পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : শাহজালাল বিমানবন্দরে আবারো স্বর্ণ পাচারকারী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও থেমে নেই চোরাচালান। স্বর্ণ, ওষুধ, মোবাইল, ফোনসেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসছে চোরাই সিন্ডিকেট। বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর মধ্যেও স্বর্ণ চোরাচালানের ১০ সিন্ডিকেট থেমে নেই। ইতোমধ্যে সাড়ে সাড়ে ৬ মণ স্বর্ণ উদ্ধার হলেও নেপথ্যের রাঘব বোয়ালেরা বরাবরই রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে এসব প্রভাবশালীদের কারণে বিশিষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কাছে আসছে না। বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করার পর কিছুদিন স্বর্ণ চোরাকারবারী সিন্ডিকেট নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্ত গত কয়েক দিন ধরে আবারো আসছে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য সামগ্রীসহ স্বর্ণের বড় বড় চালান। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে স্বর্ণের চালান। কোন ভাবেই এদের দমন করা যাচ্ছে না। গতকালও বিমানবন্দরে ২৩ কেজি সোনা উদ্ধার করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। বুধবার দিবাগত রাতে সিঙ্গাপুর থেকে আসা এক যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে ওই সোনা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সোনার বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। গতকাল রসকালে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার লুৎফর রহমান জানান, আতাউর রহমান নামের এক যাত্রী অসুস্থতার ভান করে বিমানবন্দরে হুইল চেয়ার ব্যবহার করছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে এসকিউ ৪৪৬ ফ্লাইটে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহজালালে আসেন আতাউর। এসময় তার কোমরের বেল্ট ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা তল্লাশি করে ২৩ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে সোনার বার ও বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনা পাচারের জন্য তারা বেছে নিচ্ছে অভিনব ও অদ্ভুত সব পাচার কৌশল। এ কৌশলের অনেকগুলোই গা শিউরে ওঠার মতো। এমনকি সোনা চোরাচালান নির্বিঘœ রাখতে একের পর এক কৌশল পাল্টাচ্ছে পাচারকারিরা। এসব নিত্যনতুন কৌশলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তথা সোনার চালান ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার একাধিক সদস্য জানান, বিমান, কাস্টমস এবং সিভিল এভিয়েশনসহ বিভিন্ন সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসেই আসছে স্বর্ণের বড় বড় চালান।
অনুসন্ধানে সোনা পাচারের নানা কৌশল বেরিয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বটেই এমনকি সাধারণদেরও চোরাচালানিদের এসব অভিনব কৌশল অবাক করে দেয়। অথচ ঢাকা কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে সন্দেহজনক হলে টু-ডি ডাইমেনশন পদ্ধতির মাধ্যমে যাত্রীদের লাগেজ ও দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সব সময়ই যে তারা সফল হন তা নয়। তবে উন্নত বিশ্বে ‘বডি এক্সরে’ ও ‘থ্রিডি’ মেশিনের সাহায্যে যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হয়। তাতেই যাত্রী তার সঙ্গে সোনা বহন করছেন কিনা তা সহজেই ধরা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এই মেশিনগুলো কেনার জন্য ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিলেও ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে তারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, আপাতত দুটি থ্রিডি মেশিন কনভেয়ার বেল্টে লাগানো গেলেই সোনা পাচার অনেক কমে আসবে।
২০১৫ সালে মাত্র সাড়ে তিন মাসে ১১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৬ মণ সোনা উদ্ধার করা হয় শাহজালাল বিমানবন্দরে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে গড়ে প্রতিমাসে ২ মণেরও বেশি সোনার চালান আটক হচ্ছে এ বিমানবন্দরে। তবে এসব ঘটনায় জড়িত রাঘববোয়ালরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে সাময়িক বন্ধ থাকলেও স্বর্ণ চোরাই সিন্ডিকেট রয়েছে বহাল তবিয়তে। এরা এতটাই প্রভাবশালী তাদের গায়ে হাত দিতে পারছে না খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। যে কারণে একের পর এক স্বর্ণের চালান আসছেই। সোনার চালান উদ্ধার হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা শাহজালাল বিমানবন্দরকে ‘সোনার খনি’ বলেই মনে করছেন।
গত ৪০ বছরের মধ্যে কখনো স্বল্পসময়ের ব্যবধানে এত বিপুল পরিমাণ সোনার চালান আটক আর হয়নি। তারা বলছেন, বিমানবন্দরটি সোনা চোরাকারবারীদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চোরাচালানোর সোনা আসা-যাওয়া করছে। যেসব চালানের বিষয়ে আগাম তথ্য কাস্টমস বা শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছায়, শুধু সেগুলোই ধরা পড়ছে। বাকী সব থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিনব কায়দায় কখনো চায়ের ফ্লাস্ক, বিদেশি বিস্কুটের প্যাকেট, জুসের প্যাকেট, জুতার ভিতর, প্যান্টের বেল্টের ভিতর, নারীর চুলের খোঁপায়, দেহের গোপনীয় জায়গায়, ল্যাপটপ এমনকি ওয়াটার পাম্পের ভিতরে করে সোনার বার পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া কিছু সোনার বার দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়লেও সীমান্তপথে বড় অংশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ অন্যান্য দেশে চলে যায়। লাগেজ কেটে বিশেষ পার্ট বানিয়ে, জুতার ভিতরে কিংবা পায়ুপথে সোনার বার ঢুকিয়ে পাচার করার পুরনো কাহিনী এখন আর পাত্তা পায় না। এয়ারপোর্টে কাস্টমস গেটের স্ক্যানার মেশিনেও যেমন সোনার অবস্থান চিহ্নিত হয় তেমনি পাচারকারীর চলাফেরার সন্দেহেও সোনা পাচারকারীরা মুহূর্তেই ধরা পড়ে। ফলে চোরাচালানকারী ইদানিং এমন সব কৌশল ব্যবহার করছেন যা ধারণা করাও কঠিন।
২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ৬ কেজি সোনাসহ মালয়েশিয়ার এক নারীকে আটক করা হয়। আর্মড পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে চোরাকারবারী বিদেশি নাগরিক ভাড়া করে সোনা পাচারের কৌশল নিয়েছে। আরও অন্যান্য কৌশলের অংশ হিসেবে জুসের প্যাকেট থেকে সোনার বার উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা নারায়ণগঞ্জ সদরের আলামিন (২৩) নামের এক যাত্রীর ট্রাভেল ব্যাগ থেকে বারগুলো উদ্ধার করা হয়। আলামিনের স্কুল ব্যাগের ভিতরে ইয়োস নামের এক জুসের প্যাকেট ছিল। তল্লাশির সময় জুসের প্যাকেট হাতে নেওয়া হলে অনেক বেশি ওজন দেখে সন্দেহ হয়। পরে সেটি খুলে দেখা যায়, আসলে সেখানে কোনো জুস নেই, আছে সোনার বার। এর আগে শারজা থেকে আসা পানির পাম্পের ভিতরে করে নিয়ে আসা ৪ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, গত বছর আমরা ৬০০ কেজির তথা ১৩ মণ সোনা উদ্ধার করেছি। তবে আমাদের দক্ষ জনবলের কারণে আগের চেয়ে সোনা চোরাচালানের ঘটনা কমে এসেছে।
সম্প্রতি গার্মেন্ট এক্সেসরিজের আড়ালেও সোনার চালান দেশে আনার কৌশল ধরা পড়েছে। বিভিন্ন গার্মেন্ট এক্সেসরিজের নমুনা বোঝাই তিনটি কার্টনে আনা ৪৩ কেজি সোনা আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। আটককৃত সোনার বাজার মূল্য প্রায় ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার উম্মে নাহিদা আক্তারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি ভুয়া গার্মেন্ট কারখানার ঠিকানায় এক্সেসরিজ আনার ঘোষণা দিয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসে কার্টনগুলো। সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে বহনকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।
এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে দেড় মণ সোনা উদ্ধার করেছে শুল্কগোয়েন্দা বিভাগ। কৌশলে বিমানের ফ্লাইট দুই ঘণ্টা আগে অবতরণ করিয়ে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের এসব সোনা পাচারের চেষ্টা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, বিজি ০৪৮ ফ্লাইটের টয়লেটের আয়নার নিচে বিশেষ কৌশলে লুকানো ছিল। বিশেষ অভিযান চালিয়ে সোনাগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সোনার মোট ওজন ৬১ কেজি ১৯৮ গ্রাম। এর মধ্যে চেইন ১১৪টি, এক কেজি ওজনের বার চারটি, ১০ তোলা ওজনের বার ৪৮১টি। নতুন কেনা বিমান বোয়িং ৭৭৭ থ্রি হানড্রেড ইয়ারবাসটি জব্দ করা হয়েছে। এর নাম রাঙ্গাপ্রভাত। এর দাম ১২০০ কোটি টাকা।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দুবাই থেকে আসা একটি উড়োজাহাজের সিটের নীচ থেকে ৩৭ কেজি স্বর্ণবার জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিম। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৬ ফ্লাইটে আসা এ স্বর্ণবারগুলো উদ্ধার করা হয় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা জানান, এমিরেটস এয়ারলাইন্স-এর ওই বিমানটির কয়েকটি সিটের নিচে ৩২০টি সোনার বার বিশেষ কৌশলে রাখা ছিল। এগুলোর ওজন ৩৭ কেজি। স্বর্ণবারগুলোর মূল্য আনুমানিক ১৯ কোটি টাকা।
সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দরে চোরাই সিন্ডিকেটের নেতা ওসমান, নুরু এবং মুন্নাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিমানবন্দর থেকে পণ্য ছিনতাই ও চুরির সাথে এরা জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ চোর সিন্ডিকেটের সাথে প্রসাশনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ সদস্যও জড়িত রয়েছে। এরা নিজেদের র্যাব, পুলিশের পরিচয় দিয়ে থাকে। এ চোর সিন্ডিকেটের এক সদস্য নুরুকে গতকাল রাতে সোনার গাঁ থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোনার গাঁ থানার এসআই আব্দুল হক সিকদার জানান, বিমানবন্দর থেকে এলভিন ওষুধ কোম্পানির এক কোটি টাকার ওষুধ কাঁচামাল ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সিএনএফ মালিক জানান, এই চক্র ইতিমধ্যে এসিআই কোম্পানির কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল ছিনতাই করেছে। এই ঘটনায় রাজধানীর উত্তরা থেকে ওসমানসহ আরো ২ ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সিএএফ নেতৃবৃন্দ আরো জানান, অক্সফোনিন ওষুধ কোম্পানির কোটি টাকার কাঁচামালও এই চক্র ছিনতাই করে জেল খেটেছে। এ চক্রের বিমান বন্দরে পরিবহন ব্যবসা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।