Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে

পল্লবী থানার এসআই আরিফ হোসেন মল্লিককে মাদক সেবনের দায়ে চাকরিচ্যুত

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের সকল জেলা ও মেট্টোপলিটনে কর্মরত মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কোথায় কত জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত তার ডাটাবেজ তৈরি করার কাজ চলছে। ওই ডাটাবেজ তৈরি হলেই কম্পিউটারে টিপলেই চলে আসবে তালিকাটি। একই সাথে ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সারাদেশে প্রাথমিকভাবে শনাক্তকৃত মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের ডোপটেস্টে প্রমানিত হলে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ রাজধানীর পল্লবী থানার এসআই আরিফ হোসেন মল্লিককে মাদক সেবনের দায়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত সোমবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ডিএমপি’র সদর দপ্তরের তালিকা অনুযায়ী আরিফের বিরুদ্ধে হেরোইন সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্তের কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের যে তালিকা পাওয়া গেছে তা বেশ বড়। এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে মাদকাসক্ত কর্মকর্তাদের সর্তক করা হচ্ছে যেন নিজেরাই এ থেকে বেরিয়ে আসেন। যারা সর্তক করার পরেও মাদক ছাড়তে পারছেন না তাদের বিরুদ্ধে ডোপটেস্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আমহেদ এ বিষয়ে কোন ধরনের ছাড় দেয়ার পক্ষে নন বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বা মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগিতা করছেন, সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনোরকম শিথিলতা দেখানো হচ্ছে না। সাধারণ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয় ঠিক সেভাবেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এসআই আরিফ হোসেন মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনেও মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার সখ্যতার বিষয়টি ওঠে এসেছে। এক সময় থানার সবচেয়ে প্রভাবশালী অফিসারও ছিলেন তিনি। পল্লবী এলাকার বিহারী-অবাঙালি ক্যাম্পগুলো মূলত মাদকের আখড়া। এ সুবাধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে এসআই আরিফের। এক পর্যায়ে আরিফ নিজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি মাদক স্পট থেকেও তিনি নিয়মিত টাকা নিতেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ওয়ালিদ হোসেন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ডোপ টেস্টে এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৭৩ জন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ৪৩টি। বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ২৫ জনের বিরুদ্ধে। সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি হয়েছে ১৮ জনের বিরুদ্ধে এবং বরখাস্তের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়েছে ১১ জনের বিরুদ্ধে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখা যায়নি। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত করার অভিযান আরও জোরদার করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক সেবন, মাদক কারবার, মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে যে বা যারাই যুক্ত থাকবে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তিদানের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। সম্প্রতি সময়ে পুলিশ সদর দফতরে ত্রৈমাসিক যেসব অপরাধ বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে মাদক বাণিজ্য ও ঘুষ এই দুইটি বিষয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ডোপ টেস্টের বাইরে ২০১৯ সাল থেকে পুলিশের এসআই এবং কনস্টেবলের মত পদগুলোতে ডোপ- টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মাদকের সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্তত প্রমাণ হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না, এ ব্যাপারে ‹জিরো-টলারেন্স› নীতি নেয়া হয়েছে। পুলিশের সব পর্যায়ে এমন বার্তা পাঠানো হয়েছে যে বাহিনীর কোন সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদকের ব্যবসার সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হবে না এবং যারা মাদকের ব্যবসা করেন তাদের সাথে কোনভাবে সংশ্লিষ্ট রাখবেন না বা সহযোগিতা করবেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকাসক্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ