পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণাধীন ৪৩টি ওষুধের কাঁচামাল অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে রফতানিতে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরবরাহ দিতে না পারায় কোম্পানীগুলোও ইমেজ সংকটে ভুগছে। দেশেও ওষুধের সংকট তৈরি হচ্ছে বলে কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এক সময় বাংলাদেশ ছিল ওষুধ আমদানিনির্ভর দেশ। সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশের বাজারে যাচ্ছে এ দেশের ওষুধ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ রফতানি হচ্ছে। দেশীয় ৪৬ কোম্পানির প্রায় ৩০০ আইটেমের ওষুধ যাচ্ছে বিদেশে। এ শিল্পের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ বছরে রফতানি আয় দ্বিগুণ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের রয়েছে অপরিসীম সম্ভাবনা। আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের ওষুধের বাজার ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২০২১ সাল নাগাদ ওষুধ রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় একশ’ গুণ বেড়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, পোশাকের পর ওষুধ শিল্প হবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তাই কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এই ধরনের দীর্ঘসূত্রতা দূর করা অতীব জরুরী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ৭০ ভাগ ওষুধই আমদানি করা হতো। এখন উন্নত প্রযুক্তির সব কারখানায় ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে উৎপাদন অনেকগুন বেড়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্র্ষ এবং দক্ষ ফার্মাসিস্টদের সহয়তায় বর্তমানে ক্যান্সারের মত জটিল ও মারাত্মক রোগের ওষুধও দেশেই উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সরকার দেশের ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ রপ্তানিতে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কর্মকর্তারা জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে ৪৩টি ওষুধ রয়েছে। এসব ওষুধের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনে ৭০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এতে ওষুধ উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে। এসব ওষুধ সংশ্লিষ্ট বিদেশে রফতানিতেও দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে তাদের ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দেশে ব্যবহƒত অনেক ওষুধও সরবরাহ সংকটে পড়তে হচ্ছে। ফলে প্রায়ই ভোক্তা পর্যায়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যেসব ওষুধ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে মাদকের উপাদক ব্যবহার হচ্ছে সেসব তৈরিতে তাদের দফতর থেকে ব্লক লিষ্ট করাতে হয়। ব্লক লিষ্ট অনুমোদনের পর তা আমদানির জন্য তাদের দফতর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়। কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনেই দীর্ঘ সময় অতিক্রম হয়। এতে ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি যারা বিদেশে রফতানি করছেন তাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হেলথ কেয়ার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান বলেন, নারকোটিকস আইটেম ওষুধ তৈরি করতে হলে কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রথমে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে মেট্রো অঞ্চল, এরপর উপ-অঞ্চল এরপর অঞ্চল হয়ে জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়। কাজ শেষে ধাপে ধাপে আবার ফাইল ওপরে আসে। এভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। তবে ৪/৫ মাস আগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে একটি সভায় আলোচনা হয়েছে। কাঁচামাল অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা দূর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানও তাদের দীর্ঘসূত্রতা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও আগের চেয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন হালিমুজ্জামান।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনের জন্য অঞ্চলভিত্তিক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তা সহকারী পরিচালকের কাছে। এরপর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ব্লক লিষ্ট অনুমোদনের জন্য সুপারিশ চাওয়া হয়। এভাবে দীর্ঘসূত্রতার তৈরি হতে পারে। তবে ৩০ দিনের মধ্যে কাঁচামাল অনুমোদনের ব্যবস্থা তাদের অধিদফতর থেকে নেয়া হয়েছে। অনেকটা অগ্রগতিও হয়েছে। কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন স্বল্প সময়েও দেয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ওষুধগুলো হচ্ছে- অ্যাসিট্রিক অ্যানহাইড্রাইড, অ্যালপ্রাজমা, ব্রোমাজিপাম, ক্লোবাজাম, ক্লোনাজিপাম, কোডেইন এসও৪, ডেক্সট্রোমিথারফেন, ডেক্সট্রোমিথারফেন এইচসিআই, ডায়াজিপাম, ইফিড্রিন এইচসিআই, ইফিড্রিন এসও৪, ইরগোটামিন টারটেট, ইথানল ৯৯ দশমিক ৫% (এবিএস), ইথানল ৯৬%, ইথানল ৯৫% (আর/এস), ইথিল ইথার, ফ্যান্টানিল, সাইট্রেট, এইচসিআই, হাইড্রোকোডোন বিটারটেট, কীটামিন এইচসিআই, লোরাজিপাম, মিথাইল ইথাইল কীটন, মিডাজোলাম এইচসিআই, মিডাজোলাম ম্যালিয়েট, মরফিন সালফেট, টিট্রাজিপাম, অর্গানিমিট্রিল ম্যালিয়েট, অর্গানিমিট্রিল ম্যালিয়েট (মিথাইল), অক্সাজিপাম, অক্সিশরফোন, প্যাথিডিন এইচসিআই, ফিনোবার্বিটাল, ফিনোবার্বিটাল সোডিয়াম, ফোনকোডিয়েন, কেএমএনও৪, সিওডোইফিড্রিন এইচসিআই, সিওডোইফিড্রিন এসও৪, সালফিউরিক এসিড, টুইলিন, জলপিডেম টারট্রেট ও জপিক্লোন।
ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে থাকা ওষুধের কাঁচামাল দ্রুত সময়ে অনুমোদনের জন্য সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক তাদেরকে দ্রুত সময়ে কাঁচামাল অনুমোদনের আশ্বাস দিয়েছে। দ্রুত সময়ে কাঁচামাল অনুমোদন করা গেলে আগামী চার বছরে ১০ গুণ ওষুধ রফতানি বেড়ে যাবে বলে সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।