পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া আমার সন্তান ঢাকায় অবস্থানকালে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। নেশার টাকার জন্য প্রায় বাসায় ভাঙচুর করতো সে। কখনো তার হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি-বলতেই হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন অসহায় এক বাবা। তিনি পেশায় কলেজ শিক্ষক। নাম না প্রকাশের শর্তে ভারি হয়ে আসা কণ্ঠে তিনি আরো জানান, লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আর সন্তানকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টা করছি। এ সমস্যার শিকার শুধু তিনি একা নন, চারদিকে সবুজে ঘেরা দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক পরিবারের চিত্র এটি। সুকৌশলে মিয়ানমারে উৎপাদিত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট, সীমান্ত পথে ভারত থেকে বানের পানির মতো আসা ফেনসিডিল, গাঁজা যুবসমাজকে বিপথগামী করে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পুরো শহর ঘুরে সব বয়সের লোকদের সাথে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে ২৪ ঘণ্টায় ঠাকুরগাঁওকে দুইভাবে চিনতে হয়। দিনের সাথে রাতের কোনো মিল নেই। সকাল থেকে শেষ বিকাল পর্যন্ত শহরের যে চিত্র দেখা যায়, তা অন্ধকার নামলেই কোথায় যেন হারায়। করোনাভাইরাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নিয়ম এখন আর নেই। সন্ধ্যার পর দ্রæত পাড়া মহল্লার চিত্র পাল্টে যায়। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর, টং দোকান, রিকশার গ্যারেজ, অফিস পাড়ার নিরিবিল স্থান ও ফাঁকা জায়গায় উঠতি বয়সের তরুন-যুবকদের আড্ডা অনেকটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে।
কখনো বয়স্করা এভাবে ঘোরাফেরার কারণ জানতে চাইলে একটাই জবাব, ‘স্কুল-কলেজ নেই, সারাদিন পড়াশুনার পর হাতে কোনো কাজ থাকে না। তাই বন্ধুরা মিলে সন্ধ্যার পর ঘুরতে বের হই।’ তবে রাত ১১টার পর শহর একবারেই ফাঁকা হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা এই পাঁচটি ঘণ্টাই ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে।
পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, মাদকাসক্তদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। ঠাকুরগাঁও শহর ছাড়িয়ে উপজেলা পর্যায়ে মাদক বহনে ব্যবহার কারা হয় নারী ও শিশুদের। কিন্তু মূল হোতারা সব সময় থেকে যায় আড়ালে। মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের অভিযানে প্রায়ই বহনকারী ধরা পড়ে।
পুলিশ বলছে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ির মধ্যে গাঁজা আবাদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরপরই অভিযান চালিয়ে ১৭টি গাছ ধ্বংস করে ফেলা হয়। অপরদিকে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা। ইয়াবা কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে কারা ঠাকুরগাঁওয়ে কিভাবে আসে এমন প্রশ্নের জবাব পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কেউ দিতে পারেনি। তবে একাধিক সূত্রের মতে, মিয়ানমার থেকে ভারতের অভ্যন্তর দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলায় প্রবেশ করছে ইয়াবা।
সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কখনো গরুর পাল, কখনো তেলের কন্টেইনারে ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক প্রবেশ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দেয়র অনেকেই জানান, সীমান্তের দুই দিকে রাতভর চলে মাদক কেনাবেচা। অবশ্য বিজিবির সূত্র এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সীমান্তে রাতদিন কড়া নজরদারি রয়েছে।
এদিকে মাদকের অবাধ কেনাবেচা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম ও এসআই নবিউল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সীমান্তের তিন কিলোমিটারে মধ্যে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। তারপরও পুলিশ মাদক প্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সিভিল ড্রেসে কাজ করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রায়ই মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়।
অপরদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্র মতে, ঠাকুরগাঁও সদর দফতরের ১৩ জন জনবলের মধ্যে আছে মাত্র ৬ জন। এই ৬ জনকে একটি জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। নেই কোনো আগ্নেয়াস্ত্র। তদুপরি জেলা প্রশাসনের পরামর্শে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ট্রাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে নেই কোনো মাদকসাক্ত নিরাময় কেন্দ্র। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলায় একটি কেন্দ্র রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান কবীর সিহাব ইনকিলাবকে বলেন, নিজে কম্পিউটার প্রকৌশলী হয়ে নেশায় জড়িয়ে পড়েন। পরিবারসহ সবার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। বড় বোনের সহায়তায় ঢাকায় রিহ্যাব সেন্ট্রারে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। এমন অভিশপ্ত জীবন যেন আর কারো না হয় সে ভাবনা থেকেই তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র গড়েছেন।
কাল পড়–ন : পূর্বাঞ্চলে মাদকে নীরব কান্না
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।