে ভারতের নয়াদিল্লী চলে যাবেন। সেখানে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তার সফর নির্ধারিত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।