পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
(গত সংখ্যার পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : মেওয়াটির হাতে লেখা ও নিজের টিপসই দেয়া খারখাউড়া থানায় দায়ের করা আবেদনে পিংকি বলেছে Ñ ১৮ মে, ২০১৫ সকাল ৯টায় আমি কাজে যাচ্ছিলাম। এ সকল লোক বলে যে, আমাদের কারখানায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ সেখানে খারাপ কাজ হয়। লোকগুলো খেপে উঠেছিল। তারা আমাকে নির্যাতন করতে থাকে ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা আমাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
পিংকি পুলিশে কাছে গেছে, এ কথা জানার পর খেপে যায় রোশান। তাদের শাস্তি দেয়ার হুমকি দিতে ছেলে ধর্মেন্দরকে পাঠায় সে। সে তাই করে। মধ্যযুগ থেকে চলে আসা প্রথামতো সে ঘোষণা করে, হুকা-পানি বন্ধ। এ মানে হল প্রাচীনকালে গ্রামের বয়স্ক সবাই একসাথে বসে এক হুকা পালা করে সেবন করত। সমাজপতিরা কাউকে কোনো কারণে শাস্তি দিলে সে আর ঐ হুকা সেবন করতে পারত না। প্রতীকী অর্থে কারখানায় চাকরিরত ৭ নারীকে একঘরে করা হয়। এর ফলে এমনকি তারা গ্রামের সকলে ব্যবহৃত টিউবওয়েল থেকে পানিও নিতে পারবে না। গীতা, প্রেমবতী ও তাদের বন্ধুরা এটা থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করল। শিশু বয়স থেকেই তারা একঘরে হওয়ার কথা শুনে আসছে। কাউকে বাধ্য করার জন্য একঘরে করার ভয় দেখানো হত। তবে তারা এর প্রয়োগ কখনো দেখেনি। প্রথমে তারা প্রতিবেশিদের সাথে গোলমাল এড়িয়ে সরকারী অর্থে প্রতিষ্ঠিত টিউবওয়েল ব্যবহার করে বিষয়টি মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু কয়েকদিন পরই শাস্তি কার্যকর হতে শুরু করে। এটা প্রথম বোঝা গেল যখন গীতার কিশোরী ভাইঝি তাদের পাশের বাসা মেয়েটিকে শুভেচ্ছা জানাল, কিন্তু সে জবাবে মুখে কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেল। রেখা তার মা-সহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানাল, কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনো সাড়া পেল না।
গীতার পাশের বাড়ি বিয়ে হল। লোকজন এল। খানা-পিনা হল। কিন্তু তাকেসহ ৭জনের কাউকেই ডাকা হল না।
গীতার গ্রামে বাড়ি থেকে তা মা আঙ্গুরিসহ কয়েকজন এল। গীতা তার মাকে এক গ্লাস পানি খেতে দিল। সে খেল না। চা দিল। খেল না। ঘরের মধ্যে যেতে বলল। গেল না। পরে গীতার মা বলেছিল, আমার ভয় ছিল যে আমি যদি পানি খাই তাহলে আমাকে সমাজচ্যুত করা হবে। আমাদের এখানে কেউ সমাজচ্যুত নেই।
গীতার মা কাঁদল। তারপর ফিরে গেল। গীতা শক্তপোক্ত মেয়ে। কিন্তু মা চলে গেলে ঘরে দরজা দিয়ে কাঁদতে থাকে সে।
৭ নারী কারখানায় যাওয়া বন্ধ না করায় বিস্মিত হয় ধর্মেন্দর। গ্রামের আর সব মেয়ের সারাদিন কাটে কাঠ-খড়ি কুড়িয়ে। সকাল বেলা গীতারা যখন কাজে যায় তখন লোকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের অশ্লীল প্রশ্ন করে, ন্যাংটা সিনেমার নায়িকা হতে যাচ্ছ বুঝি?
ধর্মেন্দর বলে, গোটা ব্যাপারটাই অদ্ভুত। মেয়েগুলোর কাছে আপোসের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তারা যদি অনৈতিক কাজ করার কথা স্বীকার করে ও জরিমানা দেয় তবে তাদের সমাজে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি। একঘরে এমন এক মারাত্মক শাস্তি যাতে ভুক্তভোগীরা নতজানু হয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আত্মসমর্পণ করে ও সমাজপতিরা যে জরিমানা করে তা দিয়ে দেয়। গীতা ও তার বন্ধুদের একঘরে অবস্থা তিন মাস পেরিয়েছে। ধর্মেন্দর বলে, এত দুর্ভোগ কেউ পোহাতে চায়?
গীতারা আদালত থেকে একটি নিরোধ মূলক আদেশ জারি করিয়েছে। এ আদেশে কেউ সহিংসতার আশ্রয় নিলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। দু’সপ্তাহ পরপর এ নিরোধ আদেশ নবায়নের জন্য তাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেতে হয়।
তাদের উকিল হচ্ছেন মোহাম্মদ ইউসুফ সিদ্দিকী। তার এ নারী মক্কেলেরা তার কাছে বিস্ময়কর কিছু। তারা কেউই লেখাপড়া জানে না। তারা কাগজে সই দিতে পারে না, টিপসই দেয়। তিনি বলেন, তারা আদালতের নিয়ম-কানুন কিছু জানে না। তারা আমাকে কোনো প্রশ্ন করে না। তারা শুধু একটি কথাই বলেঃ আমরা কোনো অন্যায় করি নি।
প্রেমবতী বুঝে উঠতে পারেনি কতটা ক্ষতি হয়েছে তার। এ বছরের প্রথম দিকে তার কিশোর বয়সী দ্বিতীয় পুত্র ভীমের বিয়ের ব্যবস্থা করে সে। ঋণের জালে না জড়িয়ে ছেলের বিয়ে দেয়ার পথ খুঁজে পায় সে। তাহল গরীব লোকদের বিয়ের ব্যয় কমাতে সরকারী উদ্যোগে বিয়ের ব্যবস্থা। এতে ভীম হতাশ হয় বটে, তবে প্রেমবতী সুন্দরী একটি পুত্রবধূ পায়। তার নাম পূজা। ভীম তার বৌ-এ প্রেমে পড়ে।
কিন্তু প্রেমবতী একঘরে হওয়ার পর পূজাও বিপদে পড়ে। তার ভাইয়ের বিয়েতে যোগদানের অনুমতি পায়নি সে। তার রাগ গিয়ে পড়ে স্বামীর উপর। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় পুজা। ক্ষেপে গিয়ে বউকে পেটায় ভীম। পূজার চিৎকার শুনতে পায় প্রতিবেশিরা।
এক গরমের রাতে পূজার বাবা আসে। সে জানায় মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছে। সে পা তুলে মাটির একটি দলা লাথি মেরে পাঠায় বাড়ি সীমানা ঘেরা মাটির দেয়ালের দিকে। বলে, এ সব সমস্যা ঘটেছে এক মেয়েলোকের জন্য যার নাম আমি এখন বলতে চাই না। আড় চোখে সে তাকায় প্রেমবতীর দিকে।
বাবা নিয়ে যায় পূজাকে।
প্রেমবতী গুম মেরে যায়। তা কুঁড়ে ঘরের দেয়াল বেয়ে মৌসুমী বৃষ্টির ধারা গড়িয়ে পড়ে। রাতের বেলা ঢোকে মশার ঝাঁক। তা ছেলে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য তাকে দোষারোপ করে। প্রেমবতীকে বিপর্যস্ত মনে হয়। সে আপনমনে বলে, আমি এত পরিশ্রম করলাম, কিন্তু বাড়ির সমস্যা দূর হল না।
রোশান সন্তুষ্টির সাথে ঘটনাটি লক্ষ্য করে। এ মহিলারা দেখাতে চেষ্টা করছে যে সমাজকে ছাড়াই তারা চলতে পারবে। পূজা চলে গেছে শুনে তার মুখ হাসিতে ভরে ওঠে। সে বলে, ধীরে ধীরে তারা আমাদের ক্ষমতা বুঝতে পারবে।
কারখানায় কাজ করা নাত নারীদের মধ্যে যারা কাজ ছাড়তে চেয়েছিল তাদের উপর চাপ বাড়ছিল। তারা সমাজপতিদের প্রতি অনুগত থাকতে চেয়েছিল। সেপ্টেম্বর নাগাদ দৈনিক ২শ’ টাকা আয়ের কাজ ত্যাগ করে তারা সংসার নিয়ে বড় কষ্টে পড়ে যায়।
বড় সুমন নামে গীতার এক প্রতিবেশি ছিল। সে সেনাপতির মত অভিজ্ঞ চোখে সবার বাড়িঘরের অবস্থা জরিপ করে। গীতা বিদ্রোহ সে মানতে পারেনি, কিন্তু তার আয়ের পথ ত্যাগ করতে তার আপত্তি ছিল। এক সকালে এক ঋণদাতা মহাজন তার বাড়ি এসে হাজির হয়। চিৎকা করে বলে, হয় আমার টাকা দাও নয় তোমার বাইসাইকেল নিয়ে যাব।
বাইরে ঘুরতে গিয়ে বড় সুমন এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল। এক বিধবা নারী শিশুসন্তান সাথে শহর থেকে মাথায় করে আটার বস্তা নিয়ে ফিরছে। সে জানত ভিক্ষা কি জিনিস। অচেনা লোকে সামনে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে হয়। নাতরা এটা ছাড়া চেষ্টা করছিল।
তার ঘরের আটা ফুরিয়ে গেছে দু’দিন আগে। ঋণ করাকে ভয় করত সে। তাই রোশানের কাছে যেতে চাইল না। সে ঋণ দেয়, কিন্তু সুদ নেয়। সে কাঁদল ,তারপর ভিক্ষা করতে বের হল।
সেদিন সকালেই সুমন স্থির করে আর এভাবে চলা যায় না। সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।