Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গি সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ : স্থানীয় বিরোধ দায়ী হতে পারে

নরসিংদীর চিত্তরঞ্জন আঢ্য পুরোহিত নন

প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫৮ এএম, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীর রঘুনাথপুরে চিত্তরঞ্জন আঢ্য (৪৮) নামে এক সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় পুলিশ নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সন্দেহমূলকভাবে গ্রেফতারকৃত ফিরুজ ও হাবিব নামে দুই যুবকের কাছ থেকেও পুলিশ কোনো তথ্য পায়নি।
পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারের পর বাদি নিজেই বলেছে, তাকে আহত করার পর ফিরুজ ও হাবিব তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে। এদিকে মাধবদী থানার ওসি ইলিয়াছ জানিয়েছেন, রঘুনাথপুরে আহত চিত্তরঞ্জন আঢ্য মন্দিরের কোনো পুরোহিত নয়, সেবায়েতও নয়। মন্দিরের পাশে তার একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে মাত্র। সে এখানে দোকানদারি করে জীবিকা নির্বাহ করে। আহত চিত্তরঞ্জন পুলিশের কাছে বলেছে, সে মন্দিরের পুরোহিত নয়। তার ওপর হামলার ঘটনার সাথে জঙ্গিবাদী দলের কারো জড়িত থাকারও কথা নয়। তবে কেন তার ওপর হামলা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে মাধবদী থানার ওসি মো: ইলিয়াছ জানিয়েছেন, আমরা এ বিষয়টি খুব গভীরভাবে তদন্ত করছি। তবে এলাকাবাসী বলেছে, চিত্তরঞ্জনের সাথে এলাকার একটি মুসলিম মহিলার প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল। এই মহিলার স্বামী মারা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় একটি গুঞ্জন রয়েছে। পুলিশ এ বিষয়টিকেও তদন্তের জন্য আমলে নিয়েছে। চিত্তরঞ্জনের ওপর হামলার ঘটনায় আইএসের দায়সংক্রান্ত ব্যাপারে মাধবদী থানার ওসি জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যত হামলা হয়েছে সব হামলার অব্যবহিত পরই জঙ্গি সংগঠনগুলো দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়ে থাকে। চিত্তরঞ্জনের ওপর হামলার ৩ দিন পর আইএস দায় স্বীকার করার ঘটনার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না।
এদিকে স্থানীয় মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রঘুনাথপুরের মেম্বার রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চিত্তরঞ্জনের পুরো নাম চিত্তরঞ্জন দেবনাথ হিসেবে তারা জানেন। কোনো পত্রিকায় তাকে আর্য্য এবং কোনো পত্রিকায় চিত্তরঞ্জন আঢ্য লেখা হয়েছে। তবে সে এই মন্দিরের পুরোহিত বলে কেউ জানে না। সেবায়েত হিসেবেও তার কোনো পরিচিতির কথা বলতে পারে না। তাছাড়া একটি মন্দিরের সেবায়েত বহুসংখ্যক ব্যক্তি হতে পারেন। এটা কোনো ধর্মীয় পদমর্যাদা নয়। যদিও বাউলরা তাদের আখধামের পুরোহিতকে সেবায়েত বলে থাকেন। হিন্দু ধর্মে সেবায়েত কোনো অফিসিয়াল পদমর্যাদা নয়।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা জানিয়েছেন, কোনো মন্দিরের পুরোহিত হতে হলে তাকে অবশ্যই ব্রাহ্মণ হতে হবে। চিত্তরঞ্জন আঢ্য ব্রাহ্মণ নন। কাজেই চিত্তরঞ্জনের পুরোহিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেবায়েত অনেকেই হতে পারে। তার ওপর হামলার ব্যাপারে তিনি জানান, এটা কোনো আইএস বা জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘটনা নয়। স্থানীয় কোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমরা যতটুকু জেনেছি তার সাথে জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ ঘটনাও হামলার কারণ হতে পারে। এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছে, এটি একটি স্থানীয় ঘটনা। এটাকে ঘিরে কোনো ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ জন যুবক মুখোশ পরে রঘুনাথপুর গ্রামে মন্দিরের পাশে দোকানে গিয়ে চিত্তরঞ্জন আঢ্যকে কুপিয়ে আহত করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে পাঁচদোনার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ও পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে সে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে পুলিশ জানিয়েছে।




আইএস’র দায় স্বীকারের খবর
এদিকে বিবিসি বাংলা সাইট ইন্টেলিজেন্সের বরাতে জানিয়েছে, এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আইএস। জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স আইএস’র কথিত বার্তাসংস্থা আমাককে উদ্ধৃত করে এমন দাবি করেছে।
সাইট ইন্টেলিজেন্স আহত চিত্তরঞ্জন আঢ্যকে পুরোহিত বললেও নরসিংদীর পুলিশ বলছে মিস্টার আঢ্য পুরোহিত নন, তিনি মন্দিরের পাশে দোকান চালাতেন। মঙ্গলবার রাতে হামলার সময় দোকানেই ছিলেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলছেন তারা জানতেন ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এমনটি হয়েছে। “পূর্বশত্রুতাও থাকতে পারে কিংবা আইএস’র এদেশে যেসব জঙ্গিরা লুকিয়ে যাচ্ছে তারা বা জামায়াত শিবিরের কিছুটা সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে”। চিত্তরঞ্জনকে টার্গেট করার কোন কারণ রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে করতে পারে। তার নিজের ধারণাও তাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ : স্থানীয় বিরোধ দায়ী হতে পারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ