পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ৭টি ব্যাংক। এ তালিকায় সরকারি খাতের ৪টি ও বেসরকারি খাতের ৩টি ব্যাংক রয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এ সব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকেরই ঘাটতি রয়েছে ৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এ সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের উদ্বৃত্ত থাকার পরও সার্বিক ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩২২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো প্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপিঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপিঋণ বেশি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। আবার খেলাপিঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে আয়ের খাত থেকে অর্থ এনে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারিরা লভ্যাংশ বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া যে সব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে থাকে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। যা আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা প্রকাশ করে। তিনি বলেন, খেলাপিঋণ বেশি হলে ঋণের সুদও বাড়ে। এতে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদোক্তারা নিরুৎসাহিত হন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপিঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ। আগের প্রান্তিক তথা মার্চ শেষে এ খাতে খেলাপিঋণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ফলে মার্চ থেকে জুন এই তিন মাসে খেলাপিঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। গেল বছরের ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপিঋণ ছিল ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৩৬ হাজার ১৭৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ১২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এতে করে তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মার্চ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭টিতে। এ সময়ে নতুনভাবে রূপালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। আর জনতা ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৯২ কোটি ৯০ লাখ, রূপালী ব্যাংকের ৭৭৫ কোটি ৫৬ লাখ ও বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৫১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৮০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৯ কোটি ২১ লাখ ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। আর বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৯৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আগের প্রান্তিক মার্চ শেষে ছয়টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল। এ তালিকায় ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, বেসিক ও জনতা ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার, ন্যাশনাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।