Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ মিথ্যাচারের এক কালো দলিল : রুহুল কবির রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভাষনকে ‘মিথ্যাচারের এক কালো দলিল’ হিসেবে অভিহিত করে একে প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষন, টাকা পাচার, দুর্নীতি-লুন্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসনের একযুগ পার করলো বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের ওপর দলের প্রতিক্রিয়ায় জানাতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, নিশিরাতের কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সরকারের মেয়াদে যুগপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নির্জলা মিথ্যাচার করেছেন। তার এই বিভ্রান্তিকর ও দুরভিসন্ধিমূলক ভাষণ অন্তঃসারশূন্য কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী দেশের তথাকথিত উন্নয়ন, মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বাস্থ্য খাতের ইতিবাচক পরিবর্তন, আইনের শাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানসহ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা এক ‘মিথ্যাচারের কালো দলিল’। দেশবাসী তার এই ভাষণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারেরে বর্তমান মেয়াদের দুই বছর পূর্তিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, দেশপ্রেমিক জনগণ আজ নিজ দেশে পরাধীন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত নন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসার শিকার। গত এক যুগ ধরে দেশে চলছে আওয়ামী জাহেলিয়াতের শাসন-শোষন-নিপীড়ন-নির্যাতন-গুম-খুন-লুন্ঠন। শুধু একজন মাত্র ব্যাক্তির ক্ষমতার খায়েশ মেটাতে দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশটাকে পরিণত করা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে। এক দশকে দেশ থেকে ৯ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা কানাডায় গড়ে তুলেছে বেগমপাড়া, বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। সেজন্য বলি, প্রধানমন্ত্রী যে ভাষনই দেন না কেনো, স্বৈরাচার হিসেবেই তার কেবলমাত্র বিশ্বজোড়া নাম-ডাক হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষন, টাকা পাচার, দুর্নীতি-লুন্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসনের একযুগ পার করলো বাংলাদেশ। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ক্ষমতাসীন দুষ্টচক্র মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবাধিকার-ন্যায়বিচারনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে জনগনকে বোকা বানাতে তথাকথিত উন্নয়নের শ্লোগান তুলেছে। উন্নয়নের নামে ক্ষমতাসীনদের দুষ্ট্রচক্রের গত এক যুগের এই শাসনের সঙ্গে একমাত্র বিতাড়িত স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের কথিত উন্নয়নের এক দশকের তুলনা চলে। আমরা বলতে চাই, যারা গণতন্ত্র হরণ করে, মানুষের বাক স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কথিত উন্নয়নের একযুগ পূর্তি করতে চান সেদিন আর বেশি দূরে নয়, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মতো তাদেরও পতন হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষনে দেয়া উন্নয়নের পরিসংখ্যানের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- আমার দেশের মানুষকে যদি না খেয়ে রাত কাটাতে হয়, স্বল্প আয়ের মাসুষরা যদি খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে না পারে, শিশুরা যদি স্কুলে যেতে না পারে তাহলে কিসের উন্নয়নের গল্প, কিসের জিডিপির প্রবৃদ্ধির উদ্ভট গল্প। মাত্র কয়েকদিনে মোটা চালের কেজি ৭/৮ টাকা বেড়েছে, মুসুরের ডাল কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ টাকা, এই ডাল নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি কেনে। খোলা সোয়াবিন ও পাম ওয়েল কেজি প্রতি ১৫/২০ টাকা বেড়েছে। সাধারণ মানুষকে পেটে পাথর বাঁধতে হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ জোনে থেকে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে। কারণ তিনি জনগনের মুখোমুখি হতে চান না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের একযুগ পূর্তি নিয়ে মাতামাতি করছে সরকার আর তাদের অনুগত ব্যক্তিরা। এক যুগে উন্নয়নের চেয়ে লুটপাট হয়েছে বহুগুণ। মেগা প্রকল্পের কয়েকটি কুমির ছানা যুগব্যাপী দেখিয়ে আর ক্ষমতার নিয়ামক শক্তিগুলোকে অবাধ সুযোগ সুবিধায় তুষ্ট করে তিনটি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন পার করার মধ্যে তারা তাদের সাফল্য খুঁজছে। তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) এক যুগের সফলতা হলো- ‘দেশের মানুষ এখন মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে, জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনা টিকা নিয়েও আওয়ামী লীগের মাস্টার প্লান জনগনের কাছে পানির মতো পরিস্কার। সরকারের নানা লোকের মুখ থেকে নানা রকম গালগল্প শুনছি-এটা জনগণের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে যে এটা একটা টালবাহানা। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, করোনা টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ভারতই না কী টিকা রপ্তানি করবে। কিন্তু গতকালই ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তাহলে কী দাঁড়াল? টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বনির্মিত মিথ্যাচারই প্রমাণিত হয়েছে। যা বলেছে, যা কমিটমেন্ট করছে, যা ওয়াদা করছে তা সম্পূর্ণ হচ্ছে বাকওয়াজ, সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা-এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য।

দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। আপনারা বর্তমান হাল-হকিকত তো জানেন-আমরা বার বার বলেছি। ঢাকার কিছু হাসপাতাল ছাড়া এবং দুই-একটি বড় শহর ছাড়া কোথাও ভেন্টিলেশন নাই, অক্সিজেন নাই, হাসপাতালের বারান্দায় করোনা রোগীর মৃত্যুর কথা-এসব গণমাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। এখনো কিন্তু স্বাস্থ্যখাতের বেহাল অবস্থা, এখনো ন্যুনতম চিকিৎসা করোনা রোগীদের জন্য নেই।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কারযালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ