পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-ের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মীর কাসেম আলীর করা আবেদনের শুনানি শুরুর পর আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল বুধবার সকালে কাসেমের আইনজীবীর সময়ের আবেদন নাকচ করে প্রধান বিচারপতি এস ক সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ শুনানি শুরু করেন।
প্রথমে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। এর পরপরই আদালত শুনানি রোববার পর্যন্ত মুলতবি করে দেন। আপিল বিভাগের এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি সেয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
মীর কাসেমের শেষ আইনি সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তার সামনে কেবল প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে।
কার্যতালিকার ৫ নম্বরে থাকা রিভিউ আবেদন সাড়ে ৯টার পর শুনানির জন্য এলে খন্দকার মাহবুব দাঁড়ান। প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করার পর গত ২৫ জুলাই আদালত রিভিউ শুনানি এক মাস পিছিয়ে দেন। এক মাস পর শুনানির জন্য এলে ফের এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় শূরা সদস্যের আইনজীবীরা।
গতকাল খন্দকার মাহবুব সময় আবেদনের কথা বললে প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি যে যুক্তিতে সময় চেয়েছেন সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার ব্রাদার বিচারপতি এখানে আছেন। তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন। আপনি এরপর ৬ সপ্তাহ সময় পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জুলাই আপনি সময়ের আবেদন করেছেন।
‘আমরা সময় দিয়েছি। অথচ রিভিউয়েরই কোনো আইন নেই। এরপরও আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। যদিও এখানে কনস্টিটিউশনাল বেরিয়ার রয়েছে। আপনি জানেন, রিভিউতে যুক্তি খুবই কম থাকে।’ এ সময় খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য বারবার বলতে থাকলে জবাবে আদালত বলেন, ‘আমরা দুঃখিত’। এ পর্যায়ে মীর কাসেমের প্রধান এই আইনজীবী আদালতকে তার কাছে মামলার কোনো কাগজপত্র না থাকার কথা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। ‘আমার কাছে কিছুই নেই। কাগজপত্রও নেই। এসব ছিল তার ছেলের নিকট। তাকে কেউ নিয়ে গেছে। সে কেবল তার ছেলেই ছিল না। সে এই মামলার আইনজীবীও ছিল। তার কাছেই সব কাগজপত্র ছিল। আমি এই মামলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ঠিক আছে। কিন্তু আমার কাছে তো কিছুই নেই। আমি অসহায়’, বলেন খন্দকার মাহবুব।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা ওই যুক্তিতে (সময় মুলতবি) দেবো না। হতে পারে সে (মীর কাসেমের ছেলে) তো ইয়ে করতে নেই’। একপর্যায়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমার কাছে পেপারবুকও নেই। কোনো কাগজপত্র নেই।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো রায়ের বাইরে যাবো না। কোথায় ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’? খন্দকার মাহবুবকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার কাছে ওই দিনও পেপারবুক ছিল। এখন নেই কেন’? খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘ওই দিনের পর ওরা নিয়ে গেছে।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই দিন আপনি আবেদন করেছেন। আমি সময় দিয়ে দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ নানা বক্তব্য দিয়েছে। আমি বলতে গেলে, তাদের বক্তব্য শুনিওনি। সময় দিয়ে দিয়েছি।’
এরপর নিজের ‘পেপারবুক’ খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার পেপারবুক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি শুনানি শুরু করেন’। এসময় খন্দকার মাহবুব অন্তত এক সপ্তাহ সময় চান।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাকে আমি বিগত ৪০ বছর যাবৎ চিনি। ওয়ার ক্রাইম নিয়ে আপনার ইয়ে আমি জানি। আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আশা করি, আপনি আপনার সম্মান রাখবেন।’
এ পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য বারবার পীড়াপীড়ি করতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি শুরু করেন, আমরা রোববার শেষ করব’। এরপর প্রধান বিচারপতি তার হাতে থাকা পেপারবুক খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তার হাতে থাকা পেপারবুক খন্দকার মাহবুবের সামনে ডায়াসে এগিয়ে দেন। এ পর্যায়ে পেপারবুক ছাড়াই শুরু করতে পারবেন বলে জানান খন্দকার মাহবুব।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি শুরু করেন, আপনার স্মরণশক্তি ভালো আমি জানি’। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমি একটা অভিযোগের ওপর বক্তব্য রাখব। যে অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে’। এ সময় আনুষঙ্গিক কিছু কথা বলেন খন্দকার মাহবুব। একপর্যায়ে আদালত রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন। প্রধান বিচারপতি জানান, এটা ‘আংশিক শ্রুত’ হিসেবে রোববার কার্যতালিকার শীর্ষে আসবে।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এরপর গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ওই সাজাই বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। রাষ্ট্রপক্ষ এরপর রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে। এর ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি নিয়মিত আপিল বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।