Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বেও ডিজির কালক্ষেপণ!

বিনার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি

প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. শামসুল আলম খান : বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কালক্ষেপণ করছে ডিজি ড. শমশের আলী। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ ও উপ-কেন্দ্রসমূহে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এসআরএসডি শীর্ষক ২০১০-২০১৩ এবং সংশোধিত ২০১৫ সালের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট একটি চক্র ব্যাপক অর্থ লুটপাট করে। এমনকি তৎকালীন ডিজি ড. এমএ সাত্তার চাকরিজীবন শেষে পিআরএল শুরুর দুই দিন পূর্বে পৌনে দুই কোটি টাকার চেক স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেন। সেইসাথে প্রকল্পের গবেষণা ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বাজেটের চেয়ে এ চক্রটি প্রায় দুই কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করে। এছাড়া এসআরএসডি’র মোটরগাড়ি ক্রয়ে অনিয়ম, খাগড়াছড়ি উপকেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণে অনিয়মসহ বিভিন্ন খাতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই অতিরিক্ত ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
সূত্র জানায়, এসব বিষয়ে তৎকালে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠলে বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. আবদুর রউফকে (পিপিসি) আহ্বায়ক করে একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইটি) মো. হেমায়েত হোসেন, বিএডিসির ঢাকার অফিসার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী ও মো. সুলায়মানকে সদস্য করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে দীর্ঘ তদন্তে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার প্রমাণ মিললে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকারি অর্থ আদায়, সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি/আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।  
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা ড. হাবিবুর রহমান, ড. রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম রাজু, ড. মোফাজ্জল ইসলাম, কর্মচারী জাহাঙ্গীর কবির জুয়েল ডিজি ড. সাত্তারের সাথে যোগসাজশ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সকলেই বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও ভূসম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।  
জানা যায়, এ দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা-২ অধিশাখার উপ-সচিব মো. দাউদুল ইসলামের কার্যালয়ের স্মারক নং ১২.২৪.০০০০.০৬৪.১৬.০০১.১৬.২২২ মূলে ২০১৬ সালের ৩০ মে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে পত্র দেন। কিন্তু এ আদেশের পরও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত ২৮ জুলাই ফের এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয় দফায় কৃষি মন্ত্রণালয় তাগিদা পত্র প্রদান করে।  
সূত্রটি জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ড. মো. রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম রাজু, ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কবির জুয়েল’সহ চার জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে করে বিনার বর্তমান ডিজি দুর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  
যদিও বিনার ডিজি ড. শমশের আলী এ বিষয়ে বলেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, বিনা সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুছ সাত্তার এসব অনিয়ম ডাকতে অফিসের অস্থায়ী ফটোগ্রাফার জাহাঙ্গীর কবীর জুয়েলকে দিয়ে মিডিয়াকে অন্ধকারে রাখতে যা যা করা দরকার তাকে করিয়েছেন। এর বিনিময়ে ওই ফটোগ্রাফারকে অবৈধভাবে সহকারী পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত করে পুরস্কৃত করেছিলেন ডিজি সাত্তার।
অপরদিকে সম্প্রতি বিনার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন ময়মনসিংহ অফিসে জমা হয়েছে বলে জানান বিনার একটি বিশ^স্ত সূত্র।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সেইসাথে ঊর্ধ্বতন র্কতৃপক্ষের নির্দেশ পেলে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বেও ডিজির কালক্ষেপণ!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ