পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাকরাইন উৎসবে হাজার হাজার রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে রঙিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ। লাল, নীল, সাদা, কালো, ছোট, বড়, নানা আকৃতির ঘুড়ির সৌন্দর্যে গতকাল ঢাকার আকাশ সেঁজেছিল এক নতুন রুপে। বাড়ির ছাদে ছাদে ছিল উৎসব। ছোট থেকে বড় সকলের হাতে ছিল ঘুড়ি আর নাটাই। গান-বাজনার তালে তালে সকাল থেকে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। মাথার ওপর আকাশ রঙ্গিন ঘুড়িতে সয়লাব। সে ঘুড়ি পৌষ-সংক্রান্তি উৎসবের ঘুড়ি। ফুটছে নানা রকম পটকা। আর রাতে আতঁশবাজি, লেজার লাইটে আলোয় চোখ ধাঁধানো উৎসবে পরিণত হয়, রাতের ঢাকা রুপ নেয় উৎসবের নগরীতে।
মূলত পুরান ঢাকার শাখারীবাজার, সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, হাজারীবাগ, সদরঘাট, নবাবপুর, লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, ওয়ারী ও পোস্তগোলা এলাকার মানুষ এখনো ঘটা করে সাকরাইন উদযাপন করে। তবে ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও ছোট আকারে এবার সাকরাইন পালন হয়েছে। এদিন প্রত্যেক বাড়ির ছাদে ঘুড়ির পাশাপাশি নানা রকমের বাহারি খাবারেরও আয়োজন করা হয়। মাঠেও হয়েছে আয়োজন। তবে ছাদে ঘুড়ি উড়ানো, এক ছাদ থেকে অন্য ছাদের ঘুড়ি কেটে দেয়ার আনন্দই আলাদা। প্রত্যেকে আগেই ঘুড়ি নাটাই সংগ্রহ করে রেখেছিল। কেউ কেউ সুতায় মাঞ্জা দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন অন্যের ঘুড়ি কাটার জন্য।
সকলের তীক্ষ্ণ আর তৎপর দৃষ্টি আকাশের দিকে। সেখানে পাখির মতো ডানা মেলে ওড়াউড়ি হাজারো রঙ্গিন ঘুড়ির। হঠাৎ করেই কেটে গেলো একটা নীল ঘুড়ির সুতো। একটা ঘুড়ির সুতো কাটতেই একদিকে সুর উঠলো ‘বাকাট্টা লট, লট...’ শব্দের। আরেক দল ভোঁকাট্টা হলেই ভোঁ- দৌড়। ছেলে-বুড়ো সবাই ছুট লাগাল কাটা পড়া চোখদার সেই ‘ঘুড্ডি’ ধরতে। যে আগে পৌঁছাতে পারবে, ঘুড্ডিটা তার! শুধু কি তাই? ঘুড়ি শিকারের জন্য লম্বা লগির মাথায় ঝোপঝাড় বেঁধে পুরান ঢাকার পথে পথে শিশু-কিশোরদের ছোটাছুটি চোখে পড়ার মতো।
কে কার ঘুড়ি কাটতে পেরেছে সেই প্রতিযোগিতা আর ঘুড়ি কেটে ফেলার আনন্দ আর চিৎকার মোহ ধরিয়ে দেয় সবার। ছেলেদের সঙ্গে তরুণীরাও অংশ নিয়েছেন ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবে। আর বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো শেষে সন্ধ্যার পর শুরু হয় মুখে কেরোসিন-আগুনের খেলা, ফানুস ওড়ানো। এছাড়া বাড়ির ছাদগুলো থেকে আকাশে ছোড়া হয় শাঁখারীবাজার, চকবাজার থেকে কিনে আনা রং-বেরঙের আতশবাজি। সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উৎসব।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ছোট বেলা থেকেই উৎসবটা করে আসছি আমরা। প্রতিবছর বন্ধুরা মিলে চাঁদা তুলে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করি এই উৎসব। চেষ্টা করি আয়োজনে চাকচিক্য আনার। ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি খাওয়ার জন্য থাকে খিচুড়ি আর মাংস। সারা দিন ছাদ কাঁপিয়ে বাজতে থাকে গান, চলতে থাকে নাচও। গান বাজনার মধ্যেও থাকে প্রতিযোগীতা। আরিয়া আমান নামের একজন জানালেন, বুধবার ছাদে তোলা হয়েছে বড় স্পিকার। আশপাশের কেউ যেন বাদ্যের আওয়াজে তাঁদের পেছনে ফেলতে না পারে, সেজন্য আনা হয়েছে ১০ পিয়ার বক্স। এটাও ঘুড়ি কাটার মতো একটা প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়ী আনিস আহমেদ জানান, সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজন করে আসছে।
আগে পিঠা-টিঠা বানানো হতো। এখন বাড়িতে পিঠা বানানোর আয়োজন কমে গেছে। এছাড়া আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন নিজেরাই উৎসবের আগের দু-তিন ধরে ঘুড়ি বানাতাম, সুতোই মাঞ্জা দিতাম। তবে এখন তো সেসব নেই, সবকিছু এখন রেডিমেইড কিনতে পাওয়া যায়। তখনকার উৎসবের সঙ্গে এখনকার উৎসবের পার্থক্য ঢের। তবে উৎসব যে পরাম্পরায় টিকে আছে, বড় হয়েছে, এটাই ভালোলাগা।
এদিকে প্রথমবারের মতো সাকরাইন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে এই ঘুড়ি উৎসব। পৌষ-সংক্রান্তি উপলক্ষে উৎসবে অংশ নিতে আগ্রহীদের মধ্যে ঘুড়িও সরবরাহ করা হয়েছে। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়ে ঢাকার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা হবে বলে উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সাকরাইন উৎসবে অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য তো বটেই, এটি পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ। আমরা প্রায় সবাই ছোটবেলায় ঘুড়ি ওড়িয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের কিশোর-তরুণরা ঘুড়ি ওড়াতে পারে না জায়গার অভাবে। এই ঘুড়ি ওড়ানোর যে কি আনন্দ-উত্তেজনা, যারা ঘুড়ি ওড়াননি, তারা বুঝতে পারবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।