পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : চালু হওয়ার ৪২ বছরের মাথায় ফারাক্কা বাঁধের প্রাসঙ্গিকতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে এবার ভারতেই প্রশ্ন উঠেছে। বাঁধটিকে সাধারণভাবে বাংলাদেশের জন্য ‘মরণ ফাঁদ’ হিসেবে চিত্রিত করা হলেও এখন এর নির্মাতা প্রতিবেশী দেশ বিহার রাজ্যেই প্রশ্ন উঠেছে এর প্রাসঙ্গিকতা, যুক্তি ও বাস্তবতা নিয়ে।
গত বুধবার ‘কোলকাতার আনন্দ বাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি খবরের শিরোনাম হলো ‘‘ফারাক্কায় ভেঙে দিন, মোদীকে নিতিশের আর্জি’’। এই শিরোনাম দিয়ে প্রকাশিত সংবাদের চুম্বক অংশে লেখা হয়েছে ‘‘ফারাক্কা বাঁধটাই যত নষ্টের গোড়া! ওর জন্যেই বন্যার কবলে পড়ে বিহার। তাই ফারাক্কা বাঁধ বাঁধকে একেবারে ভেঙে ফেলার দাবি নিয়ে ‘আদরনীয় প্রধানমন্ত্রীজির’ দ্বারস্থ হলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। নীতিশের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’’
সংবাদটির বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে, বর্ষার চলতি প্রান্তিকে অতিবৃষ্টির কারণে বিহার রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা ও পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ প্রথমে টেলিযোগাযোগ এবং পরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতি বছর বিহারে বন্যা ও পানি বদ্ধতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বিহার রাজ্যের বক্সার থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্ত-সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে দিনে তা’ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। তাই বাঁধটিকে ভেঙে ফেলাটাই হবে উচিত কাজ।
তবে চালুর প্রায় ৪২ বছর পর এই বাঁধ ভেঙে ফেলা হলে সেটা আবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাবে বলে মনে করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে এশটি শ্বেতপত্র দেবে যেটা তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। সেখানে যে যুক্তিগুলো থাকবে সেগুলো হলো, ফারাক্কা ভেঙে দিলে কলকাতা বন্দরের অপমৃত্যু ঘটবে। গরমের সময় কোলকাতাসহ রাজ্যের ৪৪ পুরসভা পৌরসভা তীব্র পানি সংকটে পড়বে। আনন্দ বাজারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলেছেন “বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা প্রসঙ্গে আমার কথা বলার এখতিয়ার নেই।’’ পত্রিকাটির কাছে এই প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “আমি আগে ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছি। ৭৫’ থেকে এটি চালু হওয়ার পর থেকে এখন ইকোলজিক্যাল পরিবর্তন ঘটে গেছে, এখন এটি ভেঙে দিলে সেটা নতুন করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাবে।’’
অবশ্য এর আগেও ভারতের বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন গঙ্গার মতো (বাংলাদেশে প্রবেশ পয়েন্ট থেকে এর নাম পদ্মা বিশাল পানি প্রবাহকে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে জোর করে অন্যদিকে গতি প্রবাহের চেষ্টাকে পরিবেশ-বিনাশী চেষ্টা হিসেবে আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের চেষ্টার খবর মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।
বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ফারাক্কা বাঁধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরু প্রক্রিয়ার সূচনা করেছে, দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্টি করেছে লবণাক্ততা এবং কমিয়ে দিয়েছে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় হার। বনজ ও সম্পদহানিরও অন্যতম কারণ এই ফারাক্কা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলেই বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ভারত এটি পরীক্ষামূলকভাবে ১৯৭৪ সালে এবং ‘৭৫ সালে পুরোপুরি চালু করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তাঁর জীবনের শেষ কর্মসূচি হিসেবে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন ফারাক্কা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য প্রাপ্তির ইস্যুতে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়া নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়। বর্ষাকালে যখন এই ফারাক্কা বাঁধের ১শ’ ৪টি স্লুইস গেটের বেশিরভাগই খুলে দেয় ভারত তখন বাংলাদেশ ভাসতে থাকে বন্যায়।
চলতি বর্ষার শেষ প্রান্তিকেও ভারত ফারাক্কা বাঁধের মোট ১শ’ ৪টি স্লুইস গেটের মধ্যে ১শটিই খুলে দেবার নির্দেশ দিয়েছে বলেও খবর প্রকাশ হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।