Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফাহিম ফিরোজ
আমরা ঘুমের ভেতর অনেকেই নানা রকম স্বপ্ন দেখি। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ঘুমের ভেতরে দৃশ্যমান স্বপ্ন অনেক সময় ভালো ও মন্দের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। মানব সৃষ্টির পর থেকেই মানুষের এই ঘুমঘোরে স্বপ্ন দর্শন চলে আসছে এবং পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এই স্বপ্ন দেখা চলতে থাকবে। দিন ও রাতের স্বপ্ন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতীকী অর্থে ধরা দেয়, যা অনেক মানুষই বুঝতে অক্ষম।
ঘুমের ঘোরে রাতে ও দিনে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। অনেকেই বলেন, দিবা স্বপ্ন সত্য হয় না। কথাটা সম্ভবত পুরোটা সত্য নয়। আমার সুপরিচিত এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা রাতে তো বটেই দিনেও কখনো কখনো স্বপ্ন দেখে থাকেন। দেখা গেছে, দিবা স্বপ্নও তাদের ক্ষেত্রে সত্য হয়েছে। কিছুদিন আগে এমনই এক ব্যক্তি দিনে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন, কোনো এক ব্যক্তি তাকে বলছেন, আপনার চিঠিপত্র আসছে। ভদ্রলোক বুঝতে পারেন না কি চিঠিপত্র তার নামে আসছে। ঠিক দুইদিন পরই তার মোবাইলে এমন একটি কল আসে, যে কলটির জন্য দীর্ঘদিন তিনি উন্মুখ ছিলেন। এই কলই প্রতীকী অর্থে চিঠিপত্র। আর এক ব্যক্তিকে জানি, যিনি স্কুলের গ-ি পেরোনের সময় দিনে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তিনি হাত মেলাচ্ছেন। ক’বছর পরই কাকতালীয়ভাবে দেশের প্রেসিডেন্টের সাথে তিনি করমর্দন করেন এবং তার দ্বারা বিশেষভাবে উপকৃত হন। আর একজন শিশু এবং তার পরিবারের সঙ্গে আমার জানাশোনা আছে। সেই শিশু ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে, রাস্তা দিয়ে সিলভার রঙের নতুন একটি প্রাইভেট কার ছুটছে। ক’দিন পর দেখা গেল, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রৌপ্যপদক পেয়েছে। আর একজন বয়স্ক ব্যক্তি, যাকে আমি বহু দিন ধরেই চিনি জানি এবং এই ব্যক্তি কিছুটা ধার্মিক গোছের। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তারই এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বপ্ন দেখেন, ওই ব্যক্তি তার দিকে তাকিয়ে বলছেন-‘আজরাইল এসে গেছে।’ এই কথা শুনে তো বেচারা মৃত্যুভয়ে অস্থির। ক’দিন পর জানা গেলো, ওই বয়স্ক ব্যক্তি মক্কায় হজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।
অর্ধ ঘুম ও গভীর ঘুমের স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অর্ধঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে থাকেন। অর্ধ ঘুমকে কেউ কেউ আবার জাগ্রত ঘুম বলেও আখ্যায়িত করেন। গভীর ঘুমের স্বপ্ন থেকে জাগ্রত ঘুমের স্বপ্ন বেশি সত্য হতে দেখা যায়। কারণ, জাগ্রত ঘুমের স্বপ্ন স্পষ্ট মনে রাখা যায়। গভীর ঘুমের স্বপ্ন ওভাবে মনে রাখা যায় না। দেখা গেছে, বেশির ভাগ এ ধরনের স্বপ্ন ঘুম ভাঙার পর হুবহু মনে রাখা কঠিন। ফলে রাতে স্বপ্নে কী দেখলেন এ নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা সন্দেহ কাজ করে। কারো মধ্যে আবার করে না। যাদের করে না এসব মানুষের সংখ্যা খুব কম।
স্বপ্ন হচ্ছে রহস্যময়। এর আদিঅন্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খুঁজে পাওয়া মুশকিল এর সত্য ও মিথ্যার দিক। স্বপ্ন সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, আপনার দেখলে পর হয়। অর্থাৎ নিজের ক্ষতি হতে দেখলে অন্যের ক্ষতি হয়। অন্য কারো ভালো হতে দেখলে নিজের অমঙ্গল হয়। এই প্রবাদও কখনো কখনো উল্টো মনে হয়। কিছু স্বপ্নদ্রষ্টার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বপ্নে তারা নিজের ক্ষতি দেখেছেন, কিছু দিনের মধ্যে দেখা গেছে সত্যি তার কোনো না কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে। স্বপ্নে দেখেছেন নিজের মঙ্গল হয়েছে, বাস্তবে দেখা গেছে তাই হয়েছে।
কিছু কিছু স্বপ্ন সম্পর্কে কমবেশি সব মানুষের সতর্ক থাকা উচিত। যেমনÑ লোভ। স্বপ্নে যদি কখনো কেউ লোভনীয় কিছু দেখে এবং লোভের প্রতি আকৃষ্ট হয়, দেখা গেছে, এ ধরনের লোভনীয় স্বপ্ন নিজের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক হয়ে দাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আমি হাবিবুর নামে একজন ব্যক্তির নাম কয়েক মাস ধরে শুনে আসছি, যিনি প্রায়ই স্বপ্ন দেখেন তার ভিটির নিচে সোনা-দানা পড়ে আছে। কেউ যেন তাকে বলে এগুলো তুলে নিতে। না হলে সরকার তুলে নেবে। অনেকের বাধা উপেক্ষা করে একদিন রাতে তিনি গোপনে ভিটি গর্ত করে সেই সোনাদানা খোঁজার চেষ্টা করেন। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে হাবিবুর সোনার বাটি ও চামচ পেয়েছেন। স্বপ্নের এই লোভে পড়ে এখন তার মহাবিপদ। কমছে না শরীরের অসুস্থতা, সেই সঙ্গে মাটির নিচ থেকে তিনি কি পেয়েছেন এ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে নানা চাপ। শেষ পর্যন্ত নাকি তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাবেন।
এক মহিলার কথা শুনেছি, তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মাটির নিচে গুপ্তধন পেয়েছিলেন কিন্তু ভোগ করতে পারেননি। পরে পুুলিশ এসে তা জব্দ করে। ওই মহিলা শেষ পর্যন্ত উম্মাদ হয়ে যান। স্বপ্নে গুপ্তধন পেয়ে কেউ ধনী হয়েছে এমন কথা কখনো শুনিনি। তবে স্বপ্ন ছাড়া হঠাৎ কেউ গুপ্তধন পেয়ে ধনী হয়েছেন এমন কথা লোকজনের কাছে প্রায়ই শোনা যায়। লোভনীয় স্বপ্ন যে কতটা ক্ষতিকর এ বিষয়ে এবার একটু নিজের কথাই বলি। বেশ ক’বছর আগে আমি আমাদের পৈতৃক ভিটেয় থাকতাম। পরিবেশটা রাস্তাঘাটের কারণে তেমন ভালো ছিল না। একদিন ভোররাতে লোভনীয় স্বপ্ন দেখি-একটি চৌরাস্তার পাশে ছোট একটি আলো ঝলমল বিল্ডিং। দেখতে অনেকটা মাজারের মতো। রং খয়েরি ও ক্রিম। বিল্ডিংটা দেখে আমার বেশ পছন্দ হলো। এমন সময় কোনো একজন পরিচিত মহিলা এসে বললেন, তোমার পছন্দ হয়? উত্তরে হ্যাঁ, বললাম। এর পরই ওই মহিলা আমাকে বললেন, এখানে মাটি লাগবে। এ কথা বলেই মাটির একটি টুকরি নিয়ে কোথায় জানি চলে গেলেন। এরপরই আমার ঘুম ভেঙে যায়। সকালে আমার স্ত্রীকে এ কথা বললাম। বিকালে সে রাজমিস্ত্রি ঠিক করে। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজমিস্ত্রি বিল্ডিংয়ের কাজে হাত দেয়। যেখানে নির্মাণকাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা সেখানে লেগে গেল ৯ মাস। বিল্ডিং নির্মাণের পর কেউ বলল, এটা দেখতে বাড়ির মতো, কেউ বলল মসজিদের মতো, আবার কেউ বলল গোডাউনের মতো। সবার কাছে এর নির্মাণ কৌশল রহস্যময় মনে হতে লাগল। বাড়ির সামনে সদ্য নির্মিত ব্রিজের দুই পাশে শ্বেত পাথরে আমার নামও খোদাই করে বসিয়ে দেয় নির্মাণকারীরা। সবই ভালো চলছিল কিন্তু এক দমকা হাওয়া কোথা থেকে এসে শেষ পর্যন্ত এ বাড়ি থেকে আমাকে ছিটকে ফেলে দেয়। সেখানে যেতে আমার আর মন চায় না। রাতে স্বপ্নেও দেখি ওখানে আর না যেতে এবং মায়ের কাছে থাকতে। এখন ভাবী, ওই লোভনীয় স্বপ্ন আমার না দেখাই ভালো ছিল।
ভালো ও মন্দ এ দুটোই স্বপ্নের ভেতর লুকায়িত থাকে। মানুষের ওপর নানা প্রভাব ফেলে। খোয়াবনামায় স্বপ্নের ভালো মন্দের দিকগুলো উল্লেখ থাকে এবং খোয়াবনামা হাটেবাজারে কিনতে পাওয়া যায়। স্বপ্নদ্রষ্টাদের কাছে তাই খোয়াবনামা বিষয়ক গ্রন্থগুলো প্রিয়। স্বপ্ন সত্য, স্বপ্ন মিথ্যাÑ এ দুটোই মানুষের ঘুমের মধ্যে ফুটে উঠে। একটু সচেতন হলে মন্দ স্বপ্নের অর্থাৎ লোভনীয় স্বপ্নের কালো হাতছানি থেকে বাঁচা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন

২৭ আগস্ট, ২০১৬
আরও পড়ুন