পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী আনোয়ারায় ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ড্যাপ-১) সার কারখানায় অ্যামোনিয়া প্লান্টের ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে পুরো এলাকা জুড়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আনোয়ারার বাতাসে এখনও অ্যামোনিয়ার তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মরে পচে-গলে যাওয়া মাছ, জলজ প্রাণি ও গবাদিপশুর দুর্গন্ধ। সেখানকার বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিবর্ণ হয়ে গেছে আশপাশের গাছপালা, ক্ষেতের ফসল। অ্যামোনিয়া মিশ্রিত পানি যতদূর গেছে ততদূর এখন বিরান ভূমি। খামারের মাছ মরে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অসংখ্য খামার মালিকের। ক্ষেতের ফসল আর গাছপালা মরে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে গ্রামের মানুষ। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা কারখানার কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তবে ক্ষতিপূরণের কোন আশ্বাস মিলছে না।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার তিনদিন পার হলেও দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা যায়নি। কাদের গাফিলতিতে এ বিপর্যয় তারাও চিহ্নিত হয়নি। এত বড় দুর্ঘটনার পরও কারও বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দুর্ঘটনার শুরু থেকে কারখানার কর্মকর্তারা জনগণকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করেছে। প্রকৃত তথ্য আড়াল করার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। সোমবার রাতে কারখানার একটি অ্যামোনিয়া ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে প্রায় ৫শ’ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়াসহ বিশাল ট্যাঙ্কারটি ৫০ গজ দূরে ছিটকে পড়ে। সেখান থেকে ব্যাপকহারে নির্গত হয় অ্যামোনিয়া গ্যাস। বিষাক্ত গ্যাসে আনোয়ারা থেকে শুরু করে বন্দরনগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় ঘনকুয়াশার মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়। গ্যাস আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয় শত শত মানুষ।
অথচ কারখানার কর্মকর্তারা শুরু থেকে বলছিলেন, বিস্ফোরণ নয় ট্যাঙ্কারে পাইপে লিকেজ হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ নয় বলেও দাবি করা হয় কর্তৃপক্ষের তরফে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, বিভ্রান্তমূলক তথ্যের কারণে তারা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। আর এ কারণে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারখানা এলাকায় অসংখ্য মৎস্য খামার রয়েছে। এসব খামারে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে মাছ চাষ করা হয়। গ্যাস দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খামারের মাছ মরে ভেসে উঠে। মরে যায় গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি। মরে যাওয়া মাছ ও হাঁস-মুরগি মাটি চাপা দিচ্ছে স্থানীয়রা। এরপরও চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অ্যামোনিয়ার প্রকোপ এখনও রয়ে গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে স্থানীয়দের। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসের রিজার্ভ ট্যাংক দুর্ঘটনার পরদিনই কারখানার আশপাশে গাছপালা পুড়ে গেছে। গরু মারা গেছে। সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি মরে গেছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সিনিয়র কেমিস্ট মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করেছে। তারা ডিএপি কারখানার পূর্ব ও উত্তর পাশে যে দুটি পুকুরের মাছ মারা গেছে সেখান থেকে এবং কারখানার প্রধান নালার পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, কারখানার পূর্ব ও উত্তর পাশের পুকুরের পানির নমুনায় পিএইচ যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৪ এবং ৮ দশমিক ৫৪, যেখানে আদর্শমান ৬ দশর্মিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫। যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ বহির্ভূত। দুটি পয়েন্টের পানির নমুনার ডিও যথাক্রমে ১ দশমিক ৩৯ এবং ৪, আদর্শ মান ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫। সিওডি যথাক্রমে ৩২৪ ও ২৬৪, আদর্শমান যেখানে ২০০-র কম। যা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ বহির্ভূত। তবে সংগৃহীত নমুনা পানির অন্য প্যারামিটার বিধিমালা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য পাওয়া গেছে। তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর দুর্ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ১৭০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে হাই ভলিয়্যুম স্যাম্পলার স্থাপন করে বায়ুর নমুনা (অ্যামোনিয়া) সংগ্রহ করে। ওই নমুনা বিশেষণ অনুযায়ী আট ঘণ্টার গড় অ্যামোনিয়া পাওয়া যায় ৯২ পিপিএম।
অ্যামোনিয়া পানি চুষে নেয়ায় মাছ মারা যেতে পারে বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কান্তি বড়ুয়া। দুর্ঘটনার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ, প্লান্টের বাকি ট্যাংকগুলোর ঝুঁকি পরীক্ষা করে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্যে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিসিআইসি। বিসিআইসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) আলী আক্কাসকে আহ্বায়ক ও সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু তাহের ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া কাফকোর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সাবের আলী, বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. একেএমএ কাদের, কাফকোর সাবেক সিইও শেখ শফি আহমেদ, বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের প্রধান ড. এমএএ শওকত চৌধুরী, সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুর রহমান খানকে সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে কমিটিতে।
এ ছাড়া দুর্ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদকে আহ্বায়ক এবং আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ ও কর্ণফুলী থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন টিম দুর্ঘটনাকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।