Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে ক্ষতির পরিমাণ

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী ডাই অ্যামেনিয়া ফসফেট (ডিএপি-১) সার কারখানায় গ্যাস ট্যাংকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কিছু বলছে না। তারা বলছেন, দুর্ঘটনার কারণ ও সেইসাথে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। দুর্ঘটনার চার দিন পরেও প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা যায়নি। দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা খুব শিগগিরই প্রতিবেদন দেবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে দুর্ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কারখানার অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, অব্যবস্থাপনার কারণেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে কারখানায় কোনো রকম সংস্কার করা হয়নি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজও করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে চলছে সার উৎপাদন। এর পেছনে ছিল কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতি। দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার ভারেই এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন খাত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। এর মধ্যে কারখানার নিজস্ব ক্ষতি ছাড়াও রয়েছে মৎস্য ও কৃষি খাতের ক্ষতি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সারকারখানার ইউনিটটি চালু করতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার রাতে ডিএপি সার কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংকে বিস্ফোরণের পর সেখানে থাকা প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন গ্যাস আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ। এরপর থেকে কারখানা এলাকায় ব্যাপকহারে মাছ, গবাদি পশু, জলজ প্রাণি মরতে শুরু করে। বিবর্ণ হয়ে পড়ে ক্ষেতের ফসল। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনও পড়ছে।
দুর্ঘটনার পরদিন থেকে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ক্ষতির পুরো তালিকা পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাথমিক যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে টাকার অংকে ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডিএপি কারখানার। কেননা বিস্ফোরিত ট্যাংকে যে ৩০০ থেকে ৫০০ টনের মতো অ্যামেনিয়া গ্যাস ছিল, তার বাজারমূল্য প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংক পুনঃস্থাপন ও চালু করতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে। যাতে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ থাকলে ক্ষতি ছাড়াবে প্রায় ৫শ কোটি টাকা। এছাড়া ট্যাংকটির স্থাপন খাতেও যাবে আরও কয়েকশ কোটি টাকা।
তবে কারখানার ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তার আগেই চূড়ান্ত হবে আশপাশের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা। এদিকে এখনও ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
দুর্ঘটনার পরপরই সার কারখানার আশপাশের পুকুর ও ঘোনার পানিতে অ্যামোনিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিষক্রিয়ায় মারা যায় অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী। দুর্ঘটনার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ, প্লান্টের বাকি ট্যাংকগুলোর ঝুঁকি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্যে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিসিআইসি। বিসিআইসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) আলী আক্কাসকে আহ্বায়ক ও সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু তাহের ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদকে আহ্বায়ক এবং আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ ও কর্ণফুলী থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে ক্ষতির পরিমাণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ