পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উৎপাদন খরচ না উঠায় কৃষকরা দূরবস্থায় থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেই না। বছরজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। আর এটা করা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার। পেঁয়াজের বাজারে নিয়ন্ত্রণ এসেছে। তবে চাল ও ভোজ্য তেলের বাজারে সিন্ডিকেট ‘আগুন’ লাগিয়ে দিয়েছে। পণ্য দুটির দাম গত কয়েকদিনে হুহু করে বেড়ে গেছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় চাল ও ভোজ্য তেলের পর এবার সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে চিনির বাজার। ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে পণ্যটির দাম। রমজান মাস আসতে এখনো কয়েক মাস বাকি। সেই রমজানের চাহিদাকে সামনে রেখে এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বাজারঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে অন্তত ১২-১৫ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এখনোই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে চিনি উৎপাদন ও আমদানি ব্যাহত হয়েছে। একইসঙ্গে অপরিশোধিত চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টারা জানান, দেশের কয়েকটি চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। ফলে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। আগামী ১-২ মাসের মধ্যে বাজার আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমান খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা।
রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস আগে চিনি ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তবে বাজার ভেদে দামে তারতম্য রয়েছে। কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, সেখানে মানভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়। আবার মোহাম্মাদপুরে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। যাত্রাবাড়িতে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। অনেক দোকানে অবশ্য আগের কেনা চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৩ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কেজিতে পড়ে সাড়ে ৬৩ টাকার মতো। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়। শনির আখড়ার মনির স্টোরের মালিক মো. মনির হোসেন জানান, বাজারে চাল তেলের পর চিনির দাম বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনে চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা বেড়ে গেছে।
কাওরান বাজারের আমিন স্টোরের পরিচালক মো. বাবলু জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ৫-৬ টাকা বেড়েছে। তবে দেশের বাজারে তার প্রভাব এখনো তেমন পড়েনি। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে চিনির দাম চড়া হবে। তিনি বলেন, দেশের চিনিকল বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্ববাজারে বাড়লে আমাদের দেশেও বাড়বে। অন্যদিকে দেশের অনেক চিনিকল বন্ধ থাকায় যা উৎপাদন হতো, এবার তার থেকে কম উৎপাদন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের পর বাজারজাত করে থাকে। আর দেশীয় মিলগুলো আখ থেকে চিনি তৈরি করছে। এখন কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে মূল্য বৃদ্ধি করছে।
জানা গেছে, বেসরকারি কোম্পানিগুলো চিনি পরিশোধন করলেও দেশের চিনির বাজারে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল নিয়ে অস্থিরতা, সরকারি চিনির সরবরাহ ব্যবস্থাপনা সংকটে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এতে চিনির দাম নিয়ে কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সূত্র বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে চলতি মাড়াই মৌসুমে ৬টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৮২ হাজার টন।
সংশ্লিষ্ট স‚ত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬টি মিল উৎপাদন স্থগিত ঘোষণা করায় চিনি উৎপাদন ৬০-৬৫ হাজার টনে নেমে আসবে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটি ডিলার পর্যায়ে চিনি বিক্রি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী চিনি না পাওয়ায় এরই মধ্যে চিনির ডিলারশিপ বাতিলে ঝুঁকছেন নিবন্ধিত ব্যবসায়ীরাও।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে জানা যায় চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। সে কারণেই সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি চিনিকলে যেহেতু উৎপাদন কম হচ্ছে তাই বেসরকারি কোম্পানিগুলো আমদানি করছে। তবে সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে চিনি আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে দাম স্বাভাবিক থাকবে। না হলে সিন্ডিকেট চিনির মূল্য বাড়াতেই থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।